বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে তৈয়ার হওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার
নয়। পাক্কা তিন মাসের মহাকাশ-Cruise। অনন্তবাবুর কাছে এ এক হিল্লে ব্যাপার। দেড়-খানা গ্যালাক্সি
জুড়ে প্রমোদ ট্যুর। নন্দী-ট্র্যাভেলস চমত্কার ডিসকাউণ্ট অফার করেছে। এই মাগ্গির বাজারে
এত সস্তার এই মহাকাশট্যুর টা মিস করার মানে হয় না।তাছাড়া বেশ কিছুদিনের ছুটি জমে
ছিলো। বে-থা নেই, ঝাড়া হাত-পা। দেড় বছরের মধ্যে রিটায়ারমেন্ট, এই তো ঘুরে নেওয়ার সময়। মিল্কি-ওয়ে
ছাড়া অন্য কোনও গ্যালাক্সি আজ পর্যন্ত দেখা
হয়নি অনন্তবাবুর; শেমফুল। দু খানা বেঢপ সুইট-কেস আর একটা ঝোলা ব্যাগে সমস্ত
জিনিষ-পত্তর ধরে গ্যাছে। দুগ্গা বলে হাউই-ট্যাক্সি ধরে সিধে গিয়ে হাজির হলেন টলিগঞ্জ
এয়ার-বোর্ন সিটির নতুন এই ভাসমান টারমাকে।
***
কাঁচের
১৭ তলা নন্দী-ট্র্যাভেল স্পেশ্যাল মহাকাশ-ক্রুজ-ক্র্যাফ্ট’য়ে মৌজ করে বসে আছেন অনন্তবাবু। কিউবিকেলের
দ্বিতীয় বেডের সঙ্গীটি এখনো আসেন নি। কী মুস্কিল। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্রুজ যাত্রা
শুরু করবে যে। লোকে এত দেরি যে কেন করে। একবার মনে হলো যে আর হয়তো কেউ আসবেন না। একা
পুরো কিউবিকেল জুড়ে থাকতে পারবেন ভেবে মন্দ লাগছিলো না অনন্তবাবুর, তবে তিন মাসের ভ্রমণে একজন রুম-মেট
পেলে সুবিধে হয়; এটাও একটা ফ্যাক্টর।
ক্রুজ-ক্র্যাফ্ট
ছাড়তে যখন ঠিক আধ-মিনিট বাকি, তখন কিউবিকেলে হুড়মুড় করে
ঢুকলেন অনন্তবাবুর কিউবিকেল সঙ্গী। তাড়াহুড়োর চোটে ভদ্রলোকের বেদম হাঁপাচ্ছেন।
-“
আমি মৃদুল খাসনবিস”,
কোনও ক্রমে বলে হাত মেলালেন
ভদ্রলোক।
-“
আমি অনন্ত মুখুজ্জে। তেষ্টা পেয়েছে ?”
-“ হ্যাঁ, এক-দুটো
জলের বড়ি পেলে ভাল হতো”
অনন্তবাবু টেবিল থেকে জলের বড়ির শিশি বাড়িয়ে দিলেন মৃদুলবাবুর দিকে। শিশি থেকে দুটো বড়ি মুখে
চালান করে তৃপ্তিতে রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন মৃদুল বাবু। তারপর অনন্তবাবুর দিকে চেয়ে
শুধোলেন;
- “ বিয়ণ্ড গ্যালাক্সি কি
আপনার ফার্স্ট টাইম ?”
- “ হ্যাঁ,
আপনারও?”,
অনন্তবাবু
প্রশ্ন করলেন।
- “না, বেশ কয়েকবার হয়ে গ্যালো, শেষ গেছি টুয়েন্টি ট্যু হান্ড্রেড নাইন্টি
সেভেনে”
- “আপনার ক্রুজ-ক্র্যাফ্টে আসতে এত দেরি
হলো? আর একটু হলেই তো বেরিয়ে যাচ্ছিলো আর
কি ?”
- “আর বলবেন না মশায়, আকাশে গিজগিজে জ্যাম, তার মধ্যেও শ্যামবাজার থেকে রাসবিহারী
পর্যন্ত ফ্লাই করে ফেলেছি, এমন সময় খেয়াল পড়লো ইসবগুলের কৌটো আর
কাসুন্দির বোতল দুটোই ফেলে এসেছি। আমার ইসবগুল আবার স্পেশ্যাল, ছোট-শালা বাগনান থেকে মাসে মাসে পাঠিয়ে
দেয়; ওইটে ছাড়া আমার মুভমেন্ট কিছুতেই খেলতে
চায় না বুঝলেন। আর এই তিন মাস জুড়ে বাইরে থাকবো; ভাজাভুজির সাথে মিসেসের
নিজের হাতের কাসুন্দি থাকবে না; এমনটা তো ভাবতেই রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছিলো। অগত্যা! গ্যালাক্সি-ক্রুজ মিস হয়
হোক, টাকা গচ্ছা যায় যাক; ইউ-টার্ণ নিয়ে সোজা শ্যামবাজার। কাসুন্দির
বোতল আর ইসবগুলের কৌটো হাতে দে ছুট; কপাল জোরে পেয়ে গেলাম ক্রুজ-ক্র্যাফ্টটা”
1 comment:
Uuuuuuufffff fatafati
Post a Comment