Thursday, October 3, 2013

চিন্তার ব্যাপার


লাঞ্চ হয়ে গেছে দেড়টার মধ্যেই। এই সময়টা দেবুবাবু একটু জিরিয়ে নেন। অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা জর্দা-পান, একটু আনন্দবাজার, অ্যাকাউন্টস’য়ের সামন্তের সঙ্গে চাট্টি কথা, একটা গোল্ডফ্লেক। অতঃপর ফের টেবিলে ফিরে এসে  ফাইল মন্থন।

বারান্দাটা চওড়া। কিন্তু ভারি স্যাঁতস্যাঁতে। ব্রিটিশ আমলের বাড়ি কি না। সতের  বছর আগে জয়েন করেছেন দেবুবাবু; কিন্তু এর মাঝে অফিসে একবারও চুনকাম হয়েছে বলে মনে পড়ে না। পাঁচতলার এই বারান্দা থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর ব্যস্ততা দেখতে দেখতে দিব্যি সময় কেটে যায়। আনন্দবাজারের খেলার পাতায় পৌঁছে , পান চিবোনো শেষ করে এবং গোল্ড ফ্লেক ধরিয়ে; দেবুবাবু টের পেলেন যে সামন্ত ছোকরা এখনও আসেনি। আজ সামন্ত কামাই করেনি, কারণ গুপ্তা অ্যান্ড কোম্পানির ফাইলটা নিজের হাতে পৌঁছে দিয়েছিল সকাল বেলা।

হরিদেব সামন্ত বয়েসে দেবুবাবুর চেয়ে বছর দশেকের ছোট। বছর খানেক আগে জয়েন করে, আলাপ হয় অফিস ক্যান্টিনে। সেই থেকে দুজনের মধ্যে গুরুশিষ্য গোছের সম্পর্ক। অফিস পলিটিক্স থেকে বস ম্যানেজ করার উপায়; সমস্ত ব্যাপারেই সামন্তকে গাইড করে থাকেন দেবুবাবু। তাছাড়া প্রতিদিন দেড়টা থেকে দুটো; অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুজনের আড্ডাটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

পৌনে দুটোতেও যখন সামন্ত এলে না; তখন দেবুবাবুর খটকা লাগলো। সিগারেট বারান্দার কোনায় ছুঁড়ে ফেলে এগোলেন অ্যাকাউন্টসয়ের দিকে। সামন্তর টেবিল নজরে আসতেই দেখলেন যে সামন্ত মুখ গুঁজে ডায়েরিতে কিছু লিখে চলেছে।

চিন্তায় পড়লেন দেবুবাবু। ছোকরা কি অসময়ে কাজ করা আরম্ভ করলে নাকি ? ম্যানেজমেন্ট লাই পেয়ে যাবে যে। পই পই করে দেবুবাবু ছোকরাকে বুঝিয়ে চলেন যে অফিসে আসার পরে আধ ঘণ্টা , লাঞ্চের পর আধ ঘণ্টা আর ছুটির আগের আধ ঘণ্টা; কাজ করতে নেই, কাজ করতে নেই, কাজ করতে নেই – করলে  কেরানী জাতের অমঙ্গল। বেশ কথা শুনে চলা ছেলেই তো মনে হত। সেই ব্যাটা এই অসময়ে মন দিয়ে কলম পিষছে দেখে গা পিত্তি জ্বলে গেল দেবুবাবুর।
দুড়দাড় করে এগিয়ে গেলেন সামন্তের টেবিলের দিকে।

-      কই হে সামন্ত, ভারি কাজ করছ দেখছি। বড়বাবু সুড়সুড়ি দিয়েছেন নাকি ?
-      না দেবুদা, অফিসের কাজ নয়।

-      আহ: , বেশ। নিশ্চিন্ত হলাম। তা এত মন দিয়ে কি লেখাপড়া হচ্ছে ভায়া ? সোশ্যালিস্ট পোয়েট্রি-টোয়েট্রি নাকি?

-      ইয়ে না, তা নয়।

-      তবে? দুপুরের আড্ডা ছেড়ে টেবিলে বসে কলম চালাচ্ছ, জরুরি কিছু তো বটেই। পরকীয়া প্রেম পত্র নাকি ?

-      না দেবুদা। আসলে বউ দু মাস পর বাপের বাড়ি থেকে ফিরছে আগামীকাল। বলে রেখেছে মাসকাবারি বাজার করে না রাখলে আমার কপালে দুঃখ আছে। তা, এর আগে বাজার যতবার করেছি বউই ফর্দ করে দিয়েছে। সে চলে যাওয়ার পর হারধনের মেসেই খাওয়া দাওয়া চালিয়েছি এ দুমাস। সেই সকাল থেকে বসে রয়েছি ডায়রি খুলে দেবুদা। চাল, মুগ ডাল আর বাতাসা ছাড়া কিস্যু মাথায় আসছে না। এদিকে ফি মাসে বউ ইয়া লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দেয়। কি উপায় দেবুদা? যদি মাসকাবারি ম্যানেজ না করতে পারি তাহলে দু মাসের জন্যে এবার আমায় গা ঢাকা দিতে হবে।

-      হুম, মিনিবাসের ভিড় আর মাসকাবারি; এই করেই যৌবনের বাপের নাম খগেন হয়ে যায় হে। তাই তো বলি; আরথ্রাইটিস গেড়ে বসার আগে হিমালয়ে চলে যাও ভায়া। আজকের বাজারে; মাসকাবারির চেয়ে মাধুকরী ইজ আ ঢের বেটার অপশন।  

2 comments:

Abhishek Mukherjee said...

হক্‌ কথা।

Abhishek Mukherjee said...

হক্‌ কথা।