চলে যাওয়ায় স্পর্শ আছে, দু;এক আউন্স ভালোবাসা থাকলেও থাকতে পারে।
সেই ভালোবাসাটা মাঝেমধ্যে অনুভব করার চেষ্টা করেন তপন হালদার। ছোটবেলায় যখন শীতের রাত্রের ছাদে দাদু কস্টেলেশন চেনাতেন, তখন টের পেতেন দাদুর মৃদু কণ্ঠস্বরের বাইরে একটা জমজমাট নিস্তব্ধতা আছে। সেই নিস্তব্ধটা অনুভব করতে চেষ্টা করছিলেন তিনি।
তখন ফার্স্ট ইয়ারে। পাড়ার গুরুতুতো দাদা মান্তু এক বিকেলে দড়াম করে পিঠে চাপড় মেরেছিল। গুরুস্নেহ মনে করে সে'সব আলপটকা চাপড় মাঝেমধ্যেই হজম করতে হত। সে'দিন আচমকা মান্তুদা জানান দিয়েছিল "চললাম রে, পাশটাশ করিস ঠিকমত। আর ইয়ে, বোলিংয়ের লাইন লেন্থ একটু ঠিক কর। গাঁকগাঁক করে বল ছোঁড়া মানেই বোলিং নয়"। "কোথায় চললে" জিজ্ঞেস করায় মিইয়ে গেছিল মান্তুদা। বিপ্লব ছাড়া চলবে না, চাকরী না করলে চলছে না, সংসারে বড় অভাব, বৌদি আর দাদার চোপা আর বরদাস্ত করা যাচ্ছে না; এ'মন সাতপাঁচ মিশিয়ে কিছু একটা বলেছিল। মান্তুদার সঙ্গে সেই শেষ দেখা। মান্তুদার আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে স্টেশন পর্যন্ত গেছিল তপু। সমস্তিপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জারের ভিড়ে মান্তুদা মিলিয়ে যাওয়ার সময় বড় অসহায় লেগেছিল। স্ট্যাটিস্টিক্সে মান্তুদা ছাড়া পাস করব কী করে? নতুন গল্পের বইয়ের হদিস কে দেবে?
মায়ের যাওয়াটাও হঠাৎ। রোজ ভোরে উঠতেন, একদিন উঠলেন না। ফুলে ফুলে ঢাকা মাকে দেখেও মনে হয়নি মা ঘুম থেকে উঠবেন না। আগের দিন গোটা রাত বৃষ্টি হয়েছিল। সোঁদা গন্ধে এখনও মায়ের না থাকা ফেরত আসে। বার বার।
আজ আবার সেই রাতের ছাদের স্তব্ধতা বুকের মধ্যে দলা পাকিয়ে উঠছিল। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তপনবাবু দিব্যি টের পাচ্ছিলেন স্টেশনের হাঁসফাঁস, সমস্তিপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এলো বলে। খটখট দুপুরেও ব্যালকনি সোঁদা গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছিল। পাড়ার থিয়েটারে একবার তিন ডায়লগের দারোগার রোল পেয়েছিল তপু; "খেল খতম, হ্যান্ডসাপ"; এ'টা বলেই তার স্টেজে তেজীয়ান প্রবেশ ছিল, মান্তুদার স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী। তপু অবশ্য হোঁচট খেয়ে বলেছিল "হ্যান্ডস্খতম, খেল্সাপ"।
মিতার সুটকেস গোছানো হয়ে গেছে। নিচে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। সব রইল, মিতা ছাড়া। এরপর হয়ত কোর্টের চিঠি। দাদু নেই, মান্তুদা নেই, মা নেই। আরও একটা "নেই"য়ের তাজা গন্ধে বাতাস ভরে উঠেছিল। পকেটে একটা জবরদস্ত সাত পাতার "যেওনা প্লীজ" মার্কা চিঠি ছিল। শত চেষ্টাতেও সে'টা বের করতে পারলেন না তপন হালদার; ততক্ষণে তার মাথার মধ্যে কেউ চিৎকার শুরু করে দিয়েছে;
"হ্যান্ডস্খতম, খেল্সাপ"।
ঠিক তখনি নিচে দাঁড়ানো ট্যাক্সির হর্নটা মান্তুদার আগুন গাঁট্টার মত তপনবাবুর মাথাটা ঝনঝনিয়ে দিল।
সেই ভালোবাসাটা মাঝেমধ্যে অনুভব করার চেষ্টা করেন তপন হালদার। ছোটবেলায় যখন শীতের রাত্রের ছাদে দাদু কস্টেলেশন চেনাতেন, তখন টের পেতেন দাদুর মৃদু কণ্ঠস্বরের বাইরে একটা জমজমাট নিস্তব্ধতা আছে। সেই নিস্তব্ধটা অনুভব করতে চেষ্টা করছিলেন তিনি।
তখন ফার্স্ট ইয়ারে। পাড়ার গুরুতুতো দাদা মান্তু এক বিকেলে দড়াম করে পিঠে চাপড় মেরেছিল। গুরুস্নেহ মনে করে সে'সব আলপটকা চাপড় মাঝেমধ্যেই হজম করতে হত। সে'দিন আচমকা মান্তুদা জানান দিয়েছিল "চললাম রে, পাশটাশ করিস ঠিকমত। আর ইয়ে, বোলিংয়ের লাইন লেন্থ একটু ঠিক কর। গাঁকগাঁক করে বল ছোঁড়া মানেই বোলিং নয়"। "কোথায় চললে" জিজ্ঞেস করায় মিইয়ে গেছিল মান্তুদা। বিপ্লব ছাড়া চলবে না, চাকরী না করলে চলছে না, সংসারে বড় অভাব, বৌদি আর দাদার চোপা আর বরদাস্ত করা যাচ্ছে না; এ'মন সাতপাঁচ মিশিয়ে কিছু একটা বলেছিল। মান্তুদার সঙ্গে সেই শেষ দেখা। মান্তুদার আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে স্টেশন পর্যন্ত গেছিল তপু। সমস্তিপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জারের ভিড়ে মান্তুদা মিলিয়ে যাওয়ার সময় বড় অসহায় লেগেছিল। স্ট্যাটিস্টিক্সে মান্তুদা ছাড়া পাস করব কী করে? নতুন গল্পের বইয়ের হদিস কে দেবে?
মায়ের যাওয়াটাও হঠাৎ। রোজ ভোরে উঠতেন, একদিন উঠলেন না। ফুলে ফুলে ঢাকা মাকে দেখেও মনে হয়নি মা ঘুম থেকে উঠবেন না। আগের দিন গোটা রাত বৃষ্টি হয়েছিল। সোঁদা গন্ধে এখনও মায়ের না থাকা ফেরত আসে। বার বার।
আজ আবার সেই রাতের ছাদের স্তব্ধতা বুকের মধ্যে দলা পাকিয়ে উঠছিল। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তপনবাবু দিব্যি টের পাচ্ছিলেন স্টেশনের হাঁসফাঁস, সমস্তিপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এলো বলে। খটখট দুপুরেও ব্যালকনি সোঁদা গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছিল। পাড়ার থিয়েটারে একবার তিন ডায়লগের দারোগার রোল পেয়েছিল তপু; "খেল খতম, হ্যান্ডসাপ"; এ'টা বলেই তার স্টেজে তেজীয়ান প্রবেশ ছিল, মান্তুদার স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী। তপু অবশ্য হোঁচট খেয়ে বলেছিল "হ্যান্ডস্খতম, খেল্সাপ"।
মিতার সুটকেস গোছানো হয়ে গেছে। নিচে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। সব রইল, মিতা ছাড়া। এরপর হয়ত কোর্টের চিঠি। দাদু নেই, মান্তুদা নেই, মা নেই। আরও একটা "নেই"য়ের তাজা গন্ধে বাতাস ভরে উঠেছিল। পকেটে একটা জবরদস্ত সাত পাতার "যেওনা প্লীজ" মার্কা চিঠি ছিল। শত চেষ্টাতেও সে'টা বের করতে পারলেন না তপন হালদার; ততক্ষণে তার মাথার মধ্যে কেউ চিৎকার শুরু করে দিয়েছে;
"হ্যান্ডস্খতম, খেল্সাপ"।
ঠিক তখনি নিচে দাঁড়ানো ট্যাক্সির হর্নটা মান্তুদার আগুন গাঁট্টার মত তপনবাবুর মাথাটা ঝনঝনিয়ে দিল।