মশা দূর করবার প্রযুক্তি যতই এগিয়ে
আসুক, কোনও টোটকাই
নাইলনের ভালোবাসা কে টেক্কা দিতে পারবে না। মশারি। কী অনাবিল,
বঙ্গ-গৃহস্থালির সব চেয়ে কমনীয় টুকরো এই মশারি। নীলে, সবুজে, হলুদে, সাদায়
মিহি-মসৃন জাদু। এক সময়
প্রতিটি বাঙালি খাটের স্নেহ-অংশ ছিলো স্ট্যান্ড বা খুঁটি; মশারি
টাঙ্গাবার জন্যে। সেই স্ট্যান্ড এই মশা-মারা লিকুইডেটরের যুগে প্রায়
অবলুপ্ত। অথবা ঘরের বিশেষ প্রান্তের বিশেষ পেরেকটিতে
পৌছবার জন্যে মশারির কোণে ঝুলতো বিশেষ মাপ বিশিষ্ট দড়ি (ক্ষেত্র বিশেষে পায়জামার
দড়িও)। গৃহস্থের গার্হস্থ-Efficiency’র পরিমাপ বুঝতে হলে তার মশারি টাঙ্গানোর ভঙ্গি কতটা
অবলীলা-মিশ্রিত, সেটা বুঝে নিলেই চলবে। আমার মত দরকচা মারা আদমি যে মশারি-টাঙ্গাতে
গিয়ে লম্বা-চওড়া মাপতেই যে হিমশিম খাবে, সেটাই স্বভাবিক।
মশারি ছিলো
দাপুটে ঘুমের প্রাথমিক শর্ত; তাজমহলের সফেদপনা আর বাঙালির রাতের বিছানার ওপর মশারি
একই রকম আবশ্যক।পরিপাটি করে পাতা পরিষ্কার কড়কড়ে চাদর, নরম পাতলা বালিশ, পুষ্ট-পাশ-বালিশ
বিশিষ্ট এক ঘুমমোহিনী বিছানা। নীল-নাইলনের মশারি টানটান করে টাঙ্গানো,
পরিপাটি
করে তোশকের নীচে ঠেলে দেওয়া মশারির কাপড়ের বেস। একপাশে শুয়ে ঠাকুমা। অন্যপাশে ডেসিম্যাল সাইজের আমি। ঠাকুমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমায় ঘুম পাড়ানো,
আমার
বক বক।ঠাকুমা বলতেন “বলো দেখি নাড়ুগোপাল, ‘ঘরের
মধ্যে ঘর/তার মধ্যে বসে আছেন ভোলা মহেশ্বর’,কী ব্যাপার সেটা?”
ঠাকুমা অবাক
হতেন “জানলে কী করে নাড়ু-গোপাল?”
-“বা:রে, তুমিই
তো বলেছো কতবার”
-“বলেছি নাকি?”
-“হ্যাঁ
তো, আচ্ছা ঠাম,ঘরের মধ্যে ঘর তো মশারি, তার নীচে ভোলা
মহেশ্বর কই?”
-“এই যে তুমি
নাড়ু-গোপাল, গোপালও তুমি,
ভোলাও তুমি”
-“ধুর”
-“সত্যি, এই
দেখো তুমি টিফিন খেতে বুলে যাও, অঙ্ক করতে ভুলে যাও, বাবা-মা’র
কথা শুনতে ভুলে যাও, তুমি ভোলা মহেশ্বর না?”
-“আচ্ছা? আমি
ভোলা-মহেশ্বর হলে তাহলে দুগ্গা কই?”
-“এই যে আমি, আমি
তোমার দুগ্গা নাড়ু-গোপাল”
-“ধুর তুমি যে
কী! দুগ্গার বুঝি সব চুল সাদা?”
-“দুগ্গা কী
করবে গো নাড়ু-গোপাল, ভোলা-মহেশ্বরের কোটি-কোটি প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই যে দুগ্গার
চুল সবে সাদা হয়ে গ্যাছে গো”
দুগ্গা চলে গ্যাছেন।
ভোলা-মহেশ্বর
এখন নিও-পার্বতীর সাথে গুডনাইট লীকুইডেটরের সন্নিধ্যে রাত্রি যাপন করেন। ঘরের ভিতর আর কোনো ঘরে নেই।
2 comments:
loving the new look :) specially "tanmay mukherjee ke hoye" is simply honest, there are millions of typical BONGs like this :) very innovative too :)
বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে শুতে গিয়ে একবার পৈতে দিয়ে মশারি বাঁধতে হয়েছিল. ধর্মের খুঁট বলে কথা. সব কটা মশা জব্দ হয়েছিল.
Post a Comment