এ'দিকে পিতা, ও'দিকে কন্যা।
পিতা
ক্লাসিকাল; নিয়ম-কানুন, মর্নিং ওয়াক, ক্যালকুলাস, সর্ষের-তেল স্নান, নিম-বেগুন, আর্নিকা, সতিনাথ ভাদুড়ী, ভীম সেন যোশী মেশানো প্রাচীন বাঁধুনি।
কন্যা
পোস্ট-মডার্ন। জিন্স, শুক্তো, হার্ড রক , সন্ধ্যা মুখার্জী, ডট কম , ফেমিনিজ্ম, ও শক্তি চাটুজ্যের
সম্মিলিত লাবড়া।বারান্দায় শরতের আদুরে রোদের মত ছলছলে।
প্রাচীন অঙ্ক মেনেই; যেই কন্যা জীবনমুখী;
অমনি পিতা রথের চাকা বসে যাওয়া সৈনিক।
কন্যা প্রেমে হাবু-ডুবু, পিতা অক্সিজেনের নল-কাটা ডুবুরি।
তবুও: পিতার হালুম , কন্যার আধো-ম্যাও।
পিতা : প্রেম করছ ?
কন্যা: ওই আর কী।
পিতা: ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে
ডজ করবে না...।
কন্যা: হ্যাঁ প্রেম।
পিতা: শেম!
কন্যা: বাবা!
পিতা: বুচি!
কন্যা: আই অবজেক্ট।
পিতা: ওভাররুলড।
কন্যা: আগে শুনবে তো....
পিতা: কী শুনবো ? প্রেম-ট্রেম গুরুপাক ব্যাপার। আমি ভেটো করছি। যার
ডিমাণ্ড কার্ভ আঁকতে গেলে এখনো হাত কাঁপে ,
সে করবে প্রেম ? পাগল না পার্লামেন্ট ?
কন্যা: তুমি আনরিসনেবল
হচ্ছো।
পিতা: আন-রিসনেবল ? আমি আনরিসনেবল?
প্রুফ দাও নয়তো স্টেটমেন্ট উইথড্র করো। রাইট নাউ!
কন্যা: আমার সব বুঝিয়ে
বলার একটা সুযোগ তো পাওয়া উচিত?
পিতা: বাপের সঙ্গে ডেমোক্রেসি
ফলাচ্ছো ? ঔক্কে! বোঝাবার সুযোগ দিলাম। তবে নেকু সেন্টিমেন্ট নয়, বেফালতু চিত্কার নয়, বিধানসভার ওয়াক-আউট নয়। তর্কে যুক্তির ব্যবহার করবে, টু দি পয়েন্ট রিপার্টি দেবে; ভুলে যেয়ো না তুমি কোন বাড়ির মেয়ে। এবার বলো। হু ইস দিস হতচ্ছাড়া!
কন্যা: হতচ্ছাড়া? এটা কী ঠিক হলো বাবা ?
পিতা: হয়নি বুঝি ? বেশ, আই উইথড্র, বলে
যাও।
কন্যা: ইয়ে বাবা, ছেলেটা কিন্তু বেশ ভালো...।
পিতা: উফ! এই তোমার সাইন্টিফিক
মাইন্ড ? না! এইটা আমার ফেইলিওর। শেম ওন মি!
কন্যা: আবার কী হলো ?
পিতা: কী হলো ? ক্যালমিটি! বিজ্ঞান আগে অবজার্ভ করে, তারপর কনক্লুসন টানে! ছেলেটা যে বেশ ভালো সেটা তুমি কনক্লুড
করার কে ? তুমি ওর যাবতীয় কোয়ালিটি আমায় খোলতাই করে বলবে, আর আমি বুঝে নেবো ও কেমন ছেলে।
কন্যা: বেশ, ওর নাম চিত্রক খাসনবিস।
পিতা: এটা নাম না
হাইড্রো-কার্বন ?
রিজেক্ট!
কন্যা: টু মাচ! অসহ্য!
পিতা: আহ:, তর্ক করার সময় মেজাজ হারালেই ক্যালামিটি। আমি এখন তোমার প্রতিদ্বন্দী; আমি
তোমায় উস্কে দিতে চাইবই, তাই বলে তুমি ফাঁদে পা দেবে ? ভুলে যেও না তুমি আমার মেয়ে! কিপ ইয়োর কুল।
কন্যা: বেশ। ও আমার চেয়ে তিন বছরের বড়।
পিতা: দাঁড়াও, তুমি কী একটা মানুষ কে বিচার করতে আগে তার বয়স দ্যাখো?
কন্যা: পয়েন্ট, তাহলে কী ভাবে বলবো বলো ?
পিতা: ভাবো। ভাবো। তোমার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমায় কনভিন্স করা। নিজের ম্যাও নিজে সামলাও, আমার কাছে টিপস চাইলে চলবে কেনো ?
কন্যা: ধুর!
পিতা: ধৈর্য্য!পেশেন্স!
বুক ভরে দুবার নিশ্বাস। গুড। এবার বলো, ক'বছরের আলাপ?
কন্যা:
তিন মাস ।
পিতা: তিন মাস ? হোয়াট? জিরো
পয়েন্ট ট্যু ফাইভ ইয়ার্স ? টু
লেস, ক্যানসেল।
কন্যা: কী ক্যানসেল ?
পিতা: এই হাইড্রোকার্বনটি, হি
ইজ নট ওয়ার্থ ইউ।
এর বেশ কিছু বছর পর। যখন
পিতার সঙ্গী ইজি-চেয়ারটুকু আর কন্যার সঙ্গী সেই হাইড্রোকার্বনটি।
বৃদ্ধ পিতার চশমা’র কোনে স্মৃতি চিক চিক করে ওঠে, কন্যার বিয়ের দিনটি। লোকজন-সানাই-ব্যস্ততা-ছুটোছুটি আর
সব কিছুর মাঝে কনে সেজে সেই ক্লাস সেভেন জ্যামিতিতে ফেল করা বুচি। যাওয়ার সময় যখন
বুচির চোখ জলে টলটল, পিতার
শান্ত হাতে কন্যার গাল টিপে ধরেছিলেন:
“ ইকোনোমাইজ ইওর টিয়ার্স
বুচি, ভুলে যেওনা তুমি আমার মেয়ে”।