বস্তুত, প্রযুক্তি হিসেবে বাঙালি জাতির কাছে ইন্টারনেট প্রবল ভাবে ব্যর্থ। ইন্টারনেট নামক জন্তুটি যে সহজ সত্য অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে, সেটি হলো যে বাঙালি জাতির 'পরিবর্তন' কোনও সার্ভার’য়ের হাতে নয়, রয়েছে ব্যালটে ও ইসবগুলের স্বাদে। ইন্টারনেটের স্বপক্ষে যাবতীয় যুক্তি, আদপে বাঙালির মূল জাতিগত স্বার্থগুলোতে বারংবার প্রবল আঘাত হেনেছে। তলিয়ে দেখলে, ইন্টারনেট আসলে বাঙালির থেকে বাঙালিয়ানা কেড়ে নেওয়ার একটি নির্মম মহাজাগতিক প্রচেষ্টা মাত্র।
হে গুগল-লেহনকারী বঙ্গসন্তান, শান্ত চিত্তে ভেবে বলুন তো এই আন্তর্জালিক মক্কেলটি আপনার কোন ইন্দ্রিয়ে সুড়সুড়ি দিয়েছে যে আপনি এর কেন গোলাম হয়ে থাকবেন? ভাতঘুম বেঁচে থাক, এই প্রযুক্তির নেশা কাটিয়ে উঠুক বাঙালি, নয়তো অচিরেই তার অস্তিত্ব সাফ হয়ে যেতে পারে।
ইন্টারনেটের উপকারিতা কোথায়? বিশ্ব-ব্যপি যোগাযোগ’য়ের সুবিধে? বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ রেখে আমরা কী করব? ঘরের কোনে আলতো পেছণ ঠেকিয়ে ভ্রমণ কাহিনী পড়বো, মুড়ি চানাচুর খেতে খেতে কাফকা পড়বো, এর বেশি বিশ্বযোগ’য়ে আমাদের কী কাজ? যোগাযোগের নামে বাঙালীকে বাংলা ছাড়া করবার এক নিকৃষ্ট অজুহাত যুগিয়েছে ইন্টারনেট।সাবধান বন্ধুরা।
জ্ঞান-বর্ধন? ইনফরমেশন? গাইড বই, গল্পের বই এবং পঞ্জিকা, এর বাইরে বাঙালি-ভোগ্য জ্ঞান কোথাও নেই, থাকতে পারে না।জ্ঞান-বাজি আর যোগাযোগ, এই দুটোই যদি বাদ থাকে, তবে ইন্টারনেট দিয়ে দরকারটা কী ?
জ্ঞান-বর্ধন? ইনফরমেশন? গাইড বই, গল্পের বই এবং পঞ্জিকা, এর বাইরে বাঙালি-ভোগ্য জ্ঞান কোথাও নেই, থাকতে পারে না।জ্ঞান-বাজি আর যোগাযোগ, এই দুটোই যদি বাদ থাকে, তবে ইন্টারনেট দিয়ে দরকারটা কী ?
অথচ ভেবে দেখুন, ইন্টারনেট বাঙালির অনাবিল চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলি কে কিরকম অদৃশ্য হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে দিচ্ছে।
দশটা-পাঁচটা আপিস, তারপর খাওয়া-আড্ডা-ঘুম। ইন্টারনেট আর সেই উপার রেখেছে? ই-মেল’য়ের হাত ধরে ২৪ ঘন্টা আপনার অফিস আপনার মাথার ওপর ধেই নাচছে। রিডিকুলাস। অবসর যদি অফিস-ইমেল-চোনা মিশ্রিত হয়, তবে সে অবসরের মূল্য কোথায়। আর নির্ভেজাল অবসর বিনে বাঙালির বাঙ্গালিয়ানা যে মাঠে মারা যাচ্ছে। আড্ডা নেই, গুলতানী নেই, অসময়ে ঘুম নেই, আনমনে আবোল-তাবোল কবিতা লেখার অবসর নেই, আরে আমরা যে নাত্সী হয়ে যাবো!
এক সময় ছিল যখন মানুষ হাতের লেখা ঝালিয়েছে প্রেম-পত্র লিখে, আরে এখন তো ই-মেল’ও নয়; টুইটারে টুসকি মেরে <3 লিখলেই হৃদয়-নিবেদন।অমন রোমান্সের মুখে ব্লিচিং পাউডার । কোথায় চিলেককোঠার আড়াল খুঁজে চুমু আর কোথায় গোপন ভিডিও চ্যাট। বাঙালি-সুলভ প্রেম এক কথায় বিপর্যস্ত। ইন্টারনেট-ত্রস্ত।
প্রতি পাড়ার যত পবিত্র ঠেক, সমস্ত ধু ধু মরু। নেরুদার বুকনি থেকে চিমা’র ফ্রী-কিক হয়ে সুপর্ণার বক্ষভার; বি-বি-সি’র বাপ ছিল এসব রক-ভিত্ত্বিক আড্ডা-তীর্থ গুলো। আর এখন? ফেসবুক? ট্যাগ? পোক?শেয়ার? ছি:, ছি: , আড্ডার ওপর এমন অনৈতিক ইস্তিরি ? কলেজ স্ট্রিট চষে বই সাফারি ভুলে বাঙালি কিনা পাশবালিশ কোলে Flipkart ঠেলবে? শেম! ধিক্কার। হৃতপিণ্ডে থাপ্পড়। Wake Up বাঙালি।
*****
রাত দেড়টা।
বাড়ির কম্পিউটারে বসে অফিসিও পাপ-ক্ষয় করছি। এমন সময় জি-টক’য়ে পিং শব্দ।
“কখন ঘুমোবে?” চ্যাট-মেসেজটি পাঠিয়েছে আমার বউ, পাশের ঘরের ল্যাপটপ থেকে।
“একটু পরে” , আমি টাইপ করলাম।
ঈশ্বর, এ ইন্টারনেট তুমি ওয়াপস নাও।
No comments:
Post a Comment