ঠিক সন্ধ্যের মুখে। আজকাল লোডশেডিং এমনিতে হয় না, আজ হটাত্। অন্ধকার রাস্তা ঘেঁষা চুপড়ি
আঁধারে ব্যালকনি। টুপটাপ ঝড়ে চলেছে শীত। গায়ের শাল, শরীরে লাক্স ও ঠোঁটে বোরোলীন মিলে মধ্য-বয়স্ক
জানুয়ারীর মায়া-বসন্ত। বউটি হাওয়া; কোনও এক পার্লারে দেহ-লালনে। আমার হাতে রয়েছে ফাঁকা কফির
কাপ ও কোলে রয়েছেন ঘুপচি অন্ধকারে অসহায় ভাঁজ হওয়া মুজতাবা। বেশ। বেশ।
পকেটে রয়েছে মোবাইল। এখনই চুপুক করে কাউকে ফোনে
ডাকতে পারি, ঝুপুক
করে একটু ফেসবুকে উঁকি মারতে পারি। চালিয়ে
দিতে পারি এফ-এম; ,মিহি হিন্দী সুর বা কোন রেডিও জকির কোদাল-ধার মস্করায় নিজেকে বলতে পারি;
লোডশেডিং
আর আমাদের একা করতে পারে না।
এও ভারি নাজুক হিসেব। আজকাল একা হওয়া যায় না। বাথরুমেও খবরের কাগজের ধর্ষণ
নিমকি হাসে, মহা
মুস্কিল। হাল-ফ্যাশন আনন্দবাজার’কে কমড-পণ্য বানিয়ে ছেড়েছে। একা আর থাকতে দেয় না দুনিয়া।
ছেলেবেলায় লোড-শেডিং হলে ঠাকুমাকে জাপটে বসে থাকতাম; একা থাকতে তখন ভরপুর ত্রাস। ঠাকুমা জড়িয়ে ধরে গুণগুণে-গান
গাইতেন “বাপরে নিমাই আমার, যাইয়ো না যাইয়ো না”। আর নিমাই!
হাল
জমানায় ওসব নিমাই-তস্য নিমাই সব লটকে যেতেন জয়েন্ট-এণ্ট্র্যান্স/আই-আই-টি’র খেলে। শালা হিউমানিটি যাক মেট্রোর
নীচে; কেরিয়ার
বাঁচলে বাপের নাম।
এখন একা থাকা অসম্ভব। অফিসে একা ঘুর-ঘুর করলে
বস ভাবেন টিমম্যান নয়, বাড়িতে একা থাকলে বউ ভাবে অন্য প্রেম করছে,
পার্কে
গিয়ে একা বসলে পাড়া-পাবলিক ভাবে বউ-খেদানো মাল; লে হালুয়া। নিজের নিজেকে নিয়ে থাকাটাই
পাপ।
দিল্লাগী মওকা। বউ পার্লারে। লোডশেডিং, টিভি নেই-ইন্টারনেট-ফোন-কেতাব তামাম বাদ। আমি
একা। এই ব্যালকনি আমার হিমালয়; আমি শ্রীশ্রী পচাবাবা।
আমি ছেলেবেলার রথের মেলা ভাববো, আনমনা-খেউড় করবো, ভূপেন স্যারের কানমলার রেওয়াজি-স্বাদ
মনে আনবো, গায়ের শালের কোনা দাঁটে কাটবো। এবং
সর্বোপরি, ইচ্ছে মাফিক কিচ্ছু ভাববো না।
আমিও বেড়াল নয়, এ মুহূর্তও শিকে ছেড়া লোডশেডিং’য়ের নয়। ঘরের টিউব-বাতি আর বউ’য়ের কলিং বেল, এক সাথে বুকে ছ্যাত করে উঠলো।
3 comments:
বংপেন-এর কলমে পুষ্পবৃষ্টি হোক। এমন করে প্রাণের কথাটা লিখতে পারে বলেই না এই ভদ্রলোকের লেখা এত প্রিয়।
আরও আসুক তন্ময়।
khasha!
:)
Post a Comment