অন্তত ঘণ্টাখানেক হলো এ'খানে দাঁড়িয়ে সহদেববাবু। খান চারেক বাস এসে চলে গেছে। সদ্য কেনা বিড়ি বান্ডিলটাও অনেকটা খরচ হয়ে গেছে। সাড়ে দশটা নাগাদ অফিস ব্যাগ হাতড়ে মোবাইল ফোনটা বের করলেন তিনি। এলাকাটা এতটাই নিরিবিলি যে মোবাইলে নম্বর ডায়্যাল করার পিকপিক শব্দটা বোধ হয় রাস্তার ও'পার থেকেও শোনা যেত।
- হ্যালো।
- আজ্ঞে, আজ্ঞে আমি সহদেব।
- সহদেব?
- সাহা। রেজিস্ট্রেশন নম্বর বারো বাই সি অব্লিক থ্রি ফোর সেভেন সিক্স নাইন ট্যু।
- বলুন সহদেববাবু।
- এ'টা স্টারফ্লায়্যার কোম্পানির হেল্পলাইন তো?
- আমি স্টারফ্লায়্যারের কাস্টোমার কেয়ার এক্সেক, জেমিনাই দত্ত।
- জে...জেমিনাইবাবু..। আমি রাজি। আপনাদের অফার, আমার আপত্তি নেই ও'তে।
- শিওর?
- আজ্ঞে।
- ফ্যামিলির কথা ভেবে দেখেছেন?
- যে আজ্ঞে।
- স্ত্রীর কথা ভেবে..।
- আপনাদের স্পেসশিপে জায়গা নেই কি?
- আছে তো। তবু। ভালো করে ভেরিফাই না করে নিলে..।
- আমি প্রস্তুত কিন্তু। এলআইসি, ব্যাঙ্ক; সব ব্যাপারস্যাপার আজ সামলে নিয়েছি। কারুর কোনো অসুবিধে হবে না।
- টাকাটাই তো একমাত্র সুবিধেঅসুবিধের ব্যাপার নয়।
- আপনার তাই ধারণা জেমিনাইবাবু?
- আমি ঠিক সে অর্থে সংসারী নই।
- তা'হলে আপনি বুঝবেন কী করে?
- ইয়ে। আর ফেরা হবে না কিন্তু।
- জানি। অন্য গ্রহ।
- অন্য গ্যালাক্সি সহদেববাবু।
- অন্য শহর হলেও একই ব্যাপার হত আমার জন্য।
- ইয়ে সহদেববাবু, একটা কথা জিজ্ঞেস করি। আপনি আগ্রহের বশে রাজি হচ্ছন না বাড়ি থেকে পালাচ্ছেন?
- ছেলেবেলার পর বাড়ি থেকে পালানো যায় কি?
- বাড়ির লোক, অফিসের লোক, পাড়ার লোক খুব খোঁজখবর করবে আপনার মাসখানেক।
- স্বাভাবিক। ক'টা দিন উমার বড্ড খারাপ কাটবে। তারপর সামলে নেবে ঠিক।
- আর একবার জিজ্ঞেস করছি। আপনি নিশ্চিত তো?
- একশোবার।
- বহুত খুব। দশটা বেজে বেয়াল্লিশ মিনিট বারো সেকেন্ডে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়াব আপনার সামনে। চার দুই চার দুই নম্বর। বিনাবাক্যব্যয়ে উঠে পড়বেন।
- ট্যা..ট্যাক্সি?
- কলকাতার রাস্তায় ফ্ল্যায়িং সস্যার নামালে স্টারফ্লায়্যারের ব্যবসা টিকবে ভেবেছেন?
**
সহদেববাবুর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ভদ্রলোক টের পেলেন যে তার পরণে একটা সুতীর শাড়ি। শরীরটা মারাত্মক ভাবে অচেনা। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলেন ভদ্রলোক। চারপাশ তাকিয়ে টের পেলেন এ'টা তাঁর মধ্যমগ্রামের ফ্ল্যাটের শোওয়ার ঘর। মাথা তখনও ঝিমঝিম, গায়ের ব্লাউজ ঘামে ভিজে গেছে। হুড়মুড়িয়ে ঘরের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। অবাক হয়ে নিজেকে দেখলেন সহদেববাবু, বা বলা ভালো দেখলেন উমাকে। বিশুর "মা" ডাক শুনে বুক কেঁপে উঠলো তাঁর, কখন সে ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে টের পাননি তিনি।
"মা, থানা থেকে বড়বাবু ফোন করেছিলেন। এলাকার সমস্ত হাসপাতাল মর্গ ওরা খুঁজে দেখেছে। বাবার কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না"।
"সহদেব সাহাকে আর যে খুঁজে পাওয়া যাবে না রে বিশু", বলে মস্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন উমাদেবী।
***
(ছবি: জেমিনাই)