এটা ভাঁওতার যুগ।
মার্কেটিঙের যুগ। নেকু বাঙালি সেজে থাকলে কিস্যু হওয়ার নয়। এর কাঁঠাল অন্যের মাথায়
ভেঙ্গে দিন গুজরান ; এই হল মন্ত্র। দুনিয়ার সামনে নিজেকে একটা প্রডাক্ট হিসেবে
জাহির না করতে পারলেই চিত্তির। ফিলিপ কোটলার সাহেব পই পই করে বলে দিয়েছেন যে কোনও পণ্য
কেতার সঙ্গে বেচতে হলে প্রয়োজন সঠিক বিপণন মিশেল অর্থাৎ চারটে P, যথা Product, Price,
Place এবং Promotion।
প্রথম পি ;
প্রডাক্ট বা পণ্য আপনি নিজে স্যার – বউ’য়ের কাছে আপনি মাকাল ফল, ছেলেমেয়ের কাছে
দুধেল গাই, বসের কাছে গাধা। অকাট্য।
দ্বিতীয় পি ; প্রাইস
বা পণ্য-মূল্য। অর্থাৎ আপনি যে সক্কলকে নিজের রক্ত জল করে পরিষেবা দিচ্ছেন তাতে
আপনার টু পাইস ইনকাম আছে কি না। শুনে রাখুন; আপনি সবার মন জুগিয়ে চলতে পারলে আপনার
স্ত্রী আপনাকে বাপান্ত করবেন না, ছেলেমেয়েরা ছিঁচে কান্না জুড়বে না আর আপনার বস
খিস্তি মেরে আপনার গুষ্টির তুষ্টি করবেন না – এবসেন্স অফ নেগেটিভ ইজ দ্য অনলি
পজিটিভ স্যার। এই বাপান্ত, ছিঁচে কান্না আর খিস্তি থেকে রেহাই পাওয়াই আপনার
খাটুনির একমাত্র মূল্য।
তৃতীয় পি ;
প্লেস। অর্থাৎ সর্ষে কে পেষাই কোথায় করা হবে। ভেবে হয়রান হবেন না স্যার; সর্ষে
আপনিই। আপনার পেষাই চলবে বাড়িতে, অফিসে, মিনিবাসে; সর্বত্র। আপনাকে রগড়ে যে ফোঁটা
ঝাঁঝালো তেল বেরোবে; তা দিয়ে আপনারই কলজে ডিপ-ফ্রাই হবে।
চতুর্থ এবং
সবচেয়ে মারাত্মক পি ; প্রোমোশন। অর্থাৎ
নিজেকে একটু ফেস্টুনের মত টাঙিয়ে ধরুন আপনার খদ্দেরদের কাছে। বউকে
বলুন “ আই লাভ ইউ সোনা”; তাকে বুঝিয়ে বলুন এই মাগ্যির বাজারে ‘সোনা’ ডাকটিও কি
অমূল্য। ছেলেমেয়েদের সামনে নিজেকে একটা
চলমান মানিব্যাগ বলে তুলে ধরুন, নয়ত ইজ্জতের আশা করবেন না। আর নিজের বসের সামনে নিজেকে
পেশ করুন পনের শতকের মধ্য-ইউরোপের বাজারে বিক্রি হওয়া আফ্রিকান দাস’দের রেপ্লিকা
বলে- তবেই সময়মত উন্নতি ঘটবে। প্রোমোশনে একটু কোথাও ঝুলিয়েছেন কি “ বেআক্কেলে,
ন্যাকা ভুত, অকর্মণ্য” এমন যাবতীয় পোষ্ট-মডার্ন বাক্য-ক্যালানি সহ্য করতে হবে।
শুধু “ মা, মা গো” বলে আরাম মাখা দীর্ঘশ্বাস
ভাসিয়ে দিতে কোনও কোটলারের হিসেব-কিতেব মাথায় রাখার দরকার নেই।
No comments:
Post a Comment