মান্তুদা ইন্টেলেকচুয়াল এনটিটি! তুফান ভাবনা চিন্তায় বেঁচে থাকে! কবিতা টবিতা লেখে, দেরিদা-ক্যাল্ভিনো এসপার-ওসপার করে দুপুর কাটায়। প্লীউরসিস থাকা সত্যেও সিগারেট ধরেছিল স্রেফ কফি হাউসে-ব্রেন'দের সাথে ওঠ-বস করতে হবে ভেবে।। বুর্জওয়া চাকরির মাথায় জুতো মেরে, দি নিউ অন্নপূর্ণা রেস্টুরেন্টে রুটি-মুরগি-কোক সেবন করতে করতে,সর্বহারা কোনো প্রফেশনাল অলি গলি খুঁজতে সর্বদা ব্যস্ত; এই হলো আমাদের মান্তুদা!
মান্তুদার এবার একটা কবিতার বই বেরোলো; "নাভির ডেপ্থ"! এর আগে মান্তুদার যে সব ফ্রেশ কবির বই চাউমিন খরচা বাঁচিয়ে কিনেছিল, সেই কবিরাই কিনলো 'নাভির ডেপ্থ'! তিরিশ টাকা ধার ছিল আমার মান্তুদার কাছে, শোধ করলাম বই কিনে!
বই বেরোবার মাস খানেক পর মান্তুদার সাথে কলেজ স্ট্রীট'এ দ্যাখা, তখন মাত্নুদা সিনেমাটিক ভঙ্গি তে সিগারেট জ্বালানোর চেষ্টা করছিল কলেজ স্কোয়ারের পাবলিক ঈউরিনালের সামনে! আমাকে দেখেই তৃপ্তির হাসি ডিসপ্লে করে বললে, "পচা, সাইত্রিশ কপি হট কেকের মত উড়ে গ্যাছে রে, আমার পাবলিশার বলেছে সেকেন্ড বেস্ট অল টাইম লিস্টে! তুই পড়লি?"
মাথা চুলকে সপাট মিথ্যে কথা চালিয়ে দিলাম, "অফ কোর্স, বিশেষ করে ওই দ্বিতীয় লেখাটা আমাকে এখনো ভাবাচ্ছে"
মান্তুদা সিগারেটের রিং বানাবার চেষ্টা করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "দ্যাটস শার্প অব্সার্ভেসন, এই জন্যেই তোকে আমার ভালো লাগে পচা, 'সমস্ত ব্রেন জুড়ে' লেখাটা একমাত্তর ব্রেন-লেস উজবুকদেরকেই ভাবাবেনা! আফটার অল , তুই তো আর উজবুক নোস! ইন ফ্যাক্ট, দু একটা খবরের কাগজে সোর্স জুটিয়েছি বুঝলি, আমার বই কে রিভিউ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে! তারপর দেখব মেজদার আমাকে এঁড়ে পাঁকা বলে ডিসমিস করে দেওয়া বন্ধ হয় কি না"
বহুদিন আমার ব্লগে কোনো পোস্ট নেই, সুযোগ বুঝে কোপ মেরে দিলাম, " আচ্ছা তুমি একটা নিজের বই'এর ওপর একটা আলোচনা মূলক লেখা লেখ না আমার ব্লগ'এ, বেশ একটা জম্পেশ ব্যাপার হবে আমার ব্লগের জন্যে, তোমার বইয়ের কথাও দু এক জন পড়বে"
"সেল্ফ রিভিউ? হুমমম, ইন্টেরেস্টিং! বেশ, লিখে দেব", বেশ খানিকটা ভেবে বললে মান্তুদা!
"কবে দেবে লিখে?", জানতে চাইলাম।
"আজ রাত্রের মধ্যেই, দেখিস, পোস্ট করতে গন্ডগোল করিস না, প্রচ্ছদ'এর নৌকার স্কেচটা যেন আমার লেখা রিভিউটার সঙ্গে জুড়ে দিস"
বোঝো কান্ড, মান্তুদার প্রচ্ছদের স্কেচটা নৌকার? আমি ভেবছিলাম হাওড়া ব্রিজের ক্যারিকেচার! চেপে গেলাম!
সেই রাত্রেই মান্তুদার নিজের বইয়ের ওপর একটা লেখা আমায় মেল করে দেওয়ার কথা ছিল, অথচ তারপর প্রায় এক মাস কেটে গ্যালো, পাত্তাটি নেই! দু চারবার খোঁজ নিয়েছিলাম, বলে কিনা " ইন্টেলেক্ট কে ফোর্স করিস না, সময় হলে ঠিক লেখা দিয়ে দেব, এ কি আর তোর ব্লগের আগডুম বাগডুম এলিমেন্ট গুলোর মত ভাবছিস রে ব্যাটা?"
মাঝে বেশ কিছুদিন মান্তুদার দ্যাখা-সাক্ষাত না পেয়ে যখন বেশ হন্ন্যে হয়ে গেছি, তখন মান্তুদার দু কলম লেখা একটা ছোট্ট পোস্ট কার্ড পেলুম:
"ডিয়ার পচা,
বই পাবলিশ করতে গিয়ে এন্তার ধার দেনা হয়ে গেছিল,নিষ্ঠুর দেনাদারদেরকে ট্যাকেল করতে মেজদার পকেট মারতে গেছিলাম। আমার ছোটবোনের ট্রেচারী তে বামাল ধরা পড়লাম, বেদম ঠ্যাঙানি সহ মালদায় সেজপিসির বাড়িতে ছ মাস নির্বাসন! 'নাভির ডেপ্থ' শুনলেই নাড়ি কেঁপে যাচ্ছে রে ভাই,রিভিউ-টিভিউ পরে হবে খন, পারলে কটা টাকা আর কিছু মাওবাদী বই পত্তর আমায় পাঠা মালদার ঠিকানায়, যদি নার্ভ একটু ঠান্ডা হয়।
ইতি মান্তুদা"