দিবাকর দু আঙুলের
ফাঁকে সাবধানে টেস্ট টিউবটাকে ধরে নাড়ছিলেন। আড়চোখে খেয়াল রাখতে হচ্ছিল স্টপওয়াচের
প্রতি। পাক্কা বাহাত্তর সেকেন্ড।
তারপর একটা চিমটে
দিয়ে টেস্ট টিউবটার টুঁটি টিপে বার্নারের ওপর ধরলেন। দিবাকরের কপালে বিন্দু বিন্দু
ঘাম, গরমের নয়, উত্তেজনার। এই ছোট্ট ল্যাবরেটরিতে এর আগেও বহু চমৎকার ঘটনা ঘটেছে;
কখনও তাঁর হাতে, কখনও বা তার সহকর্মী ইন্দ্রে’দার তত্ত্বাবধানে। তবে এই প্রথম
দুজনে এক সঙ্গে মাঠে নেমেছেন কারণ কাজটা তেমনই দুর্দান্ত। এই কম্পাউন্ড আবিষ্কার
হলে দুনিয়ার ভোল পাল্টে যাবে। এক সময় মনে হচ্ছিল কাজটা অসম্ভব। কিন্তু ভাগ্যিস
দুজনের কেউই হাল ছেড়ে দেননি। ব্রেক-থ্রুটা আসে গত পরশু সন্ধ্যে বেলা। কি ভাবে সেটা
বলাই বাহুল্য কিন্তু দুজনেই লাফিয়ে উঠেছিলেন। একটানা ত্রিশ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে তারপর
থেকে দুজনে কাজ করে গেছেন। এই সামান্য কিছুক্ষণ আগে ইন্দ্রদা গেছেন একটু ফ্রেশ হয়ে
নিতে।
বার্নারের ওপর মিনিট
তিনেক রাখতেই টেস্ট টিউবের ভেতরের মিশ্রণটি কালো ড্যালা থেকে পালটে দুটো স্পষ্ট
ভাগে দেখা দিল; একটা সবজেটে, অন্যটা গাড় লাল। চিমটে সহ টেস্ট টিউব হাতে না থাকলে
দিবাকর লাফিয়ে উঠতেন ইউরেকা বলে। একবার ভাবলেন ইন্দ্রদাকে হাঁক দেবেন। তারপর
ভাবলেন যে এক্সপেরিমেন্টের শেষ অংশটুকু সেরেই ফেলা যাক। তারপর ইন্দ্রদাকে ডেকে
ফাইনাল স্যাম্পেল দেখিয়ে হুল্লোড় করা যাবে।
টেস্ট টিউবের সবুজ-লাল
মাল-মশলা একটা কাঁচের পাত্রে ঢাললেন দিবাকর। তারপর দেরাজ খুলে নিয়ে এলেন ড্রপার ও
কাঁচের তিনটে শিশি। প্রত্যেক শিশি থেকে দুই ফোঁটা নিয়ে এই লাল-সবুজ কম্পাউন্ডে
মিশিয়ে দিলেই সেই মহার্ঘ বস্তুটি তৈয়ার হবে। দিবাকর দেরি করলেন না। দু ফোঁটা করে
কেওকার্পিন, তরল বোরোলিন ও নলেন গুড়
মিশিয়ে দিলেন সবুজ-লাল কম্পাউন্ডে।
সঙ্গে সঙ্গেই দিবাকর
হাঁক দিলেন “ হুররে ইন্দ্রদা, উই হ্যাভ ডান ইট! বাঙালির ডী-এন-এ তৈরি”।
No comments:
Post a Comment