নেতাজীপল্লী নব বালক সংঘ। এলাকার তরুণ-তুর্কি তথা মধ্যমনি’দের পাড়া-তুতো পার্লামেন্ট। দুর্গা-পুজো, শীতলা পুজোর মেলা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যে, একটি রক্ত দান শিবির, একটি বস্ত্রদান উত্সব এবং একটি কাঙালি ভোজন আয়োজন করে থাকে প্রতি-বছর। অবশ্যই এর সাথে থাকে একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট, একটা একদিনের ‘বিরাট’ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা এবং দুটি ক্যারম টুর্নামেন্ট।
ক্লাবের সেক্রেটারি বলাদা’র বাবা জগন্নাথ সমাজপতি সদ্য এম-এল-এ হওয়ায় ক্লাবের জাঁক দ্বিগুন
হয়েছে। ক্যাশিয়ার হুলোদা আর ব্যাজার মুখে সর্বক্ষণ বসে থাকেন না। ক্লাব-ঘরে এসেছে
নতুন কালার টিভি, দ্বিতীয় ক্যারাম বোর্ড।
আধুনিক কেতা মেনেই নব-বালক
সংঘেরও রয়েছে কোর-কমিটি। কোর-সভ্যদের মধ্যে রয়েছে সেক্রেটারি বলা-দা, আড়তদার বিভুতিবাবুর পুত্র ও ‘রিসোর্স’ শ্রীমান বাপ্পা, ক্যাশিয়ার হুলোদা, উঠতি পার্টি-কর্মী এবং প্রাক্তন হাত-বোমা বিশারদ গুলে এবং লিটল-ম্যাগিও কবি
নবারুন ওরফে নবা।
নতুন বছরে কোর-কমিটির ফুলকপির-সিঙ্গাড়া আর কড়া কফি সহ
বৈঠক একটা ট্র্যাডিসনের মধ্যে পড়ে। যথারীতি বছরের প্রথম শনিবার, ক্যারামের আসর ভেঙ্গে
যাওয়ার পর,
ক্লাবঘরে সন্ধ্যে বেলা বসেছে কোর-কমিটি।
আলোচনার সার-বস্তু কীভাবে আমার কাছে এসে পৌছলো সেইটে
বলে কাউকে বিব্রত করতে চাই না। আমি শুধু সাজিয়ে দিলাম সেদিনের নব-বালক সংঘের
কোর-কমিটিও আলোচোনাটা।
বলাদা : “ উপেন ময়রার সিঙ্গাড়ায় আজকাল ফুলকপি খুঁজতে
হলে লালবাজারের কুত্তা লাগাতে হবে, হিউমান নাকে ধরা পড়বে না এমন সিঙ্গাড়ার ট্রেস”
নবা: “ ইয়ে বলাদা, এ মাসের ফুটবল টুর্নামেন্টটা তো
ক্যানসেল হয়ে গ্যালো, মাঠ পার্টি নিয়েছে সভা
করবে বলে। কিন্তু কিছু একটা না করলেই নয়। ইজ্জতে
মরচে চড়ছে।“
বলাদা: “হ্যাঁ, এমনিতেও একটা নতুন কিছু করা দরকার
আমাদের। ওই শেতলা পুজোর মেলা আর রক্তদান ভারী এক ঘেয়ে হয়ে গ্যাছে"
হুলোদা: “ইয়ে, ফাণ্ডে বেশ রোখড়া আছে বটে, গতবারের দুগ্গাপুজোয় চাঁদা ভালোই
ম্যানেজ হয়েছিল। শুভেনিয়ারের টাকা আনটাচড রয়েছে”
বাপ্পা: বহুদিন মাল খাওয়া হয় না।
গুলে: ইভেন্ট অরগানাইজ করতে চাইছি আমরা ? এ আর এমন কী। এই তো স্বামীজির দেড়শো নম্বর
জন্মদিন আসছে।
আমাদের পার্টি থেকে কলকাতায় বিশাল সভা করা হচ্ছে স্বামীজিকে ইয়াদ করে। টলিগঞ্জের পাগলিউ খ্যাত
নায়ক দেবেন’কে
আনা হচ্ছে সে অনুষ্ঠানে পাবলিক কে বিবেকানন্দ’য়ের ওপর মোটিভেট করতে। ব্যাপক খরচ হচ্ছে। চাইলে আমরাও তেমন কিছু
করতে পারি।
বলা: বিবেকানন্দ’র জন্ম ? দেড়শো বছর ? বা: , আইডিয়া মন্দ নয়। একটা ইয়ূথ-ফ্লেভার আছে।
বাপ্পা: শেষ সেই কবে মাল খেয়েছি বলো তো আমার সবাই
মিলে গুরু ?
নব: হিল্লে আইডিয়া। কী বলিস হুলো ?
হুলো : বিবেকানন্দ ব্যাপারটা
পাবলিক খাবে,
তাছাড়া পাড়ার হাবড়া গুলো বহুত পরেশান করে কালচারাল কিছু ডিসপ্লে করার জন্যে।
বলা: আই থিঙ্ক আমাদের বিবেকানন্দ’য়ের জন্মবার্ষিকী পালন করা উচিত্।
জনগণ
কী বলে ?
বাকি চারজন এক সাথে : “ আলবত”
বলা: “ জিবে প্রেম ব্যাপারটা ফোকাস
করে কিছু করতে পারি”
হুলো: “ গোটা পাড়া কে ডেকে পোলাও
মাংস খাওয়ালে হয় না ?”
বলা: “ কনসেপ্টটা জিবে প্রেম, জিভে প্রেম নয় গাধা”
হুলো: “ জিব মাত্রই জিভ বিশিষ্ট”
বলা: : “ সিরিয়াস ভাই সকল”
নব: “ আমি বলি কী। আমাদের এমন কিছু করা
উচিত যা আগে কেউ করেনি”
বাপ্পা: “ মাল খাওয়ার
ব্যাপারটা....”
বলা: “ বলে যা নবা”
নব: “ বিবেকানন্দ কী বলেছেন ? গীতা-টিতা পরে পড়লেও
হবে। আগে ফুটবল খেলো; শরীর বাগাও।এই থিমে এগিয়ে.....”
হুলো: “থিম ? এটা পুজো প্যান্ডেল নাকি ?”
নব: “ থাম হুলো, আইডিয়া টা আগে প্লেস করতে দে। আমি বলি কী, এই যে নরেনদা, আই মিন স্বামীজি, ফুটবল এবং শরীর চর্চা
এত বিশ্বাস করতেন, সেই লাইনে আমরা যদি কিছু করি ?”
বলা: “ ফুটবল টুর্নামেন্ট ? যোগ শিবির ?”
বাপ্পা: “ মদ্যপান ?”
নব: “ তাতে আর নতুন কী ভাইয়েরা ? আমার মাথায় যে আইডিয়া খেলছেতা
করলে আমরা গিনেস বই পর্যন্ত পৌছে যেতে পারি। ফুটবল-ও-ডাম্বেল-বিতরণ
অনুষ্ঠান। পাড়ার কচি ছেলেদের
জন্যে ফুটবল আর তরুণদের জন্যে ডাম্বেল। নরেনদা এটা শুনলে কেঁদে ফেলতেন আনন্দে, স্যাডলি, উনি আজ আমাদের মধ্যে
নেই”
বলা: “তোর হবে নবা, তোর কবিতার বই এক সময় লোকে কিনে
পড়বেই। আমার সমর্থন আছে; ফুটবল-ও-ডাম্বেল বিতরণ অনুষ্ঠান, নব-বালক সংঘ’য়ের নাম টেলিগ্রাফ থেকে
এ-বি-পি-আনন্দ তক পৌছে যাবে। যাবেই। বাকি রা কী বলে ?”
সবাই এক সাথে : “ ফুল সাপোর্ট”
বাপ্পা: “হুইস্কি খাওয়ার ব্যাপারটা
কী হলো?”
বলা: “ ইয়ে হুলো, ক্যাশে কত রয়েছে”
হুলো: “ যথেষ্ট, আমরা এই অকেশনে হাজার-কুড়ি
ছাড়তেই পারি।“
বলা: “সাবাস, এইবারে আয় খরচের একটা ফর্দ করে ফেলা
যাক”
হলো।
পাঁচ মাথা মিলে, বিবেকানন্দের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী
পালনের তুমুল প্ল্যান হলো; “ ফটবল ও ডাম্বেল বিতরণ অনুষ্ঠান”।
খরচের একটা খসড়া লিষ্টি তৈরি হলো:
মঞ্চ-সজ্জা : ৩৫০০ / -
প্রধান অতিথির যাতায়াত, ফুলের স্তবক : ৫০০ /-
মাইক : ১০০০ /-
খুচরো খরচ : ১৫০০ /-
মিষ্টি-বিতরণ : ৫০০ /-
ডাম্বেল-বিতরণ: ৫০০০/-
ফুটবল বিতরণ : ৩০০০/-
কোর-কমিটির আনন্দ-ডিনার : ৫,০০০ ( বিরিয়ানী : ১০০০/ - , কাবাব : ১০০০ / - , রোগনযোশ : ৫০০ /-, হুইস্কি-সোডা-ইত্যাদি : ২,৫০০/- )
জয় বিবেকানন্দ।
(ওপরের ছবিটি এই url থেকে নেওয়া : http://www.srijan.asia/blog/ )
1 comment:
Haaa haaaa..darun tana 5 min hanslam!
Post a Comment