Tuesday, November 16, 2010

রোগ-সুন্দর



ভাইরাল, জ্বর-গলা ব্যথা-চোখ লাল-জ্বিভ বিস্বাদ! তবে এসব যন্ত্রণা সহ্য করেও যখন দেখি সোমবার দুপুরে; অফিসের থবড়ানি ভোগ না করে, মেডিকাল লিভের দৌলতে ঘরে বসে মন দিয়ে ভি সি ডিতে আইস এজ দেখছি, তখন দিল সুপার খুশ হয়ে যায়। সাবাস ভাইরাল, উইকেন্ডটাকে পাস কাটিয়ে ঠিক রবিবার রাত থেকে গায়ে টেম্পরেচার। কি টাইমিং মাইরি। নাহ, শুধু সেলস টার্গেটি নয়, জীবনে ভগবানও আছেন। বিকেলে বউ সলিড ঝাল ফুচকা নিয়ে আসবে, তাতে নাকি জ্বিভের টেস্ট-বাডরা জেগে উঠবে। এই বডি টেম্পরেচার আর দু দিন টানতে পারলেই হল, বিষ্যুদ-শুক্কুর অফিসে টুকি মেরেই ফের উইকেণ্ড, ক্লাস সিচুয়েশন!
অতএব কনক্লুশান?, রোগ-ভোগ মানে যে হামেশাই টেনশন-দুশ্চিন্তা-কষ্ট তা নয়। প্রাসঙ্গিক দুটি কেস:


1জনডিস
ক্লাস ইলেভেনে তখনমাস খানেক ক্লাস করার পরেই জনডিস ধরা পড়ল। কিলো কিলো রোল, ফুচকা, চপ-বেগুনীর ফসল। বিলিরুবিন সাড়ে আটসর্বক্ষণ গা-বমি ভাব, ভীষণ উইকনেস; সাপটা ডাক্তারী আদেশ: ১ মাস বেড রেস্ট। শুয়ে থাকার তিন দিনের মাথায় দুপুর বেলা ফোনে এল;
-“এই যে হলুদ পাখি, কি খবর? কদ্দিনের ছুটি?”
-“১ মাস, কে বলছিস?”, বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
-“মিকি
-“কে মিকি?”, প্রথমটায় মনে করতে পারিনি এই মিকিটা কে। তারপর মনে পড়ল যে এই মিকি আমাদের স্কুলে নতুন এসেছে। পাশের শহর থেকে প্রতিদিন আসে আমাদের স্কুলে।
চিনতে পেরেছি বলাতে বিজ্ঞের মত বলে গেল – “ এক মাস স্কুল মিস বেশ লম্বা বুঝলি, বাম্পার ছুটি এনজয় করবি বটে, তবে চাপ টা হল এই যে ক্লাসের ব্যাপারে আপডেট না থাকলে চলবেনা। তুই এক কাজ কর আজ থেকে একটা জনডিস ডায়েরী মেনটেন কররোজ দুপুরে আমি তোকে রোজকার স্কুলের আপডেট দেব ফোনে করেচিন্তা নেই, শুধু ক্লাসের পড়াশোনার কথা নয়, বিসাইড দ্য সিলেবাস আমি তোকে স্কুলের বাকি খবর-টবরও স্ট্রাক্চার্ড ওয়েতে সাপলাই করে যাব, হুইচ ইনক্লুডস ইন্টার হাউস ফুটবলএর হাল হকিকত এবং সায়নির সমস্ত খবর, কি ভাই, নামটা ঠিক বলেছি তো
প্রায় জোর করেই আমায় জনডিস জার্নাল মেনটেন করিয়েছিল মিকি। রোজ স্কুল থেকে ফিরে আমায় ফোনে করে স্কুলের ফিরিস্তি শোনাতো মিকি। ক্লাসে কি পড়ানো হচ্ছে, কে টেস্টে ফেল করেছে, কে প্যাদানি খেয়েছে বা দিয়েছে থেকে সায়নির দিকে কে তাকিয়েছে, বুলেট পয়ণ্টে সাজিয়ে বলে যেত রোজ। শুধু আমার জনডিস-ছুটির শেষ দুই দিন মিকির কোনও কল আসেনি। আমার আর ফিরতি কলও করা হয়নি
স্কুলে ফিরে গিয়ে মিকির খবর নিতেই জানলাম মিকি মাস খানেক স্কুলে আসতে পারবে না। জনডিস! বিলিরুবিন নয়ে গিয়ে ঠেকেছে। কি ভালোই যে লেগেছিল খবরটা পেয়ে।
স্কুল থেকে ফিরে গিয়েই ফোনে লাগলাম মিকিকে; - “ এই যে হলুদ পাখি, জনডিস ডায়েরী শুরু করে ফেল, এবার রেগুলার আপডেট দেব আমিপড়াশোনা থেকে ফুটবল, বুলেট বাই বুলেট”!
“আর শর্মিষ্ঠার খবর কে দেবে? প্রিন্সিপাল?”, গম্ভীর গলায় বলেছিল মিকি
দৈনিক খবর গুলো রোজ সাজিয়ে দিতাম মিকিকেসেই দ্বিপাক্ষিক জনডিস-বাজির জেরে এক পেল্লায় দোস্তি গজীয়েছিল। মিকির ভাষায় “এ হৃদয়ের যোগ নয় পচা, লিভার কনেকসন”!
২। চিকেন পক্স
সেই স্কুল থেকে আমি, পাপাই আর চিন্টু এক জান-এক প্রাণ। স্কুলকামাই থেকে মেয়েদের দিকে এংগুলার দৃষ্টি নিক্ষেপ, সমস্তই এক সাথে, গলায় গলায় জেনেছি-শিখেছি-করেছি। বেনিমাধব শীল যাই বলুক, আমাদের দিনগত ফল পৃথক কিছুতেই হতে পারে না, এটা একটা সোজাসাপটা হাইপোথেসিস। হাইপোথেসিসটাকে এক দিন বেমক্কা চ্যালেঞ্জ করে বসল পাপাই।
গরমের ছুটিতে আমি আর চিন্টু প্রবল ভাবে প্ল্যান করে চলেছি কি ভাবে টিউশনীর টাকা শটকে বিকেলগুলোকে চাউমিন-রোল-মোগলাইই সহযোগে আরও মনোরঞ্জক করে তোলা যায়, এমন সময় পাপাই এসে মেজাজের সঙ্গে জানালে যে এই গরমে সে মেজমামার সাথে উটি ঘুরতে যাবে।
টু দি ল্যান্ড অফ ব্লু মাউন্টেনস- আমি চললুম বন্ধুরা”, পাপাইএর কথা শুনে গা জ্বলে গেছিল।
চিন্টু সাবধান করেছিল পাপাইকে, “ওরে ট্রেটর, ওরে ইতর, বাবার পকেট কেটে তোকে চাউমিন গিলিয়েছি নিমাইদার দোকানে, সে কি আজ এই দিন দেখবো বলে? গরমের ছুটিতে আমরা বাড়িতে পচবো আর তুমি ল্যাল ল্যাল করে মেজমামার পিছণ ধরে উটি দেখবে?তুই জাহান্নামে যা, শুয়ার”
আমিও পাপাইকে একটু নিরস্ত করতে চাইলাম, “পাপাই, উটি তে কি এমন হাতি ঘোড়া আছে রে ভাই, তার এর চেয়ে চ শ্রীরামপুরে পিসির বাড়ি থেকে দু দিন কাটিয়ে আসি, পিসেমশাইদের ওখানে হিমসাগরের বাগান আছে, এক একটা মিষ্টি বম্ব এক্কেবারে”!
“গ্রেপ্স আর সাওয়ার মেট, গ্রেপ্স আর সাওয়ার”, এই বলে নিষ্ঠুর পাপাই কেটে পড়েছিল। সেদিন বিকেলেই পাপাই রওনা দিয়েছিল মেজমামার সাথে ২ সপ্তাহের জনন্যে উটি।
পইতে ছুয়ে চিন্টু বলেছিল “ভস্ম হয়ে যাক ব্যাটাচ্ছেলে পাপাই”!
পাপাই ভস্ম হয়নি।
এর ঠিক দুদিনের মাথায় ভোর পাঁচটায় চিন্টুর ফোন, “ পচা, ট্যাক্সি নিয়ে ১০ মিনিটে তোর বাড়ি আসছি, স্টেশন যেতে হবে”
-“কেন?” আমি ঘাবরে গেছি।
-“পাপাই ফিরে আসছে, উটি যাওয়ার পথেই ওর চিকেন পক্স বেরিয়ে গ্যাছে। মেজমামা ওকে পার্সেল করে ফেরত নিয়ে আসছেনওয়েলকাম ব্যাক সেরিমনিটা স্টেশন থেকেই আরম্ভ করতে হবে বুঝলি”
আহহ, এত তৃপ্তির খবর ক্যালকুলাসে পাস করেও পাইনি।

3 comments:

Souvik said...

Oshadharon..:-)

Suhel Banerjee said...

I am presently so overcome by emotions and nostalgia that I can smell those days. Yes, you know how things in the past have certain colour and smell attached to them? Also, never before has any bit of semi-fiction been written about me, so am ecstatic as well. Here's to many more years of bonding over jaundice:) Yellow, yellow, ***** fellow:)

queen's said...

fantastic..... ki typical school dayz er bimari...............unfortunately ekhonkar kids ra r ei rokom jaundice and chicekn pox enjoy korte parbe na :P ( thnx to d vaccines)i just pray dat viral fever er agianst e jano konodin vaccine na ashe....tahole ei rokom week days er faanki ta bondo hoye jabe :P :P