বাথরুমে এত রকমের
সাবান সাজানো থাকে যে নির্মল রোজই খেই হারিয়ে ফেলেন। নতুন কোম্পানি থেকে সাজানো
ফ্ল্যাট দেবে তা বেশ জানা ছিল কিন্তু তার বাথরুমের চেকনাইও যে এমন হবে, সেটা আগে
ভাবা যায়নি। বউ-ছেলেকে তাড়াতাড়ি অন্ডালের বাড়ি থেকে এখানে নিয়ে আসতে হবে। এখন কত
তাড়াতাড়ি দীপা ও বুম্বা এখানকার সোসাইটির আদব কায়দা রপ্ত করতে পারে সেইটেই দেখবার।
বাথরুমের ক্যাবিনেট
খুলে মনে ভরে প্রসাধন সম্ভার দেখতে থাকেন নির্মল। হাত ধোয়ার সাবান এক, মুখ ধোয়ার
সাবান অন্য। বাকি শরীরের ধোয়ার জন্যে
অন্তত চার রকমের সাবান – লিকুইড আর বার মিলে। লেবেল পড়ে নির্মল বুঝতে পারেন একেক সাবানের
মর্ম একেক রকম; একেক রকম স্কিনের জন্যে একেক চিজ্, নিজের চামড়ার রকমটা এতদিনেও
জানা হয়ে ওঠেনি নির্মলের। স্ক্রাব বলে কিছু একটা ব্যাপার রয়েছে যা দিয়ে বোধ নিজেকে
বেশ রগড়ে পরিষ্কার করা যায়।
চুলের জন্যেও হরেক
আয়োজন; শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, মাস্ক, সিরাম। আর তাছাড়া যে কতশত রকমের শিশি রয়েছে
গুনে বা পড়ে শেষ করা যায় না। শাওয়ারের
ঠাণ্ডা জলের সাথে নির্মলের শিরদাঁড়ার ঘাম মিশে যায়।
ফেনায় ভেসে যেতে যেতে
নির্মল গাঙ্গুলি তার এই অচানক বিশ্বজয়ের তড়িৎ সিঁড়িগুলো মনে করতে থাকেন। থ্রিল।
নতুন সেক্রেটারির ব্লাউজের ঝিলিক খেলে যায় মনে। থ্রিল। বস যে শ্যাম্পেন খাওয়ালে
তার এক গেলাসের দাম নাকি থ্রি অ্যান্ড হাফ্ থাউজ্যান্ড রুপিজ। থ্রিল।
মৃদু অস্বস্তিটা যায়
না, সেটাও বেশ টের পান নির্মল। গোটা শরীরময় জল সাবানের ঝাঁপাটা সত্যেও একটা
চ্যাটচ্যাটে ভাব। ছেলেবেলায় বাবা মার্গো সাবান আনতেন। সবজে সাবান, নিম তিতকুটে
গন্ধ। তবু নির্মলের ভারি প্রিয় ছিল।
বাথরুমের দরজা খুলে
গলা বাড়িয়ে নির্মল হাঁক দিলেন।
-
রাজু ? রাজু ?
-
জি সাহাব। আউর এক তাউলিয়া
চাহিয়ে কেয়া সাহাব ?
-
না। মার্গো সাবান এখনও বাজারে চলে ? জানিস তুই ?
-
জি নহি পতা হুজুর।
-
এক কাজ কর। চট করে নিচের
মুদির দোকানে গিয়ে খোঁজ করে আয় দেখি। মার্গো সাবান। মনে থাকবে ? যা দেখে আয়।
-
শর্মার দুকানমে সাহাব ?
-
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই ছোট মুদীর
দোকানটায়।
-
উ দুকানমে আপকা লায়েক সামান
নহি মিলেগা সাহাব।
-
আরে যা বলছি তাই কর গিয়ে।
এটা থাকলে ওর দোকানেই থাকবে। চট করে যা। ভেজা গায়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি। মার্গো সাবান
থাকলে এক জোড়া নিয়ে আসিস। টেবিলের ওপর খুচরো টাকা রাখা আছে। জলদি, যা।
No comments:
Post a Comment