এই ছিলুম। এই হাপিস।
বাবার চাকরি, বাবার ভোট, মা’র হাতের পরোটা, মার ভোট, দাদার ক্রিকেট, দাদার ভোট।
আমার কলেজ, আমার সদ্য
একুশ, আমার হরিণ মাংস, আমার ভোট।
আমার বন্ধুরা, আমার
বন্ধুটি। আড্ডা-গপ্প-শয়তানী। আমাদের এক রাশ ভোট।
আমার বিদেশ ঘুরতে যাওয়ার
স্বপ্ন,
সুইজারল্যান্ড বা সিংগাপুর। আহ, আর আমার ভোট’টি।
বাবা বলতেন, আমি পড়াশোনা শেষ করে নিজে চাকরি করে বিদেশ
ঘুরে আসবো। বাবা-মা’কেও ঘুরিয়ে আনবো। তিনটি ভোট, সেজে-গুজে
বিদেশ ঘুরে আসবে।
মা বলতেন;
আমার বর আমায় বিদেশ নিয়ে যাবে। অন্য একটি পরিবার। অন্য একগুচ্ছ ভোট।
বন্ধুটি বলতো “আমি তোমায় বিদেশ দেখাবো, দুর্দান্ত সব ল্যান্ডস্কেপ্স, মন মাতানো শহর; প্রযুক্তির বিস্ফোরণ। সমস্ত”। একটি অসহায় সহ-পড়ুয়া ভোট। নাদান ভোট।
“ঠিক সে নহি পড়েগি, তো ফরেন যায়েগি ক্যায়সে বেওকুফ?”- অঙ্ক’র স্যার বলতেন। এই সেইবার অংকে দুম করে ছিয়ানব্বই পেয়ে বসলাম। স্যার কে
বললাম, আর পাঁচটি বছর যেতে দিন; আমার
সঙ্গে দ্যাখা করতে হলে বিদেশে আসতে হবে আপনাকে।
কেউ কেউ বিরক্ত হতেন আমার বিদেশ যাওয়ার নেশায়; “ কেন? কী নেই আমাদের দেশে ?”
ব্যাপারটা সত্যি, কী নেই আমাদের দেশে?
প্রযুক্তি, বাড়ন্ত জি-ডি-পি, ক্রিকেট
ওয়ার্ল্ড কাপ জয়; কী নেই ? সবই আছে।
শুধু ভয় পাওয়াটা যে কেনো এমন অভ্যেস হয়ে গেছিলো। কিসের ভয় ?
ট্রেনে,
বাসে, মেট্রোতে উঠতে,
বাজারের ভিড়ে,
ধর্মীয় স্থানগুলোর জটলায়,
যে কোনও মানুষের ভীড় কে ভয়।
কে বা কারা এই প্রত্যেকটি ভীড়ে লুকিয়ে থেকে আমার
ওপর হামলে পড়তো ?
গা ঘিনঘিনে কথা কানে ভেসে আসতো, কখনো লোলুপ দৃষ্টির ময়লা
বুকে-পিঠে ছড়িয়ে পড়তো, এবং কখনো নোংরা কিছু হাত খামচে ধরতো
আমার শরীর।
মা বলতেন আমার নিজের ইজ্জত নিজের হাতে; আর কারুর দায় নয়। ট্রেনে-বাসে তো এমনটি হবেই;
লোক-জানাজানি হোক; এমন ভাবে রাস্তায় যেনো কোনও চিত্কার না
করে ফেলি; তাতে নাকি আরও অসম্মান; এমনটা তো হয়েই থাকে – মা বলতেন।
নিজেকে ঘেন্না লাগতো, কারা করে
এমনটা রাস্তায় ? কারুর ভাই ? বাবা ? তবে কী আমারও ভাই-বাবা....! ছি: , আমি ক্রমশ অবিশ্বাস
শিখেছিলাম। তাই ভাবতাম সব ছেড়েছুড়ে
বিদেশ ফসকে যাবো।
আজিব বাত দ্যাখো, যাদের প্রতি ঘেন্না এ দেশ ছাড়বো ভেবেছিলাম, তারাই আমায় বিদেশ পাঠাবার ব্যবস্থা করে দিলো। সেই অন্ধকার লোক-গুলোর
মধ্যে থেকে কজন আমায় এমন ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেললে, যে গোটা দেশ এবং মাননীয় ভারত
সরকার হাত তুলে নিলে : বলে দিলেন তার যে আমায় সুস্থ করা তাদের কম্ম নয়। স্নেহশীল ভারত সরকার আমার সমস্ত চিকিত্সার খরচ
বহন করলেন, এমনকি আমায় নিয়ে গেলেন সিংগাপুর; এবং এরই ফাঁকে কাদের ওপর যেনো লাঠি-চালালেন, জল কামান হাঁকলেন; হারামজাদা লুম্পেন গুলো নাকি সরকারকে
পথ দ্যাখাতে গেছিলো। রাসকেলগুলো কী দেখতে পায় না যে আমাদের পিতাসুলভ সরকার বাহাদুর কী প্রবল “ঠিক
হ্যায়” সম্রাজ্য-স্থাপন করেছেন এ মহান দেশে ?
এবং আমাদের সংবেদনশীল শ্রী
শ্রী মিডিয়া প্রভুগন আমায় নতুন নতুন নাম দিলেন, আরোপিত সেই নামে ভরিয়ে দিলেন
খবরের ভাঁড়ার, টি-আর-পি আকাশ কে ফালাফালা করে দিলো।
আমার পরিবার নাকি আমার চিকিত্সায় ভিষন খুশি
ছিলেন, মিডিয়া এবং
মাননীয় সরকার এমনটি জানালেন। সেলাম।
আমি নাকি সিংহীর হৃদয় নিয়ে লড়াই করে গেছি, আমি ভিষন সাহসী, নির্ভীক ও অদম্য; মিডিয়া এবং মাননীয় সরকার এমনটি
জানালেন। সেলাম। বিশ্বাস করুন আমি এমন অদম্য হতে চাইনি।
বিশ্বাস
করুন আমি ভিষন ভয় পাই সেই লোকগুলো কে, আর ওই অবিচলিত সরকার-বাহাদুরকে।
আমি তো শুধু বাঁচতে চাইছিলাম। প্রতিশোধ নয়, সমাজ
সংস্কার নয়। ওই ভেণ্টিলেটরে শুয়ে
যেটুকু সময় আমি ভাবতে পেরেছি; আমি শুধু বাঁচতে চেয়েছিলাম। না, কোনও ‘অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট’
বার বার করে দিতে আমার মন চায়নি। বাঁচতে হবে, বাঁচতে
হবেই। মা আমি বাঁচবো, বাবা আমি বাঁচবো, দাদা প্লিজ...আমি একটু বাঁচবো।
না: , আমি
বাঁচতে পারলাম না। ইন্ডিয়া কী বেটি বলে আপনার কেউ পার পেতে পারলেন না। আমার মৃত্যুর দায় আপনাদের
সব্বাইকে নিতেই হলো।
আপনাদের তবু বোনটি, মেয়েটি প্রতিবাদ করার জন্যে
রইলো, সরকারের ভোট রইলো; আমার মা-বাবা’টা বড় এক হয়ে গ্যালো। যাক।
একটাই ভালো ব্যাপার ঘটে গ্যালো জানেন; ওই অন্ধকার মানুষগুলোর
অত্যাচারে এবং মহানুভব সরকারের স্নেহে আমার বিদেশ-ভ্রমণটা অন্তত হয়ে গ্যালো।
সিংগাপুর। আহ: কী চমত্কার শহর; ছবির মত। না, আমি দেখতে পারলাম না।
বাসের ভীড়ে যখন কেউ আমায় খামচে ধরতো, কান্না আসতো। ভাবতাম; “এই পোড়া
দেশে যেন মরতে না হয়”।
ধন্যবাদ ঈশ্বর কে। অন্তত ভারতবর্ষের মাটির স্নেহ
বহন করে আমায় চলে যেতে হলো না।
4 comments:
ফেসবুক থেকে আসছি, সুহেল ব্যানারজির অনুবাদ হয়ে আপনার কাছে। কিন্তু হতাশ হলাম, সত্যি!
নির্ভয় বা দামিনী, যে নামেই ডাকুন না কেন, মেয়েটি একটা দেশকে এক করে দিয়ে গেল। একটা বিপ্লবের নেত্রীর, সে যত ছোট বিপ্লবই হোক না কেন, এত নৈরাশ্যপূর্ণ হলে মানায় না।
http://www.facebook.com/causepage1
This page urges to abstain from casting votes in any of the elections till we, the Indians, have a law enacting death penalty for rapists. Please view and opine.
বিদায় নারী বিদায়!
বিদায় নারী বিদায়!
Post a Comment