পটভূমি : পাণ্ডবদের বনবাসের এক দিন।
তৃষ্ণার্ত যুধিষ্ঠির-দ্রৌপদীর জন্যে জল আনতে গিয়ে একে একে সহদেব, নকুল, অর্জুন ও ভীম নিকেশ হলেন পুকুর-মালিক এক যক্ষ’য়ের হাতে।
“দ্রৌপদীর সঙ্গে মন দিয়ে দুটি কথা কইবো তার উপায় নেই, চার চারটে ব্রাদার হাপিস সামান্য জল আনতে গিয়ে। ধুত্তুরী বিরত্ব” রাগে গজ গজ করতে করতে বাধ্য হয়ে যুধিষ্ঠিরবাবু চললেন ভাইদের খোঁজে এবং অবশেষে এসে পৌছোলেন যক্ষের পুকুরের কাছে। পুকুরের কাছে গিয়েই যুধিষ্ঠিরবাবুর চক্ষু ছানাবড়া । পাশাপাশি ভীম, অর্জুন, নকুল সহদেবের লাশ পড়ে আছে। এ কী কেলো! ভীম-অর্জুন না থাকলে দুর্যোধন ঠেঙ্গিয়ে রাজ্য ওয়াপস আনবে কে? নকুল-সহদেব না থাকলে ফাইফরমাশ খাটবে কোন গাধায়?এ তো মহা-কেস। তবে পিপাসা ভীষণ পেয়েছিলো। যুধিষ্ঠির বাবু ভাবলেন চাপ নেওয়ার আগে জল-টল খেয়ে একটু ঠান্ডা হওয়া যাক। এই ভেবে যেইনা পুকুরের দিকে পা বাড়িয়েছেন যুধিষ্ঠিরবাবু, অমনি বিকট পলিটিক্যাল গুণ্ডার মত চেহারা নিয়ে যক্ষ হাজির- “ এইয়ো, রোককে, পিছে হঠ! মাগনায় জল খাবি নাকি?”
-“কে ? কে?” , থতমত হয়ে পড়লেন যুধিষ্ঠিরবাবু, “ কে মশায় আপনি?”
-“ পুকুরের মালিক আমি, এ পুকুরের জল খেতে হলে, আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিতে হবে, না পারলে জল খেতে পাবেনিকো, জোর-জুলুম করলে পাঁচ নম্বর লাশ ফেলে দেব”
-“আরে স্যার চটছেন কেনো? জল-টল না হয় পরে খেলেও চলবে। অফ কোর্স আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবো। তবে তারপর যদি দু ঢোক খেতে এলাউ করেন, মানে এই বোশেখ মাসের গরমে সকাল থেকে হেঁটে চলেছি কি না...”
-“বেশ তবে প্রশ্নের উত্তর দাও, Rapid Fire ফরমাটে খেলেতে হবে, রাজি?”
-“শুট”, মনোযোগী হলেন যুধিষ্ঠির, এমন টল-টলে বিসলারীর মত পুকুরের জল দেখে তার তৃষ্ণা দ্বিগুন হয়ে গ্যাছে।
-“ বেশ, তবে বলো- সূর্য অস্ত যায় কার তরে?”
-“ বি-সি-সি-আই স্যার, সূর্য অস্ত গেলে তবেই না ফ্লাড লাইট, রঙিন জামা, সাদা বল; তবেই না টু পাইস এক্সট্রা”
-“মানুষের দেবত্ত্ব লাভ কি প্রকারে হয়?”
-“ ইলেকশন জিতে”
-“ পৃথিবীর চেয়ে ভারী কি?”
-“ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ণ”
-“স্বর্গের চেয়ে উঁচু কি?”
-“হুইস্কি”
-“মগজের চেয়ে দ্রুত কি?”
-“মুদ্রাস্ফীতি”
-“পথিকের বন্ধু কে?”
-“ ধাবা”
-“অসুস্থের বন্ধু কে?”
-“মেডিক্লেম ইনসুরেন্স”
-“কি ত্যাগ করলে মনুষ্য ধনলাভ করে?”
-“ ফালতু সেন্টিমেন্ট ”
-“কার পরাজয় অসম্ভব?”
-“ডলার”
-“সুখী কে?”
-“যার প্রতিবেশী দুস্থ, অসুস্থ ও বিপন্ন”
-“খবর আসলে কি?”
-“আনইণ্টরাপ্টেড ভায়োলেন্স”
-“পথ কি?”
-“রোম ও রামকৃষ্ণ”
যক্ষের মুখে স্মিত হাসি ফুটে উঠলো “প্রিয় যুধিষ্ঠির, এলেম আছে তোমার! জল খাও, কুলকুচি করো, ভেজা গামছা দিয়ে গা মুছে বর চাও; চার মৃত ভাইয়ের মধ্যে কার প্রাণ তুমি ফিরে পেতে চাও”
যুধিষ্ঠিরবাবু ভুরু নাচিয়ে জানান দিলেন, “সহদেবকে বাঁচিয়ে দিন স্যার”
-“ভীম-অর্জুনের মত স্টলওয়ার্ট আপন ভাই থাকতে, মাদ্রি-পুত্র কে বাঁচাতে আগ্রহ কেন ভায়া?”
-“দেখুন স্যার, ভীম-অর্জুন থাকতে লাইম-লাইট বা দ্রৌপদী; কোনোটাই জমাটি ভাবে জুটবে না। বরং এখন যদি সহদেব কে সাইডে রেখে যদি দুর্যোধনের সঙ্গে একটা কোয়ালিসন ফ্রেম করতে পারি..”
-“বিচক্ষণ ব্যক্তি তুমি, অনেক দূর যাবে। তবে ভীম-অর্জুন কে এখনই সাল্টে দিলে যুগের ইতিহাসে মহাভারতের TRP ঝুলে যাবে। আর একা নকুলকে লটকে রেখে আমি হাত গন্ধ করবো না। তোমার সব ভাইয়ের জীবন ফেরত দিলাম । মরালিটির মাথায় ঝাড়ু মেরে তোমরা আরও জুয়া খেলবে, ভাতৃ-হত্যা করবে, প্রজা ঠ্যাঙ্গাবে; এ আশীর্বাদ করি। দীর্ঘজিবি হও। “
-“ধন্যবাদ স্যার। এবার একটু সাইড দিলে জল খেয়ে পিলে ঠান্ডা করি”
2 comments:
Ja likhechho! Uff awesomeness!
Ja likhechho! Uff awesomeness! :D
Post a Comment