ঢাকুরিয়া মোরে একটি মধ্য বয়স্ক পাগলকে প্রায়ই দ্যাখা যায় ব্যস্ত হয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ সেজে হাত পা নেড়ে আমোদ করছে। কেউ তাকে পাত্তাও দেয় না, বাঁধাও দেয় না। অফিস ওইখানেই হওয়ায় ওই মধ্য বয়স্ক আহ্লাদি-উন্মাদটিকে আমি অন্তত বেশ চিনি। আজ দুপুরে রোল খাওয়ার জন্যে ঢাকুরিয়া বেদুইনে হাজির হয়েছিলাম। এমন সময় দেখি সেই ক্ষ্যাপা লোকটি পাশে এসে দাঁড়িয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে। ওর দিকে চাইতেই ফিক করে হেসে বললে, “এক পিস রোল খাওয়াবেন নাকি স্যার? ঘুগনি পাউরুটি খেয়ে অরুচি ধরে গ্যালো”।
মজা লাগলো ওর স্মার্ট আব্দার শুনে। দুটো রোলের অর্ডার দিয়ে দাঁড়ালাম দোকান লাগোয়া
ফুটপাথে।
জানতে চাইলাম “রোজ সকালে মোরে দাঁড়িয়ে যে মুজরো করো, কোনোদিন পুলিশ চাবকে দিলে কী করবে?”
-“কী করবো বলুন স্যার, কোলকাতা পুলিশ যদি ট্র্যাফিক ঠিক
ঠাক সামাল দিতেই পারতো তবে আর চিণ্ময় সমাদ্দারের দালালি করবার দরকারটা কী ছিলো
? আমি না থাকলে যে শহর জুড়ে সিটু-আই এন টি ইউ সি বিনেই চাক্কা জাম হয়ে যাবে! সেই বেলা? একজন সফল মানুষ হিসেবে এ শহরকে এইটুকু ফ্রি-সার্ভিস যদি না দিতে পারি, তবে আমার আর ক্যানিং’য়ের পকেট মার মন্টু বিশ্বাসের মধ্যে কী ফারাক?”
? আমি না থাকলে যে শহর জুড়ে সিটু-আই এন টি ইউ সি বিনেই চাক্কা জাম হয়ে যাবে! সেই বেলা? একজন সফল মানুষ হিসেবে এ শহরকে এইটুকু ফ্রি-সার্ভিস যদি না দিতে পারি, তবে আমার আর ক্যানিং’য়ের পকেট মার মন্টু বিশ্বাসের মধ্যে কী ফারাক?”
-“সফল মানুষ হ্যাঁ? তোমার বুকনি-রুচি তো বেশ জম্পেস
হে?”
-“হে হে হে, ঠাট্টা করছেন স্যার? সফল কী আর এমনি এমনি
হয়েছি স্যার, এই কলকেতার রাস্তা চষে, তবে না সাফল্যের মন্তর কব্জা
করেছি”
-“সাফল্যের মন্ত্র? হুই!”
-“ আঁজ্ঞে হ্যাঁ স্যার। সফল জীবন-যাপনের সহজ, কোলকাতার রাস্তা থেকে তুলে আনা মন্ত্র, শুনবেন?”
-“শোনাও”, ফুটপাথের রেলিঙে হেলান দিলাম, এখনও রোল আসতে কয়েক মিনিট বাকি।
এমন শ্রোতা এ বান্দা কখনো হয়তো পায়নি। কাছে এগিয়ে এসে
হটাত্ ফিস ফিস করে কথা বলতে শুরু করলো পাগলটা:
“মন দিয়ে শুনে রাখুন স্যার। জীবনে যদি সাফল্য চান, তাহলে মনে মনে টুকে রাখুন;
প্রতিশ্রুতি পালনে হয়ে উঠুন ট্যাক্সি ড্রাইভার। সে
আপনাকে গন্তব্যে পৌছে দেবে কিন্তু আধ-কোলকাতা ঘুরিয়ে, মিটার দ্বিগুন করে। তেমনি অপর কে
দেওয়া প্রতিশ্রুতি চট করে পালন না করে তাকে ল্যাজে খেলান। তাতে আপনার দর বাড়বে,
লোকে
মান্যি করবে।
অটো-চালকের মত ম্যানেজ করতে শিখুন। দুজন সওয়ারীর জায়গায়
তিনজন,
তিন জনের জায়গার চার জন। কোয়ালিটির
জাঁতা কলে পিষেছেন কী আপনি ক্ষতম । জীবনে
মুনাফাটাই সব স্যার। তাতে
দু চার জনের কষ্ট হলে হোক, দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটুক; মুনাফা করতে হলে
ম্যানেজ করাই হলো মূল-মন্ত্র।
ভীড়,ট্র্যাফিক’কে লাথি মেরে মিনি-বাসের চালকের
ওভার-টেক করার ক্ষমতা কে রপ্ত করুন। ওভারটেক করুন সহকর্মী, সহ-ছাত্র, বন্ধু; পারলে নিজের ভাই-বোন বা যাবতীয়
আপনজন কে। আলপটকা সিগন্যাল ভাঙ্গতে হতেই পারে তার জন্যে।
ট্রাক চালকের মত প্রয়োজনে দু চারটে
চুনো-পুটিকে ক্ষমতার টায়ারের নীচে পিষে দিতে কসুর করবেন না।
নিজের প্রয়োজনে বাস-কন্ডাক্টারের মত তাগাদা মারতে
শিখুন।
আর মনে রাখবেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলায় যদি আপনি
বিশ্বাস করেন,তবে হাত-টানা রিক্সার মতই চওড়া সড়ক
ছেড়ে,
অলি-গলিতে আপনাকে নষ্ট হয়ে থাকতে হবে। ওই এগ রোল এসে গ্যাছে, ধন্যবাদ স্যার। দশ মিনিটের মধ্যেই আবার আমায় ডিউটিতে যেতে হবে”
1 comment:
bah! khub bhalo laglo pore.
Post a Comment