Wednesday, February 20, 2013

বনধ থাকুক

বনধ কে যারা গা-জোয়ারি গাল পাড়েন, ইতিহাস তাঁদের চাবকাবেন; এমনটাই আশা। অফিসে বসে সলিট্যায়ার খেলার চেয়ে দুপুরের ভাত ঘুম ঢের ভালো।  মুখে আপনি যাই বাতেলা ঝাড়ুন, নিজের হৃদয় হাতড়ালে টের পাবেন যে বনধ আসলে হিসেবি-ব্লাউজের-সুন্দরী-পরনারী বই আর কিছু নয়।  
  
সব চেয়ে দুঃখের বিষয় যে বনধ-শিল্প বাঙালি আজও সঠিক সুরে বাঁধবার চেষ্টা করলো না। বনধ যেন লিটল ম্যাগাজিনের কবিতা; আঁতলামো করে খিস্তি মেরেই খালাস। বনধ নাকি ইকনমি, জি-ডি-পি, শিক্ষা-স্বাস্থ সমস্ত ইস্যুতে ব্লেড চালায়। আরে ধুর; দেশের পর দেশ সেনাবাহিনী পুষে ফতুর হয়ে যাচ্ছে আর যত গলা-শুকনো কান্না শুধু বনধ’য়ের বেলায়। বনধ হলও হাফ-শহীদ-চাকুরি’বাজেদের বুকের ভেতরের ব্যালকনির হাওয়া; খল-নলচে জুড়ে না হয় খেলুক একটু।  

বনধ-সংস্কৃতি বরং একটু সুসংহত করে তোলবার সময় এসেছে। অমুক-চেতনা সপ্তাহ, তমুক-জাগরন পক্ষ গোছের বেফালতু নেত্য না করে; জাতীয় বনধ সপ্তাহ পালন করা হোক। পালা করে দেশের তাবড় রাজনৈতিক দলগুলো বনধ ডাকবেন। পার্টির বনধ ভলেন্টিয়াররা রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়বেন বনধ সম্বন্ধে পাবলিককে আরও সচেতন করে তুলতে। মোরে মোরে ওয়ার্ক-শপ করে লোককে শেখানো হোক কি ভাবে বনধের দিন রাস্তা জুড়ে ক্রিকেট ফুটবল খেলতে হবে, অফিস-কারখানার গেটের সামনে জমায়েত করে কি ভাবে থিয়েটার করতে হবে, কি ভাবেই বা বিভিন্ন পার্টির বনধ-মাস্তানি-কমিটি’তে নাম লেখানো যাবে।

রাজ্যের বনধ-মন্ত্রি রাস্তায় কোনও মিনিবাসে আগুন জ্বেলে বনধ-সপ্তাহের উদ্বোধন করতে পারেন; পেছনে রি-মেড রবিন্দ্রসঙ্গীতের কোরাস – “ বাস জ্বেলে দাও, বাস জ্বেলে দাও, বাস জ্বেলে দাও, দাওওওওওওও...”। এর পর সমস্ত রাজনৈতিক দল গুলো এক এক করে আয়োজন করবেন এক দিনের বন্ধ। রাজ্য জুড়ে উদযাপিত হবে বিভিন্ন উৎসব ও আনন্দ-খেলা; যেমন বনধ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ছোটদের জন্যে বসে-টায়ার-পোড়াও প্রতিযোগিতা, থিম ভিত্তিক সড়ক-অবরোধ ইত্যাদি। খুব ভালো হয় যদি প্রত্যেক বনধ বা বনধ-বিষয়ক উৎসবগুলোর জন্যে আলাদা আলাদা স্পনসর পাওয়া যায়। বেশ একটা আই-পি-এল হাওয়া লাগবে; কার্বন-কামাল-গাড়ি ভাংচুর বা সিটি-মোমেন্ট অফ রেল-অবরোধ। আহাঃ।

সপ্তাহ শেষে, যখন সমস্ত দলের বনধ শেষ, তখন শুরু হবে সেরা বনধ-ডাকিয়ে রাজনৈতিক দল নির্বাচনের পালা। এটা ডেমোক্রেসির যুগ, ভোটাভুটি ব্যাপারটা মানুষ বেশ খায়। অতএব “সেরা কে”,  এই ব্যাপারটা ঠিক করা যেতে পারে এস-এম-এস ভোটের মাধ্যমে। আপনার প্রিয় বনধ-ডাকিয়ে রাজনৈতিক দল কে জেতাতে হলে আপনাকে এসএমএস করতে হবে <পার্টির নাম>স্পেস<সেরা-বন্ধবাজ> আর তা পাঠিয়ে দিতে হবে অমুক নম্বরে। পার্টি নেতারা নিজে এসে এস-এম-এস এপিল করবেন; তাতে খেল জমবে। সেরা বনধ-ডাকিয়ে রাজনৈতিক দল পাবেন বছরে আরও দুটি এক দিনের বনধ ডাকার সুবর্ণ সুযোগ। রাজ্য-জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বনধ-প্রিয় জনতার জন্যে বনধ গুডীজ; যেমন আই-লাভ-বনধ লেখা টি-শার্ট, টুপি, বিবেকানন্দের বানী লেখা শুনশান বনধ-রাস্তার পোস্টার; ইত্যাদি।

এ সব কিছু হলে দেখবেন; টি-আর-পি,স্পন্সর,এন্সিলারি আউটপুট ইত্যাদি সব মাল-কড়ি মিলে বনধ-ইন্ডাস্ট্রি আপনাদের ইকনমিতেও টু পাইস ঢালবে। ল্যাদখোর পাবলিকও বছরে কদিন ভাত ঘুম দিয়ে হাঁপ ছাড়বে।
      

Tuesday, February 5, 2013

বসাসুর

-          আগরওয়ালের এপ্রুভালটা করিয়ে এনেছো ?
-          কালকে করবো স্যার।
-          এম কে আর ওয়ার্কস’য়ের ফাইল টা ক্লিয়ার করা হয়েছে ?
-          ভাবছি সেটা আর এ মাসে ধরে লাভ নেই স্যার।
-          মান্থলি রিপোর্ট ?
-          এই যাঃ, ভুলে গেছি।
-          তুমি অফিস আসো কি করতে ? বাড়ি থাকলেই পারো, মাস মাইনেটা আমি না হয় মানিঅর্ডার করে দেবো।
-          ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার থাকতে অমন মহাভারতের আমলের কথা বলবেন না তো! মানি অর্ডার শুনলে লোকে হাসবে।
-          মুখে মুখে তর্ক ?
-          গলার আওয়াজ তুলছেন কেন ? পাঁচ ফুটের মধ্যেই তো দুজনায় আছি।
-          বেয়াদপ!
-          খিস্তি মারলে কিন্ত বস-টস বলে তোয়াক্কা করবো না স্যার।
-          থ্রেট করছো ?
-          হুমকি, চমকানি; যা বলবেন।
-          আমি তোমার প্রমোশন আটকে দেবো।
-          আপনার প্রমোশনে আমি ইয়ে করি মাইরি।

Monday, February 4, 2013

প্রেম-টেম

প্রেম করলেই হলো ? হু উইল হ্যান্ডেল দ্য পূর্বরাগ গবেট ?

তারপর একই ইয়ার-ফোনের দুই প্রান্তে দুই জাতের দুইটি কানের মিলন; এফ এমে কাল্পনিক গাছতলার গান,  কাদা আর প্যাচপ্যাচে আষাঢ়ে গরম মিলে গপ্পিয়ে রোম্যান্স।  

তারপর রয়েছে আধো-সোহাগ, নরম-আদর। কান কামড়ানো আব্দার, দেলখোসার কেবিন-ঘর।

এরপর ? এরপর মনে রাখুন ; 

প্রেম করেই যদি ইনসান খালাস হতে পারতো তবে খোদা নিশ্চিন্তে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে বসে পাঁচ টাকার চানাচুর মিক্সচার খেয়ে দুপুর কাটাতেন। লাভ-মেকিং বিনে প্রেম করা পূর্ণ হবে কি প্রকারে জনাব ?

এত সবের মাঝেই এক ড্রপ বেমালুম চোনা – বিয়ে।

তারপর পূর্বরাগের ধনুষ্টঙ্কার, প্রেমের আমসি, রোম্যান্সের নাভিশ্বাস, সোহাগের চুলকুনি, আদরের ইস্তিরি আর লাভ মেকিং’ইয়ের হোম-ওয়ার্ক।


ঈশ্বর স্বয়ং বাঙালি। 

আব্বেয়ার

আব্বেয়ার!

কুল হও, ইংরেজিতে খিস্তি মেরে ভুত ভাগিয়ে দাও উও ভি সহি কিন্তু শালা-শূয়রের বাচ্চা হেঁকে ইজ্জতের শাকালু করে ফেলো না।

হিপ হও, প্রেমিকার কানে  “ উফ, সেক্সি বাটস”  বলে মূর্ছা যাও সেলাম পাবে, কিন্তু “তুমুল নিতম্ব” বলেছো কি সোজা হিল-জুতো-পেটা।

বেমতলব

দুনিয়াটাই শালা বেমতলবে চলে।

বেমতলবে গুলতে হওয়ার সময়ই গুলতের মা সটকে যায়। বেমতলবে গুলতের বাবা রোজ চুল্লু খেত আর মালের সাথে চাখনা হিসেবে পুচকে গুলতে’কে আড়ং ক্যালাতো। বেমতলবেই গুলতের বাবাটাও অকালে চুল্লু শহীদ বনে গেল। বিনা কিসি মতলব কা গুলতে খিদের জ্বালায় আস্তাকুঁড়ে পড়ে থাকা পচা ভাত আর সিগেরেটের পোড়া ফিল্টার একসাথে চটকে খেত; রুতি-তরকারি গেলা বড় বাপের বাচ্চারা মালুমই পাবেনা সে মণ্ডের কি অপরূপ সোয়াদ।

সাবান-দানি

সাবান-দানি হয়ে বেঁচে থাকতে মন চায়। প্লাস্টিকের নধর কোমর বাঁকানো দেহ। বেলেল্লা লুঙ্গি মাফিক সর্বক্ষণ আধ-খোলা ঢাকনা। গায়ে বাহারি কারুকাজ, অথচ দেহের অন্য প্রান্তে ফুঁটোর মেলা – যা কিছু জলজ ও অস্থির; টুপটাপ করে ইজেক্ট করে যাওয়া। বুক-পেট ভর্তি ফেনাময় সম্ভাবনা।

সাবানেও ফ্যানা, বেধড়ক মদ গিলেও গ্যাঁজলা ওঠা ফ্যানা; দুইই সাফ করে – দেহ, হৃদয়, লিভার, ভবিষ্যৎ।

মাতাল হলেই নিজেকে সাবান-দানি ভেবে ডন ক্যুয়োটে হয়ে যাই। পেটের মদে সাবানের খুশবু- ল্যাভেন্ডার। লিভারে ফুটো গুলো স্রেফ সাবান-দানির পারফরেসনস।  

Friday, February 1, 2013

বইমেলার এখন তখন

একদিকে আপনার পেটে প্রবল ক্ষিদে, অন্যদিকে আপনার চারিদিকে হিমসাগর, জলভরা, পাঠিসাপটার পাহাড় – আপনি দেখছেন, নাড়া-চারা করেছেন কিন্তু কিচ্ছুটি মুখে পুরতে পারছেন নাডায়েবেটিস! আপনার জিভের ডগায় চিনির কনা আর মাটির বুকে প্লাস্টিক প্যাকেট একই ব্যাপার 

অবশেষে আপনি একটি বিস্বাদ ক্রিম-ক্র্যকার বিস্কুট, চিনি-হীন গরম জল-মাফিক চায়ে চুবিয়ে মুখে চালান করলেনতারপর ঢেকুর তোলার চেষ্টা করে বললেন “এই তোফা”

কলেজ ছাত্র হিসেবে যখন বইমেলায় ঘুরঘুর করতে যেতাম তখন ওই পেটের ক্ষিদের বদলে থাকতো বইয়ের নেশাযাবতীয় বুক-স্টল গুলো ছিলো হিমসাগর-জলভরার পাহাড়আর বাদলা-হাওয়া খেলে যাওয়া পকেট ছিলো ডায়েবেটিসএক ঠোঙ্গা বাদাম ছিলো আমার সেই ক্রিম-ক্র্যকার বিস্কুট

বয়েস বেড়েছেচাকরি এসে পকেটকে পেশী-বহুল করে তুলেছেউমদা জিন্দেগিকিন্তু কোথায় ক্ষিদে স্যার! বসয়ের ফাইল আর বউয়ের শপিং কে তোল্লাই দিতে দিতে, অম্বল অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে- কোন ব্যাটার সাধ্য বই-ক্ষিদে বয়ে বেড়ায়। আর বই কিনেই বা কি হবে জনাব, আমি দেখবো টিভি জুড়ে মুন্নির কোমর-দুলুনি আর আমার শো-কেস বুক-ভর্তি বঙ্কিম-শঙ্খ-বিভুতি নিয়ে হুপিং কাশবে।

সব গেজে গ্যাছে গুরু। এখন শুধু অপেক্ষা কবে আসলি ডায়েবেটিস এসে কলজের হাতে বাটি ধরিয়ে দিয়ে যাবে।