ডাকনাম খোকন হলে কি হবে, খোকনবাবু রীতিমত কলপে এবং চ্যবনপ্রাশে জীবনযাপন করেন। সেদিনকেও চ্যবনপ্রাশের চামচ সবে মুখে চালান করেছেন, ঠিক তখন খবরের কাগজের একটি বিজ্ঞাপনে তার নজর আটকে গেল।
দেখলেন এক
মাদ্রাজি কোম্পানি টেলিফোনে অর্ডার নিয়ে বাড়ি বাড়ি মই সাপ্লাই করে। বাঙালি বাঁশের
মই নয়, ফাইবার ল্যাডার। সেই মই নাকি ইচ্ছে মত ছোট-বড় করে নেওয়া যায় । কোনাকুনি,
লম্বালম্বি যে কোন ভাবে বাড়ির দেওয়ালে লাগানো যায়। মইয়ের মাথায় উঠে অনায়াসে হেলান
দিয়ে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যেতে পারে; এতটা সুরক্ষিত ব্যবস্থা তার । খোকনবাবুর মনে
হল যে সিলিং ফ্যানের ঝুল ঝাড়তে বা বুক শেল্ফের একদম উপরের তাকে গিয়ে কেরদানি করতে
বা বাড়ির পুরনো ইলেকট্রিক মিটারের রিডিং পড়তে তাকে যে হিমশিম খেতে হয়, এই ফাইবার
মই জুটলে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে। এমনকি ঘরোয়া স্পাইডারম্যান বনে
যেতেও কোনও অসুবিধে নেই। এমন মজবুত মই যে খোকনবাবুর মনে হল যে এবার থেকে সকাল বেলা
চা আর আনন্দবাজার হাতে ফাইবার’র মই’ইয়ের
মাথায় গিয়ে কিছুক্ষনের জন্য বসে থাকলে বেশ হয়।
বিজ্ঞাপনে দেখলেন
একটা ফোন নাম্বার দেওয়া রয়েছে, যেখানে মিস্ড কল দিলেই মই-কোম্পানি থেকে কল আসবে।
হাত ঘড়িতে সময় দেখলেন খোকনবাবু, রাত সাড়ে দশটা। এত রাত্রে মিস্ড কল দেওয়া যায় ?
সাহস করে একটা মিস্ড কল করেই ফেললেন; পয়সা তো যাচ্ছে না।
দু মিনিটের মধ্যে
খোকনমামা এস-এম-এস পেলেন। মাদ্রাজি কোম্পানিটি তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে টুয়েন্টি
ফাস্ট সেঞ্চুরি ফাইবার ল্যাডারের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করার জন্যে। এবং তার পাঁচ
মিনিটের মাথায় সোজা চেন্নাই থেকে একটা ফোন কল্।
খোকনবাবু ভাবলেন
এই বেলা দাম জেনে নেওয়া যাক। কিন্তু তিনি কিছু জিজ্ঞেস করবার আগেই এক রোবট গোছের
মাদ্রাজি ভদ্রলোক দমাদম প্রশ্ন শুরু করলেন।
হাজারো সওয়াল।
খোকন বাবুর ভালো
নাম কি।
খোকন বাবুর বয়স
কত।
তার বাড়ির
ঠিকানা।
তার মোবাইল
নাম্বার।
তার ল্যান্ডলাইন
নাম্বার।
তার ব্লাড গ্রুপ।
চাকরি করেন না ব্যবসা।
অফিসের ঠিকানা।
অফিসের ফোন
নাম্বার।
খোকনবাবু ক্রমশ
অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন।
_ “ ইয়ে...এবাউট
দ্য ল্যাডার...” , খোকনবাবু মিউ মিউ করে বললেন। গিন্নী ভাত বেড়েছে বোধ হয়।
মাদ্রাজি সেলস্ম্যানটি
খোকনবাবুকে তেমন পাত্তা দিলেন না। প্রশ্নমালায় চলে গেলেন নির্বিকারে।
একে একে জানতে
চাইলেন তার বাড়ি না ফ্ল্যাট।
কয় তলা।
তার বাড়ির
দেওয়ালের উচ্চতা।
কত দিনের বাড়ি।
কত কাঠা জমির
ওপর।
তার পরিবারে কয়জন
আছে।
সেলস্ম্যানটি
দমে যাওয়ার পাত্র নন।
“ ইন এ মিনিট সার”
বলে টুসকি মেরে ফের সেই মাদ্রাজি-বাবু চলে গেলেন প্রশ্ন বৃষ্টিতে।
প্রশান্তবাবুকে
বাধ্য হয়ে বলতে হল;
তার চাকরি কত দিনের।
এর আগে অন্য
কোথাও তিনি কোন চাকরি করেছেন কি না।
তার মাইনে কত।
তার কয়টি ব্যাঙ্ক
একাউন্ট।
তার কাছে ক্রেডিট
কার্ড আছে কি না।
অবশেষে সারেন্ডার
করলেন প্রশান্তবাবু। করুন গলায় বললেন “ স্যার, মাই গুড স্যার। প্লিজ একটু লিস্ন
টু মি স্যার। আই থিংক মাই ব্যাম্বু ল্যাডার ইজ বেটার দ্যান ইওর ফাইবার ল্যাডার।
এনিথিং বিয়ন্ড মাই ডিয়ার ব্যাম্বু ল্যাডার ইজ গোয়িং টু বি এ বাঁশ। থ্যাঙ্ক ইউ”
বলে দুম করে ফোন
কেটে দিয়ে নিজের মোবাইল সুইচ্ অফ করে হাঁফ ছাড়লেন খোকনবাবু।
No comments:
Post a Comment