টকটকে লাল সূর্য। ভোরের। লালচে কালো সমুদ্র। সূর্যের গালে আঁচিলের মত একটা
পাখির মেলা ডানা। দেশলাই বাক্সের ওপর এমন হলমার্ক মার্কা ছবি খুবই কম দেখা যায়।
তবে সেই টকেটকে সূর্যোদয়ের ছবি হার মানিয়ে যা চোখ টেনে নেয় তা হচ্ছে সেই
মেয়েটির চোখ যার হাতে দেশলাইটা ধরা আছে। সপাট তাকিয়ে মেয়েটি। বুকের মধ্যে ছ্যাঁত
যেটা লাগে সেটা দেশলাইয়ের বারুদের নয়; অন্য কিছুর।
ল্যাম্পপোস্টের কোমর আঁকড়ে ছিল দেশলাই বিজ্ঞাপনের পোস্টারটি আর পোস্টারের
সেই খুনে দৃষ্টির মেয়েটা। দু একটা যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের প্যাম্পফ্লেটের দাপটে দেশলাই
মডেলটির পেটের দিকটা রহস্যময় ভাবে বাদ পড়েছে।
ল্যাম্পপোস্টটা যে বেশ পুরনো তা
ফটোটা খুঁটিয়ে দেখেই মালুম হবে।
এসপ্ল্যানেডে তোলা। ফটোগ্রাফার
ধীমান দত্ত। নিউ আই ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মোমবাতির মত জ্বলজ্বল করছিল
ছবিটা।
নিউ আই ফটোগ্রাফি ম্যাগাজিনের কভার দিয়ে ঝালমুড়ির ঠোঙা ? ভাবা যায় ? ভদ্রলোক
মুড়ি চিবোতে চিবোতে হয়তো উদাস হয়ে এটাই ভাবছিলেন।
আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় এমন মুড়ি চিবুনো ভুঁড়ি-ওয়ালা মধ্যবিত্তের ছবি
সচরাচর দেখা যায় না। আজকের কাগজেও থাকার কথা ছিল না। নেহাত “মরা টেস্টে নায়ক ইডেনের
গ্যালারি” শিরোনামের ছবিতে, ইডেন গ্যালারির একটি পরিস্ফুট বিন্দু হয়ে আনন্দবাজারে
উদয় হয়েছেন তিনি।
~~~
শার্লক হোম চৌধুরী আনন্দবাজারের
প্রথম পাতাটা রবীন্দ্রনাথের সামনে মেলে ধরলেন।
-
এই ঠোঙা হাতে লোকটার
দিকে ভালো করে চেয়ে দেখুন মাই ডিয়ার পোয়েট। আর বলুন এই ভদ্রলোকের ব্যাপারে আপনি
কতটা কী আঁচ করতে পারছেন। এই যে, যে লোকটি একটি ঠোঙা হাতে গ্যালারিতে বসে। একটা পরীক্ষা
হয়ে যাক। মানুষ চিনতে কোনটা বেশি কাজে লাগে; আমার ডিডাকশন ক্ষমতা না আপনার কবিতা। হয়ে যাক ?
-
মুষ্টি যুদ্ধ শেষ
পর্যন্ত ?
-
কাব্যরসের ব্যর্থতা
সম্বন্ধে আপনার সম্যক ধারণা তৈরি করে দেওয়া আমার কর্তব্য বলে মনে করছি। বিশেষত,
আপনি যখন আমার নতুন সহ-ভাড়াটে। তাতে কো-এক্সিস্টেন্সে সুবিধে হবে।
- আগে বরং আপনার অবজার্ভেশগুলো শোনা যাক। আপনি এর সম্বন্ধে কী কী ডিডিউস করলেন শার্লক মশাই ?
-
কেরানী। লিভারের সমস্যা
আছে। কনিষ্ঠ সন্তান। বয়স চল্লিশ প্রায়। সম্প্রতি বাপ-মায়ের মধ্যে কাউকে
হারিয়েছেন। জুয়ার বদ অভ্যাস রয়েছে। সম্ভবত
চিংড়ি খান না। ব্যাঙ্কে বিস্তর পয়সা নেই তবে শহরের বাইরে কোথাও বেশ কিছু জমি জায়গা
রয়েছে। বিয়েথা করেননি। বিরহ ঘটিত কোনও কারণ নেই তাই বলে। ওহ, ছেলেবেলায় খুব সাঁতার কাটতেন। আমি যা যা
বললাম, তা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা এক ভাগও নয়। এবং আমার এক মাত্র অস্ত্র ?
যুক্তি। কী ব্যাপার রবীন্দ্রবাবু ? চুপ মেরে গেলেন যে ? ফ্যালফ্যাল করে আনন্দবাজারর
দিকে গোটা দিন তাকিয়ে থাকলেও আপনি কাব্যি বাগিয়ে ওই ঠোঙা হাতে ভদ্রলোকের ব্যাপারে
কিস্যুটি মালুম করতে পারবেন না। ওই ঠোঙাটা যে ঝালমুড়ির, সেইটা টের পেয়েছেন অন্তত ?
-
শার্লকবাবু, আমি যা অবজার্ভ
করছি; তা সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা এক ভাগও নয়। এই ভদ্রলোকের ঠোঙাটা মুড়ির কি না আমি জানি না,
তবে কেন জানি মনে হচ্ছে, ওই ঠোঙাতে টকটকে লাল সূর্য রয়েছে; লালচে কালো সমুদ্র
ছাপিয়ে ওঠা ভোরের সূর্য। আর সেই সূর্যর গালে আঁচিলের মত এক পাখির মেলা ডানা।
-
আপনাদের বাতেলা ঝাড়ার
ক্ষমতা অসীম।
3 comments:
এমন চমত্কার প্লট মাথায় আসে কী করে? খুব ভালো লাগল পড়ে?
@Kunatala :
এক কর্পোরেট ট্রেনিং'য়ে একটা পাজ্ল গেম ছিম। সেখানে কিছু বিচ্ছিন্ন ফটো টাইল্স'য়ের ভিতরের যোগসূত্র খুঁজে বার করাটাই ছিল 'গেম' ।
এবং সেখানে ব্যাপারটা খানিকটা এরকমই ছিল
:)
কুন্তলার ভাল লাগেনি। ও নিজেকে প্রশ্ন করেছে ভাল লেগেছে কিনা।
Post a Comment