Saturday, October 15, 2011

ওয়াক-থু: কালচার



বাঙালিকে অফিস-মুখি করে তোলা চাট্টি-খানি কোথা নয় স্যারওসব ওয়ার্ক-কালচার বলে ওয়াক তুলে বাঙালিকে ভূলিয়ে কাজ করবেন, এমন ন্যালা-ক্যাবলা বাঙালি নয়।রক্তে কমিউনিজ্ম আর তৃণমূলীজ্ম এককেবারে ককটেল মেরে আছে মশাই, বেমক্কা যদি কাজ কাজ করে বাঙালি লাফাতে শুরু করে, তাহলে আর রাইটার্সএর ইজ্জত কে বাঁচাবে
? চার্ণকের ভূত?
আর আমিও বলিহারি যাই, আরে মশাই মারওয়ারীর খুচরো গোনার মত সেকণ্ড গুণে কি আর বাঙালি অফিস পৌছতে পারে? দূর-ধুর। সকাল বেলা যদি যত্ন করে চা-থিন এরারুটের সাথে খবরের কাগজটা ঘন্টা দুই ধরে না চটকাতে পারি,তাহলে পোলিটিক্সের পটি বুঝবো কি করে? বাম হলে আজকাল, তৃণ হলে বর্তমান, কাঁঠালি কলা হলে আনন্দবাজার; যেটাই হোক, খবরের কাগজ দৈনিক নটা পর্যন্ত হজম না করলে, ইন্টেলেক্ট পুষ্ট হবে কি করে? আর ইন্টেলেক্টই যদি মাএর ভোগে মেরে দি, তাহলে আমি আর বাঙালি কোথায় মশাই।! এরপর ধরুন বড়-বাথরুমে ঢুকতেই যারা বেরোবার জন্যে তাড়া লাগায় তাদের ইয়েতে আমার হুড়কো দিতে ইচ্ছে করে। কত হাজার কিলো ইসবগুল যে বাঙালীকে মর্নিং-ষ্টেডি করতে কনজিউম হয়ে যে জানেবড় জাগায় বড় ধরনের মন-সংযোগ না রাখতে পারলে ডেফিনীট ক্রাইসিস
এরপর ধরুন জলখাবার। সাহেবী কেতায় কর্ণফ্লেক্স চর্বনে তৃপ্তি পাবো বা একটুকরো মাখনিতো পাউ-রুটি নিয়ে আদিখ্যেতা করে অফিস বেরোবো, এমন আহাম্মক নইজলখাবারে পরোটা অব্লিক লুচি অব্লিক রাধা-বল্লভী, সঙ্গে একটি ভাজা একটি তরকারী এবং পরিশেষে একটি সন্দেশ অব্লিক জিলিপি অব্লিক চমচম। জলখাবারের ব্যবস্থাপনাটি তো আর অবহেলে গিলে ফ্যাল যায় না,তরিজুত করে হজম করতে সময় লাগে, রবীন্দ্রসঙ্গীত লাগে; সবে মিলে শান্ত-সময় লাগে।
এরপর রয়েছে প্রাত্যহিক গৃহকর্ম, এসব মিলে কার ক্ষমতা বেলা দশটার আগে বাড়ি থেকে বেরোয়? তারপর কোলকাতার ট্র্যাফিক আপনাকে কচলাবে।আরে মশায়, ভদ্দরলোকে পারে বেলা এগারোটার আগে অফিস পৌছতে?
আমার আবার ট্রাম-বাস ঠেলে অফিস পৌছিয়েই কাজে ঝাপ দিলে মাথা ঘোরায়আধ-ঘন্টা গপ্প আড্ডা, একটু চা, দুটো সিগারেট তবে না মনে হবে যে হ্যাঁ অফিস পৌছেছিসাড়ে এগারটায় অবশেষে ধীর চিত্তে কাজ শুরু করতে গিয়ে ফাইল টেনে নেবোআসলে তাড়াহুড়ো করলেই বাঙালি গুলিয়ে ফ্যালে, তাই বলি বেশি তাড়াহুড়ো করা পাপঠিক যেমন দুটোয় টিফিন বলতে আপনি ঠীক কাঁটায়-কাঁটায় দুটো বাজলেই টিফিন খুলে গপা-গপ ভাত-ডাল গিলবেন, এ আবার কেমনতর সাস্থ্য বিরুদ্ধ কথাপৌনে একটা থেকে মন কে তৈয়ার করতে হয়ে দুপুরের খাওয়ার জন্যে; এই একটু হাঁটা-চলা করে পাকস্থলীটাকে একটু জারিয়ে নেওয়া আর কিআরে বাবা কাজ তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না, কিন্তু এই বয়েসে যদি হুড়মুর করে খাওয়ার খাওয়া অভ্যেস হয়, তাহলে তো হজম-শক্তির বারোটা বেজে যাবে অকালে
ধীরে-সুস্থে ভাত-টিফিন গলধ:করণ করে, চেয়ারে একটু গা না এলিয়ে কি উপায় আছে? এই একটি ব্যপারেই বাঙালির একটু স্প্যানীশ শৌখিনতা রয়েছে, Siestaএকটু ভাত-ঘুম না দিলে, সন্ধ্যে হতে না হতেই মাথা ধরবে, ধরবেইকথায় বলে হেল্থ ইস ওয়েল্থঅবিশ্যি, সামান্য ভূড়ি থাকাটাও স্বাস্থেরই লক্ষণ
বেলা তিনটের পড়ে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে, এক কাপ চা খেয়ে আবার না হয় কাজে লেগে পড়া যাবে। তবে হ্যাঁ, কাজ-টাজ না হয় হল, তাই বলে কি পাঁচটায় ছুটি বলে পাঁচটাতেই বেরবো নাই? বেলা ৪টে-সাড়ে ৪টের মধ্যে না বেরোতে পারলে তো মারা পড়তে হবে! কৃপাসিন্ধু পাড়ি দেওয়া সহজ, কিন্তু বড়বাজারের সন্ধ্যে বেলার ট্র্যাফিক পেরোতে খোদ হরিও পারবেন না
তাই বলি, অত ওয়ার্ক-কালচার-ফালচার বা কর্ম-সংস্কৃতি-মৃতি ফলাতে যাবেন না, বাঙালিকে শান্তিতে বাঙালি থাকতে দিন।

পরিশিষ্ট:


1 comment:

Gablu said...

এরা হলেন বিষ্ণুর একাদশ অবতার। এদের চটাবেন না। এনারা টেবিল চাপড়ে গোটা বিশ্বের সমস্যা এক মিনিটে সমাধান করতে পারেন, কেবল নিজের কাজ ছাড়া। খুব ভালো বাস্তব লেখা হয়েছে দাদা। :)