Sunday, May 20, 2007

বং প্রেম




প্রেম ব্যাপারটা বাঙালি চিরকালই ভুল এক্সেকিউট করে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ থেকে শক্তি টেনে হিঁচড়ে, নন্দন টু নলবন এফোঁড়-ওফোঁড় করে, ইন্টারনেটের পিণ্ডী চটকে - ছিমছাম একটা প্রেম আমরা ম্যানেজ করতে চাই বটে কিন্তু ছাদনা তলায় ল্যান্ড করার আগেই কত বিলিয়ন প্রেম যে লটকে যায় তার ইয়ত্তা নেই। 

তাও বুঝতাম গলাগলি থেকে গোলা-গুলি মার্কা ঝগড়াঝাঁটিতে প্রেম গচ্চা গেল; বাঘের বাচ্চার মত প্রেম-ট্র্যাজেডি; তা নয়। বাঙালির মধ্যে প্রেমে সস্তা-শহীদ বনে যাওয়ার যে কি মারাত্মক টেন্ডেন্সি আছে; ওই ল্যাদেই দেশ ঝুলে গেল। কেন জানি মনে হয়, উত্তম-সুচিত্রার এ দেশে, পার ক্যাপিটা ইলোপমেন্ট রেট হয়তো দুনিয়ার যে কোন প্রান্তের চেয়ে কম। মনে হয়। অমিত রে রা গান-কবিতা বেঁধেই খালাস হলে, বানভাসি হতে পারলে না। 

উদাহারণ স্বরূপ - পাড়ার হুতুমদা। মিন্টুর চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। পাশেই খোলা বুথে দাঁড়িয়ে হুতুমদা ফোনে ফ্যাঁসফেসিয়ে কথা বলে যাচ্ছিল। অন্যপ্রান্তের কথা অবশ্যই কানে আসছিল না, শুধু হুতুমদার হাহাকারটুকু বুকে সেঁধিয়ে গেছিল। 



হ্যালো ? হ্যালো ?

হ্যালো ? ধুত্তোর, লাইনটা বার বার ঝুলে যাচ্ছে। তোমাদের ওদিকে সিগন্যালের এত প্রবলেম না। ইয়ে মাইরি। বারান্দায় এসো না। অ্যাই...প্লিজ এসো...

হ্যালো...হ্যা...এ...এ...এবার শুনতে পাচ্ছি। স্পষ্ট। 

হুঁ ? হুঁ। না গো। হলো না। ইন্টারভিউটা মনে হল সাজানো ছিল। কোন বড়সাহেবের ভাগ্নে না ভাইপোর খুঁটি আগে থেকেই বাঁধা ছিল সেখানে।  

ভাত? ভাতের হোটেলে খরচ করলে এ ফোনটা তোমায় করতে পারতাম ? ওই পাউরুটি আলুর-দম খেয়েছি তো। লল্কা'র দোকানে যা বানায় না... 

তোমায় একটু ফাঁসিয়ে দিলাম বুঝতে পারছি...তবে টেনসন নেবে না বুঝলে...বাচ্চাদের জামাকাপড়ের ডিলারশিপে আজকাল হেবি পয়সা আছে। টার্নওভারও ঘ্যাম। খালি ক্যাপিটালটা ম্যানেজ করতে পারলেই হত। মেজদা অফার করেছিল দশ হাজার একবার, পরে বোধ হয় মেজবৌদির কথায়...সে যাকগে...

আরেকটা বিজনেসও ভেবেছিলাম বুঝলি ? লটারির দোকান...ইনভেস্টমেন্ট কম...এদিকে ক্যুইক ভাগ্যের ডিমান্ড দারুণ।

অ্যাঁ? ও। আচ্ছা। সেই ছেলেটা ? ইঞ্জিনিয়ার না ? 

ও। ও। ও আচ্ছা। তা তোমার বাবা কি বললেন ? ও। ও। 

কমিট করে দিলেন ? 

আর তুমি ? আহ, তো কি হয়েছে...

আসলে আর দুটো মাস যদি পেতাম গো...একটা কিছু অন্তত ঠিক ম্যানেজ করে...ওহ!

তোমার বাবার হার্টের ব্লকটা কি বেড়েছে না? 

হ্যাঁ? ও। ও। ওহ। বৈশাখ। এটা হল গিয়ে চৈত্র। তাই না?

ওই হল। ওই হল। 

হ্যাঁ? অ্যাঁ ? না না। ঠান্ডা গরম লেগেছে আর কি...তাই একটু...ধুর বোকা...তেমন কিছু নয় বলছি...

আরে শোন না...আমি বলছি...

এমনটি করে না...লক্ষ্মীটি...মাইরি...আমার কিন্তু...না মানে...আহঃ...কি মুশকিল...দ্যাখো কাণ্ড

কেঁদো না প্লিজ। অ্যাই...ওই দেখ...আরে শোন...

দেখো, ইঞ্জিনিয়ার বর তোমায় হেবি ভালোবাসবে...পুজোয় বালুচরি আর ডিসেম্বরে পুরী বাঁধা রইল...হে হে 

আরে...

যা, আমি কি করলাম

দেখো আমি ঠিক সামলে নেবো। পুরুষ মানুষ বলে কথা, এসবে টলে গেলে চলবে নাকি ?

ইয়ে, তুমি কি কাল একবার পার্কের পূব দিকের হলুদ বেঞ্চিটার পাশে আসতে পারবে? সন্ধ্যাবেলা ? না মানে এরপর তো আর হয়তো...

ধুর পাগলি



আচ্ছা আচ্ছা। আরে হ্যাঁ গো। নো প্রবলেম। বুঝি আমি। এমনিতেই আমি ভাবছিলাম কাটোয়ায় যাব একবার কাল। মামা বলছিল কয়েকদিন ধরেই, বয়েস হচ্ছে, দোকান ঠেলতে পারছে না...ভাবছি ওখানেই...

না না...এ মা...পালাতে যাব কেন ?

এমনটি করো না প্লিজ। পায়ে পড়ি তোমার...

অ্যাঁ? 

ধ্যাত, আমি আবার কোথাকার গুরুজন। 

দু;খ আবার কি ? দেখবে...তুমি দারুণ সুখী হবে। আরে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ব্রাহ্মণ কি না, একটা দিব্য দৃষ্টি মাঝে মাঝে কাজ করে। এই আমি বলে রাখলাম। দেখো। আচ্ছা, তোমরা মাঝে মাঝে ম্যাটিনি শোয়ে যাবে বল ? 

না না। মাইরি বলছি কাঁদছি না। দ্যাখো কাণ্ড। মেজপিসি পইপই করে বলে দিয়েছেন সন্ধ্যে বেলা কারোর নামে দিব্যি না কাটতে...যাক গে শোন...এখন রাখতে হবে...কেমন? পকেটে পয়সা নেই বিশেষ। 



***

হুতুমদাকে সেই আমি শেষ দেখি আমাদের পাড়ায়। তারপর থেকে কেউই তাকে আর পাড়ায় কোনদিন দেখেনি। এমনকি কাটোয়া পর্যন্ত খোঁজ করেও তার কোন হদিস মেলেনি। 

Saturday, May 19, 2007

ব্লগ-বাজ


আর চিন্তা নেই
বাঙালিকে আর রোখা যাবে না
আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদককে তোল্লাই দিতে হবে না
আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না।
পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না।

কেন ? হোয়াই?

বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট

কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ?

বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন, সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে
পোপ থেকে পরশুরাম ;
ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র
বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস

তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ?
বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ?
নেতাজী কি এখনও বহাল তবিয়তে তিব্বতে বসে স্যুপ খাচ্ছেন ?
সমস্ত আলোচনা রক-রান্নাঘর থেকে উড়ে এসে পড়বে ব্লগের ঠেকে।

এই সুযোগ...
জয় মা বলে ঝাঁপ দিলাম।