Monday, September 26, 2011

মহালয়া কান্ড

মহালয়া মানেই বাঙালির হাড়-গোড়ে কাঁপণ। আধুনিক বাঙালি আর কাশ-শিউলি-নীল আকাশে পুজো পুজো সিগন্যাল খোঁজে না।কলকেতিয়ে বঙ্গ-সন্তান হলে তো কথাই নেই। ট্র্যাফিক বাতির লাল-সবুজ, ট্যাক্সির হলুদ আর রাইটার্সএর লাল বাদে কলকাতার পাবলিক রঙ চেনে না।
বাঙালি এখন পুজোর হাওয়া চিনতে পারে পাড়ার দাদাদের চাঁদা তোলার হিড়িকে, ক্যালেণ্ডারের তারিখে, পূজা বার্ষিকীতে তথা পণ্য-বাজারের দুর্গা পূজা ধামাকা ডিসকাউন্ট অফার থেকে। আর এই পুজো-আনন্দ ছলকে ওঠে মহালয়া থেকে। ভোর রাত্রে বীরেন ভদ্রের প্যাঁপর যেই না বাজল অমনি বাঙালির গায়ে কাঁটা!
নিষ্ঠাবান বাঙালি মাত্রই ভোর ছটা থেকে দূরদর্শনের সামনে বসবেন কফি বা চা হাতে, সঙ্গে চানাচুর, নিমকি। নিষ্ঠা যদি অতিমাত্রায় জাগে তবে তিনি ভোর পাঁচটা থেকে শুনবেন আকাশবানীএবং পনেরো মিনিটে চা-টা হজম করে বসে বসে ঢুলবেনবীরেন্দ্র ভদ্র থকে গিয়ে ক্ষান্ত হলে, বাবু জেগে উঠবেন আহ! সাচ এ পীওর ট্র্যাডিশন’, বলে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুম চালিয়ে যাবেন
-পূজা ইজ হিয়ার মায় বয়, লিসেন টু দ্য ম্যাজিকাল ভয়েস অফ ভিরেন্দ্রা কৃষ্ন্যা ভ্যাদ্রা”, সাউথ সিটির ৩৬ তলার পিতা তার পুত্রকে হেচড়ে তোলেন ভোর বেলা


-বাবা প্লিজ, ওই মহালয়ার রেকর্ডিং এম পি থ্রী ফরম্যাটে আমাদের পি-সি তে আছে, পরে উঠে শুনে নেব, এখন লেট মি স্লীপ, প্লিজ”, পুত্র ঘোর যুক্তি-বাদী।
-নন সেন্স, এম-পী-থ্রী তে মহালয়া? তেমন মহালয়ার মাথায় আগুন,আই মিন, ড্যাম দ্যাট কাইণ্ড অফ মহালয়া। ভোরের কুল ব্রীজ কুল-কুল করে স্কিনে লাগবে, ভ্যাদ্রার এনচ্যান্টিংগ ভয়েস ইয়ার ড্রাম বেয়ে রিব-কেজে নেমে আসবে, অনলি দেন ইউ উইল ফিল দ্য এসেন্স অফ মহালয়া মায় সন”, বলে পিতা পুত্রের হাত ধরে মারলেন আরেকটা মোক্ষম টান।
-বাবা, হোয়াট আর ইউ ডুইং?তুমি আরেকবার আমায় ডিসটার্ব করলে আমি মা কে কম্পলেইন করে দেব কিন্তু”, পুত্র আলটিমেটাম ঝাড়ে।
-কি বল্লি ব্যাটাচ্ছেলে? মা কে বলবি?চ্যাংদোলা করে আই উইল গিভ ইউ আড়ং-ধোলাই”, কিছুক্ষণ আগেই নিজের স্ত্রী কে ভসভসিয়ে ঘুমতে দেখেছিলেন, তাই পিতা বেশ সাহস করে পুত্র কে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। মহালয়ার সকাল তো আর আপন পুত্রের থেকে ধমকি শুনে শুরু করা যায় নাকিন্তু সেই সাহসটাই হলো কাল
পত্নী দড়াম শব্দে জেগে উঠলেন: অনেকক্ষণ তোমার নন-সেন্স বিয়ার করেছি, মহালয়া-মহালয়া করে সেই ভোর পাঁচটা থেকে ধেই ধেই শুরু করেছো। তুমি জানো না সকাল সাতটা থেকে আমার য়োগা ক্লাস আর বিল্টুর ক্রিকেট কোচিং? সবার ঘুম নষ্ট করো কোন সাহসে তুমি? তোমাকে কি লোকে রাসটিক সাধে বলে?মহালয়া শুনতে হলে রেডিও হাতে ছাতে চলে যাও, যত্তসব!”
ধীর পায়ে পিতা ওরফে বিশিষ্ট এম.এন.সি.র এম.ডি. সাহেব ইন্দ্রজিত রায়, চোরের মত চুপি চুপি রেডিও হাতে ছাতে উঠে আসেন। ওপরে এসেই দ্যাখেন সেখানে ৩৯ তলার বিপিনবাবুও রেডিও হাতে বসে।
ইন্দ্রবাবুকে দেখতে পেয়েই বিপিনবাবু বললেন, ইয়ে, মানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণর গলা ময়াই খোলা হাওয়া ছাড়া ঠিক খোলতাই হয় না
-“তা ঠিক”, বিপিনবাবুর পাশে থেবড়ে বসে বললেন ইন্দ্রজিত, “আচ্ছা বিপিনবাবু, আপনার স্ত্রীও বোধ হয় আমার স্ত্রীর সাথে য়োগা ক্লাসে যান রোজ, তাই না? আর আপনার ছেলেও তো বোধ হয় বিল্টুর সঙ্গে ক্রিকেট কোচিংএ যায়? রোজ সকাল সাতটা থেকে, তাই না?”
পাশে পেটো ফাটলেও বোধ হয় এতটা চমকে উঠলেন বিপিনবাবু, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, ইয়ে মানে, কেনো বলুন তো?”
-“না এমনি!” বিষন্ন হেসে মহালয়ার আকাশে ফোকাস করলেন ইন্দ্রবাবু।

1 comment:

Gablu said...

মহালয়া মে মহা মহা আলয় মে আইসি ছোটি মটই মহা চাপ হতি রাহিতি হ্যা