অনাদি সেন : স্যার, বসবো?
গোলঞ্চ-বাবু : বসবে কেনো? শোনো, যে বসে থাকবে, জেনো তার ভাগ্যও বসে থাকে। আর তুমি তো দেখছি ইয়ং ম্যান হে! ছোকড়া। বসবে কী? বরং এই বেলা দু চারটে ডন বৈঠক দিয়ে নাও।
অনাদি সেন : ডন-বৈঠক? দেবো? এখন?
গোলঞ্চ বাবু: না, না, এইটে ব্যায়াম করার জায়গা নাকি হে? ডন বৈঠক মারতে হয় তো নেদু মল্লিকের আখড়ায় গেলেই পারো? নব-সাহিত্যসভা’র আপিসে এসে ফচকেমো কেনো? আজ ডন-বৈঠক মারতে চাইছ, কাল এসে বলবে মুজরো করবো।আমি কী সম্পাদক না শতরঞ্চি?
অনাদি সেন: ইয়ে স্যার, আ...আমি তো ইয়ে, ডন বৈঠক মারতে আসিনি…
গোলঞ্চবাবু: এ তো আচ্ছা ঝ্যামেলা, ওরে ও পঞ্চা, কতবার বলেছি আপিস ঘরে কাউকে ঢোকাবার আগে একটু ভালো করে ঝালিয়ে নিতে…
গোলঞ্চবাবু: নৃপেন বাবু? হলদিয়ার?
অনাদি সেন: না না, আপনার প্রতিবেশী অনামিত্র হালদারের পিসতুতু ভাই। ওই যে আপনার ম্যাগাজিনে একটা কবিতার ব্যাপারে রেকমেণ্ড করেছিলেন গত বিষ্যুদবার।
গোলঞ্চবাবু: কবিতা? যা: শালা, তুমি কী কবি নাকি?
অনাদি সেন: হে হে হে হে, ওই আর কী...
গোলঞ্চবাবু : ওই আর কী মানে? কবি নও? চাঁদা চাইতে আসনি তো ভায়া?আমরা আবার কম্যুনিষ্ট টেনডেন্সি আছে...
অনাদি সেন: না না, চাঁদা নয়, আজ্ঞে আমি কবি, আপনার পত্রিকায় দুটো লেখা যদি...
গোলঞ্চবাবু: এক মিনিট, কবি? কোন পত্রিকায় লেখা হয়? “দেশ”য়ের লেখক হলে আপনি আমাদের ব্র্যাকেটে পড়েন না, পাতি ছোট পত্রিকার খুচরো লেখক হলে আমাদের আগুনের ফুলকি নব-সাহিত্যসভা’য় লেখা ছাপাবার স্বপ্ন দেখো না, আর এক্কেবারে নয়া-চিড়িয়া হলে; কেটে পড় ব্যাটা!
অনাদি সেন: ইয়ে স্যার, না মানে, ওই মাসিমা, মানে আপনার মিসেস বলছিলেন, আপনার ছোট ছেলে হালটু’র ইংরেজিটা একটু নড়বড়ে; হপ্তা চারদিন ওকে একটু দেখিয়ে দিতে আমার কিন্তু কোনও অসুবিধেই হবে না...
গোলঞ্চবাবু : আমি প্রাইভেট টুইশনি’র বিরোধী, এই করেই এ দেশের পড়াশোনার বারোটা বাজলো...
অনাদি সেন: ইয়ে স্যার, আমি কিন্তু মাইনে নিয়ে পড়াবো না...
গোলঞ্চবাবু: অ! তবে এক কাজ করো, শনি-রবি বাদ দিয়ে এসে ওকে একটু দেখিয়ে যেও কেমন? দেখি পরের বছর তোমার লেখার জন্যে আমাদের পত্রিকায় একটা স্লট যদি বের করে পারি, বুঝতেই তো পারছো, মাইন্ডলেস কম্পিটিশণের যুগ, ওয়ান পাইস ফাদার-মাদার করে চলতে হয়, তা দাঁড়িয়ে কেনো? বসো।
অনাদি সেন: মাসিমা আরও বলছিলেন যে বাজার ঘাট করার, রেশন তোলবার ভারী অসুবিধে, আপনার বড় ছেলের কলেজের পড়ার চাপ, আপনার সম্পাদনার মত গুরু-দায়িত্ব। তা স্যার, আমি আবার সকালের দিকটা বেশ খালি’ই থাকি, ইউনিভার্সিটি যেতে হয় তো সেই বেলা দশটার পর। তা এবার থেকে ওই রোজ রোজ বাজার করা, রেশন তোলার চিন্তা না হয় এবার আপনি বাদই দিলেন। আমাদের মত ছেলে-পিলেরা থাকতে, আপনাদের মত বিদ্বজন বাজারের থলি হাতে ভীরমি খাবেন, সেটা কী মেনে নেওয়া যায় স্যার?
গোলঞ্চবাবু : বা: এই তো হলো ইয়াং টার্কের মত কথা, আরে বাবা তোমরাই তো দেশের ভবিষ্যত, দশের আশা। বোসো বাবা বোসো, ইয়ে পঞ্চা এক কাপ চা নিয়ে আয় বাবা, বিস্কুটের ছাড়া। তা বাবা অনাদি, তোমার দুটো স্যাম্পেল কবিতা রেখে যাও, সামনের মাসের ম্যাগাজিনে বিভু মিত্তিরের লেখা বাদ দিচ্ছি; তেনার ভারী পাখনা গজিয়েছে কী না।দেখি সেইখেনে তোমার লেখা যদি একটা চালান দিয়ে দেওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment