Wednesday, December 11, 2013

অফিসার

জীবনে রয়েছে শুধু অফিস, মাছের বাজার আর মাস কাবারি। এর বাইরে সব ফাঁকি। যেদিন অফিস ফুরোবে; রেসিডিউ হিসেবে পড়ে রইবে শুধু ডায়াবেটিস আর ব্লাড প্রেশার। বউ, খোকা, বাবা, মা এ সবই ট্রান্সিটরি ব্যাপার। লাইফের নিউক্লিয়াস হচ্ছে অফিস। দিনে আট ঘণ্টা ঘুম, হাতে রইলে ১৬ ঘণ্টা। বাসে-ট্রেনে-বাথরুমে-বাজারে ৪ ঘণ্টা। হাতে রইলে বারো ঘণ্টা। এই ব্যবহারিক বারো ঘণ্টার মধ্যে বেবাক দশ ঘণ্টাই হজম করে নেয় অফিস। আর দু ঘণ্টা পরিবার- পরিজন – আত্মীয়স্বজন নিয়ে হাহাকার করে কি হবে ? অফিসই রামকৃষ্ণ।

বস’ও খেপচুরিয়াস, বউ’ও ডাইনোসরিও। বউ কে তোল্লাই দেব আর বস কে দেব পেল্লায় খিস্তি-সব, এ কেমন কথা ? ভেবে দেখলাম বউ কে যেমন ভাবে সামাল দিই, ঠিক একই ভাবে বস কে ম্যানেজ করতে পারলেই ল্যাঠা চুকে যায়।  

বস সেদিন বললে “ তোমার মার্কেট শেয়ার গোল্লায় যাচ্ছে হে, এমন গদাই –লস্করি করে চললে তোমার মুণ্ডুটি আস্ত থাকবে ভেবেছ ?” মনে মনে বস’কে বললাম- “ রেগে যেও না মাইরি, নেক্সট পুজোয় একটা বালুচরি। প্রমিস”।  ব্যাস অমনি রাগ গলে জল; বসের রাগ নয়,  আমার রাগ গলে জল।
ঠাণ্ডা মেজাজে বসের সমস্ত রাগ অ্যাবসর্ব করে নিলাম।

আমি খাটলাম, আর প্রমোশন পেলে পাশের টেবিলের সামন্ত। সামন্তর অফার করা জলভরা উত্তমকুমারের হাসি ছুঁড়ে গ্রহণ করলাম। সন্ধ্যাবেলা নিজেকে একটা দামি হাত ঘড়ি উপহার দিলাম বছরভর অফিসে মার-কাটারি কাজ করবার জন্যে। আমিই আমার ম্যানেজমেন্ট। নিজের পিঠ আমি নিজেই চাপড়ায়েগা।

সেদিন পিওন হরিহর বললে যে মাঝে মাঝে বস আর সামন্ত আড়ালে-আবডালে আমায় নিয়ে “ গবেট” বলে হাসাহাসি  করে। হরিহর কে একটা গোল্ডফ্লেক অফার করে বোঝালাম , “ তুই জানিস, মানুষকে হাসাতে পারার ক্ষমতা ইজ দি হাইয়েস্ট ফর্ম অফ সুপার পাওয়ার ? আমার বাড়ির লোক তো সর্বক্ষণ  তেলে-বেগুনে হয়ে রয়েছে; হামেশাই ডিম্যান্ড পেশ হচ্ছে- বাবা’র নস্যি নেই, মা’য়ের কোমরের ব্যথার মলম নেই, বউয়ের হিল তোলা চটি নেই, ছেলের পোকেমন টিশার্ট নেই। বাড়িতে তো আমায় দেখে কেউ হাসে না, শুধু গুরু-গম্ভীর সব দাবী ঝেড়ে চলেছে- এই নেই, সেই নেই, ওটা কর, ওখানে যাও, অমুককে সামলাও, তমুককে ধর। আমার এই অফিস টেবিল আর এই চেয়ারখানি তো আমার ওয়েসিস রে। তুই যখন আমায় চা-বিস্কুট দিস, নিজের গা থেকে কেমন সাহেব-সুবোর মত গন্ধ পাই। এই আমার মত এমন দামড়ার কথা ভেবে বস আর সামন্ত যদি একটু হাসতে পারে, তবে সেটা তো আমার অ্যাচিভমেন্ট, কি বলিস ?”

যাওয়ার আগে হরিহর   বিড়বিড় করে যে কাকে “ক্যালানে” বললে সেটা ঠিক ধরতে পারলাম না।  

1 comment:

Abhishek Mukherjee said...

বেশ সূক্ষ্ম।