এদিকে
অনলাইন-সোস্যাল-বাজারি
পরিবেশে, জনৈকার সাথে জনৈক’য়ের অচানক আলাপ। ‘আপনি’-সম্বোধন ঝনাত করে সম-বয়স্কতা
ও সম-মনস্কতা আবিষ্কার করে এবং ‘তুই’ তে নেমে আসা। ঈষত
স্নেহ ও ডাকনাম বিনিময়। বন্ধু-সুলভ গদ্য কথা।
এমন সময় প্রশ্ন আসে পান-প্রীতির। বেবাক
সাড়া দুজনেরই। দুটো সপাট খালাসিটোলা ভ্রমণের ইচ্ছে মুখোমুখি মিলিত হয়। একে
অপরের মন চাপড়ে নেয়। বাংলায় গান মেলে, চোলাই
তালে।
মন-ছন্দ মিলে দুজনে স্বীকার করে যে
নেশা মদে নয়; সেবন-পরিবেশে
লুকিয়ে রয়েছে। অতএব একে অপরকে আর একটু বুঝতে; চিনে নিতে হবে একে অপরের
প্রিয় কোলকাতাইয়া-মাদক পরিবেশ’টিকে।
শুরু করলেন জনৈকা। নিজের প্রিয় মদ্য-ঠেকের
লিস্টি;
সবেকিয়ানা-সিক্ত-ব্রডওয়ে হোটেল থেকে
রুফ-টপ-রোম্যান্স-মাখা-ব্লু এন্ড বিয়ণ্ড থেকে সাহেবি-স্মার্ট-রুচি-রঞ্জিত-অলিপাব হয়ে
অন্য মেজাজের সঙ্গীত-সহ নেশা ছড়ানো ট্রিন্কাস পর্যন্ত
; ছিমছাম ঝকঝকে পরিশীলিত সুর, প্রত্যয়ের রিমঝিম।
; ছিমছাম ঝকঝকে পরিশীলিত সুর, প্রত্যয়ের রিমঝিম।
এ কেমন মদ্য-প্রীতি যুক্ত কলকাতার ভদ্র-বাবু, যিনি শহরের এমন পান-তীর্থগুলিই ভ্রমণ করেন নি ? শিউরে উঠলেন জনৈকা।
বিবেকানন্দ-সুলভ আশ্বাস নিয়ে নিজের
প্রিয় মদিরালয়ের আখ্যান মেলে ধরলেন জনৈক। নিজের অপত্য-মদ্য স্নেহ কে কেউ আড় চোখে দেখে
চুকচুক করবে, এমনটা
তো মেনে নেয়া যায় না। জনৈক মেলে ধরলেন মদ্য-অভিজ্ঞতা ডালি :
উত্তর কলকাতার সাবেকী বাড়ির চিলেকোঠায়
মাঘের শীতে-রাত্রে; মাটির
ভাঁড়ে রাম-চুমুক।
ছাতের ওপরের জলের ট্যাংকে মই বেয়ে বন্ধু
সহ উঠে বিয়ার-অজ্ঞানতা-বরণ।
ফুটপাথিও-ল্যাম্পপোস্টের নিচে ইঁট পেতে
বসে, কলকাতার মধ্য-রাত্রি ও এক
অপরিচিত মুখ কে ভদকার প্লাস্টিক গেলাস হাতে চিনে নেওয়া; রাত জুড়ে।
জনৈকা অপ্রতিভ হয়ে জানান দিলেন যে এই পান-অভিজ্ঞতা-সুখ’গুলি থেকে তিনিও বঞ্চিত।
জনৈক ও জনৈকা তখন অনলাইন যুক্তি-গুছোতে
ব্যস্ত; কী
ভাবে একে অপরের মদ্য-পরিবেশজনিত অভিজ্ঞতার
অভাবগুলি যৌথ-কার্যক্রমের মধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া যায়। ঠিক হলো যে তার দুজনে সুনীল-শক্তি
সুড়সুড়ি সম্বলিত খালাসীটোলায় দেখা করবেন এবং একে অপরের অভিজ্ঞতা বিকাশের স্বার্থে যথাযত
প্ল্যান হাঁকবেন।
ওদিকে
ব্রহ্মা দেখিলেন ইহা এক মহাফাঁপর। দুই
মাতাল যৌথ ভাবে জ্ঞান-অন্বেষণে বাহির হইলে মর্ত্তলোক নিশ্চিত ধ্বংস পাইবে। দুই
মাতালের মিলিত ও সুব্যবহারে শাণিত জ্ঞান-শক্তি;
নারায়ণ ও মহাদেবের যৌথ শক্তি
হইতেও তীব্র- এমন সত্যটি ব্রহ্মা বিলক্ষণ জানিতেন। কিন্তু
এই মর্মান্তিক সত্যটি তিনি বেদ বা অন্য কোনও শ্লোক মাধ্যমে উহার উল্লেখ করেন নাই;
পাছে মাতালরা তাহা জানিয়া প্রতি নিয়ত উত্পাত করিয়া বেড়ায়। যখনই কোনও দুইটি মাতাল
জ্ঞান-অন্বেষণের স্বার্থে জোট বাঁধিতেন, ব্রহ্মা আগ বাড়াইয়া কোনওভাবে
তাহাদের জোটে ব্যাঘাত ঘটাইতেন।
জনৈক-জনৈকার জ্ঞান-বিনিময় অভিসারে বিঘ্ন
ঘটাইতে তথা মর্ত্তলোক’কে
এ যাত্রা বাঁচাইয়া দিতে ব্রহ্মা ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করিয়া খালাসীতোলার বাংলা মদের
আসরটি জ্বালাইয়া খাক করিয়া দিলেন। কিছু মানুষে ভাবিলো আপদ চুকিলো। কেউ বা এই ভাবিয়া অস্থির হইলো যে;
দ্যাখো সরকারের তরফ হইতে যথেষ্ট দেখভালের অভাবে এমন পবিত্র পিঠস্থানটি শর্ট-সার্কিটের
আগুনে বিনষ্ট হইলো ; তাহারা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করিয়া রাজ্য মাথায়
করিলো।
খালাসি-বিযোগে জনৈক ও জনৈকা
এমন ভাঙ্গিয়া পড়িলেন যে তাহারা প্রতিজ্ঞা করিলেন যে কখনোই আর একে অপরের সহিত দেখা করিবেন
না।
ব্রহ্মা হাঁপ ছাড়িয়া, ঘাম মুছিয়া; মিচকি হাসিলেন।
No comments:
Post a Comment