Wednesday, February 8, 2012

পর্ণ-গেট ও স্বর্গ-দুয়ার


দুরু দুরু পায়ে গোমূত বাবু লাল গালিচা মারিয়ে হেঁটে এলেন। চারিদিকে কুয়াশা মাখা ক্লাসি ব্যাপার। কুয়াশা চিরে শুধু এই লাল গালিচার পথ গিয়ে ঠেকেছে একটা বেঢপ সেগুন কাঠের বার্নিশ করা দরজায়। আর কিস্যু নেই কোথাও। আকাশ-মাটি কিছু না। শুধু কুয়াশা, লাল গালিচা আর সেগুন কাঠের দরজা।
মরবার পর থেকে তেরোশো বছর ধরে ড্যাঙস-পিটুনি খেয়ে আসছেন গোমূত-বাবু। পোলিটিকাল কেরিয়ারের মাশুল । পরলোকে যে এমন ফ্যাসিবাদ চলছে তা জানলে কী আর এত সহজে মারা যেতেন? আরে বাবা স্ট্রেট পিটুনি, লোয়ার কোর্ট-হায়ার কোর্ট বলে কোনও বাফার নেইরাসকালা!অবশ্য আরও সাতশো বছর ডান্ডা-পেটা হওয়ার কথা ছিল গোমূত-বাবুর, তার অন্য সমস্ত রাজনৈতিক সঙ্গীদের মত । কিন্তু হটাত্‍ কোথা থেকে এক হুকুম-নামা এলো, যে নরক-ঠ্যাঙ্গানির মাঝে একটা ছোট্ট এক মাসের স্বর্গ-বিরাম তিনি পাবেন। অন্য কারুর কপালে এমন জ্যাকপট জোটেনিকিন্তু গোমূত-বাবুর বরাত এমন দরাজ হলো কেনো গোমূতবাবু শত ভেবেও কুল-কিনারা করতে পারছেন না

ওই বার্নিশ করা দরজার ওপারে রয়েছে স্বর্গরাজ্য। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজার কাছে পৌছলেন গোমূতবাবু এবং নক করলেনস্যটাক করে খুলে গ্যালো দরজাখুললেন একজন সুদর্শন পুরুষ, ধুতি-মালা-মুকুট পরা, ঠিক যেন বি-আর-চোপড়ার সেট থেকে সদ্য উঠে আসা।

_ “ আপনিই ইন্দ্রদেব নাকি স্যার?” ভক্তি ভরে প্রণাম ঠুকলেন গোমূত-বাবু।
_ “ ভারী আহাম্মক তো হে তুমি? ইন্দ্র কী বাহাদুর সিং যে দরজায় দাঁড়িয়ে সেলাম ঠুকবে? আমি স্বর্গের দুয়ার-রক্ষক”, গর্বের সঙ্গে বললে সেই পুরুষ।
-“ও, দারোয়ান?”
-“দরোয়ান হবে তোর বাপ! আমি দুয়ার-রক্ষক, পদএর দুলুনিটা খেয়াল করিসনি? খবরদার দরোয়ান  বলবিনি”
-“ অহহো, মার্জনা করুন। ইয়ে, আমায় এখানে ডাকা হল কেনো? মানে আমার কপালে একমাসের স্বর্গ-ছুটি জুটলো কেনো? আমার বিধানসভার বাকি দোস্তদের তো জুটলো না এ সুবিধেআমার কোনও এক্সট্রা পুন্য ছিল নিশ্চয়?”
-“এক্সট্রা পুন্য ছিলো না রে গোমূত-ব্যাটা! তবে পাপ একটু কম করেছিলিস কী না তাই এই সুবিধে পেলি, স্বর্গে সাদর আমন্ত্রণ”
-“পাপ কম করেছি তাই নাকি? কী ভাবে?”
-“ওই যে ব্যাটা, বিধানসভায় বসে মোবাইলে নোংরা ছবি দেখলি? তাতেই তোর পাপ একটু কম হয়েছে হয়েছে কিন্তু কম!”
-“পানু দেখে পাপ কম হয়েছে? ঠাট্টা করছেন স্যার? দরজার এপারে এনে আরও ক্যালাবেন?”
-“ওরে না রে, ঠাট্টা নয়, ঠাট্টা নয়, আরে বিধানসভায় বসে, যখন সমস্ত মন্ত্রী মিলে ভয়ানক সব পাপ করে চলেছে; যেমন দেশ বিক্রির ফন্দি কষা, গরীবের টু পাইস ঝেড়ে নেওয়ার প্ল্যান করা, এদিক ওদিক লাশ ফেলে দেওয়ার কথা, ঘুষ-প্রণালী সহজতর করার কথা, ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন একমাত্র তুইই এসব কিছু না ভেবে আপন মনে নোংরা ছবি দেখে চলেছিলিস নিজের মোবাইলেবিধানসভায় তুই ১০ মিনিট পানু-দর্শনরত অবস্থা অন্যমনস্ক থাকায় দেশের ক্ষতি কিঞ্চিত কম হয়েছে। অতএব বাকী মন্ত্রীদের সমান শাস্তি তর প্রাপ্য নয়। তাই ইস্পেশ্যাল এক মাসের স্বর্গবাস। সমঝা?”
-“আপনাদের দয়ার শরীর।তা, এখনো ইন্দ্রসভায় মেনকা-টেনোকার শো হয় তো?”  

2 comments:

bhalomanush said...

এক কথায় "একঘর" হয়েছে লেখাটা

Anirban Halder said...

Hi Tanmay, I've just given Bong Pen an award on my blog Kolkata Curry! Do check out the latest post.