Wednesday, March 21, 2012

তেল দ্য সর্ষে



শুনেছি যে দুই মাস বয়েস থেকেই আমার দিদা আমায় সর্ষের তেলে দলাই-মলাই করে রোদে ফেলে রাখতেন ঘন্টার পর ঘন্টা। তখন এমন প্যাকেট সর্ষের তেলের সময় আসেনি। পাড়ার ঘানীতে গিয়ে দাদু নাকি নিজে নিয়ে আসতেন আলট্রা-খাঁটি সে সর্ষের তেল। তার ঝাঁঝ নাকি এয়সা ক্ষতরনাক ছিল যে শিশির ছিপি খুলতেই চোখে জল চলে আসতো। সেই চাবুক সর্ষের তেলে দৈনিক প্রায় চুবিয়ে রোদ পোহানো হতো আমায়।শুনেছি বেদম চিত্‍কার করতাম সেই তেলের জ্বালায়। দাদু ভাবতেন নাতির গলায় সুর আসবে, ক্ল্যাসিকাল গাইয়ে হবে (সেই নাতি অবশেষে তেল বেচছে)। কিন্তু একটানা ওই তেল-রগরানিতেই নাকি আমার সর্দি-কাশির ধাত বিলকুল নেই। সে যাই হোক, ওই তৈল-মর্দন সেশনগুলো থেকেই আমার সর্ষের তেল প্রীতি শুরু।

শীতকালে ছাদে গিয়ে সর্ষের তেল মেখে স্নান তো অমোঘ-উত্‍সব ছিলো একসময়ে। মালকোচা মেরে পরা গামছা, পেতলের ছোট বাটির কানায় কানায় ভর্তি সর্ষের তেল
। সর্বশরীর তেল রগড়ে, আইসিং অন দ্য কেকের মতো আঙ্গুলের ডগায় তেল নিয়ে, আঙ্গুলের মাথা সটান নাকের মধ্যে চালান করে দেওয়া। অত:পর  চুপচুপে শরীরে ছাতময় পায়চারি আর হেঁড়ে গলায় প্রতুল মুখুজ্জে। সে সব ডিসেম্বর আর কে ফিরিয়ে দেবে! তবে শুধু শরীর-যতনে নয়, সর্ষের তেলের মূল কেতা মালুম চলতো রান্নায়ডুবো তেলের বেগুন ভাজাই হোক কী মাছ ভাজা, মুরগির-মাংস-তরকারী; সমস্ত কিছুই সর্ষের তেলেই খোলতাই হয় এমনটাই চিরকালীন বলে জানতাম।



 
বিয়ে করলাম, বউ এলো, এবং বাড়তি যৌতুকের মতো সাথে নিয়ে এলো কোলেস্টেরল কনসেপ্ট। ব্যাস! রান্না থেকে সর্ষের তেল ৮০ শতাংশ উধাওএবং, সুস্বাদু খাদ্য-গ্রহণ গ্যালো গুলিয়েহেঁসেল হয়ে উঠলো হাসপাতালের ক্যাণ্টীনরিফাইনড অয়েল ঢুকে বাঙালির জ্বীহা-রসের কাছা দিলো খুলে

এবং, জীবনে এলো আরও বড় ঝড়! বডি অয়েল! পুরুষ-দেহ মর্দনের জন্যে সর্ষের তেল ছাড়া যে অন্য কোনও ব্যাপার হতে পারে তা তো ভাবতেই পারতাম না? তাছাড়া আরও মুস্কিল, আধুনিক বাক্স-ফ্ল্যাটে ছাত কই? চুপচুপ সর্ষের তেল মেখে রোদ পোহাবো কোথায়? ব্যালকনিতে আধমরা রোদ আসে বছরে সাড়ে-সাত দিন, সঙ্গে ধুলো-পোড়া কার্বন।

অতএব?

এখন সকালে উঠে ট্যাঙ্কের জমানো ঠান্ডা জল; গীজারে গরম করে, দু মগ জলে দেহ ভিজিয়ে,  বউএর ড্রেসিং টেবিল হাতড়ে ময়শ্চারাইজিং ক্রীম দু ফোঁটা নিয়ে বুক পিঠ রগড়ে নেওয়া। এরপর দু ফোঁটা সাদা তেল মাখানো ব্রয়লার স্টু-ভাত গিলে অফিস মুখ হওয়া
সর্ষের তেল বিনে জীবন এখন বাঁসি পাউরুটি।ঝাঁঝ চলে গ্যাছে, বাঙালিয়ানা এখন আলট্রা-রিফাইনড আলুনি। ধুত্তর!



1 comment:

অনিরুদ্ধ ফাল্গুনি সেন said...

এই তো খাসা সর্ষের ঝাঁজ বেরুচ্ছে, কবিতার সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল! তবে তেল ঢেলে কবিতা হয়না বোধ হয়, ভস্মে ঘি ঢেলেও না৷ সাধনাও একরকম ব্যায়াম, ছাদ চাই না, রোদ্দুর চাই না, এমনকি গৃহ-গৃহবধু-সন্তানসন্ততি-একচিলতে বারান্দার দরকার নেই ... যদি কবিতার জন্য চুলকুনি থাকে৷