প্রথম ও শেষ দৃশ্য
- দাদা, আমার পিছনে
টিকটিকি তুই লাগিয়েছিস ?
- সে জবাব কি আমি তোকে দিতে যাব ?
- আমার পিছনে টিকটিকি লাগাবি তুই, আর জবাব দেবে কি আমাদের বাবা
?
- নিজেকে আর নিজের সংসারকে বাঁচানো তো আমারই দায়িত্ব পিকু।
তুই নিজে বখে ক্ষান্ত হলি না, এখন আমার সর্বনাশ করতে চাস ?
- তোকে কাঠি করতে আমার বয়ে গেছে। উত্তরপাড়ার জমিটা আমায় লিখে
দে, ল্যাঠা চুকে যাক।
- শাট আপ।
- মুখ সামলে, আমি তোর চেয়ে বয়সে বড়।
- তাই বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস? বাপের পা চেটে ওই উত্তরপাড়ার
জমি তুই অন্যায় ভাবে বাগিয়েছিস।
- বাপটা একা আমার ছিল না পিকু।
- উইলটা পড়বার আগে অন্তত আমারও তাই ধারনা ছিল রে দাদা। হাউ
কুড আওয়ার ফাদার ডু দিস টু মি ?
- বাবার অমতে বাড়ি ছেড়ে ফোঁপর দালালি করবার সময় মনে ছিল না ?
- বাড়ি না ছেড়ে আমার কোনও উপায় ছিল না দাদা। এ বাড়িতে থেকে
থিয়াটারের কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল। তুই জানিস না সেটা ?
- নন-সেন্স। আমি নিজে তোকে আগলে রাখতাম। বাবা রাগ করতেন,
কিন্তু আমি ঠিক সামলে নিতে পারতাম। আর তুই ইডিয়ট শুধু নিজেই বাড়ি ছাড়লি তা নয়,
বিনি’টাকেও ফুঁসলে নিয়ে গেলি।
- বিনি স্বেচ্ছায় আমার সাথে গেছিল দাদা। ও বরাবরই ছোড়দা ছোড়দা
বলে পাগল হত। অ্যান্ড বিনি কুড সি যে আমার সঙ্গে তুই আর বাবা অন্যায় করছিস।
- তাহলে বিনির ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করেছিলি কেন তুই ?
নেহাত আমি ইন্টারফেয়ার করে বিনিকে তোর কবল থেকে বের করে এনে একটা ভালো বিয়ে না
দিলে; এতদিনে ভেসে যেত মেয়েটা।
- বিনি নিজেই বিয়েটা করেছিল দাদা। তাছাড়া বিনিকে তুইও আমার
বিরুদ্ধে ইন্সটিগেট করেছিলিস। থাক সে সব পুরনো কথা। সে ভারি টানাপড়েনের সময় ছিল।
নিজের ফ্রাসট্রেশন ওর ওপর চাপাতে গিয়ে আমি ভুল করেছিলাম; সেটা তো আমি অস্বীকার করি
না। কিন্তু দাদা বিশ্বাস কর, আমি দগ্ধে মরি অপরাধ বোধে। ও তো আমারও ছোটবোন।
- তোর সেন্টিমেন্ট তোর কাছেই রাখ। আর হ্যাঁ, আমি তোর পিছনে
টিকটিকি লাগিয়েছি। বাধ্য হয়েছি লাগাতে কারণ তুই আমার পিছনে গুণ্ডা লাগিয়েছিস।
- মিথ্যে কথা।
- মিথ্যে ? উত্তরপাড়ার জমিটার খালের দিকে হুলো মস্তান এসে
ঘাঁটি গেঁড়ে রয়েছে। হুলো মস্তান যে তোর খাস লোক সেটা আমি জানিনা ? ওই তিন বিঘৎ
জমির আশা তো আমি ছেড়েই দিয়েছি। তবে মন দিয়ে শুনে রাখ পিকু, তুই আর হুলো মিলে যতই
ষড়যন্ত্র করিস, আর এক ইঞ্চি জমিও আমি ছাড়বো না। প্রয়োজনে রাইটার্স’য়ে যাব। কিন্তু
তোর বাড়াবাড়ি আমি ঘুচিয়ে ছাড়বো।
- প্রথমত, বেশ করছি হুলোকে লাগিয়েছি। ও জমি আমার হকের।
উত্তরপাড়ার জমির এক ইঞ্চি তোর পাওয়ার কথা নয়। মা যাওয়ার আগে বার বার বলে গেছিলেন
যেন ওই জমি আমি পাই। আর দ্বিতীয়ত, ওই গোটা জমি আমি হাতড়ে ছাড়বো। তুই যত খুশি টিকটিকি
লাগা, রাইটার্সে গিয়ে হত্যে দিয়ে থাক। ও জমি আমি নিয়ে ছাড়বো।
- এসব করে তুই কি পাস পিকু ? আমি সব খবর পাই। তোর নিজের এত
অনটন চলছে। ছেলেটার পড়াশোনার খরচ ঠিক করে যোগাতে পারছিস না। এসব ছেলেমানুষি এখন
ছাড় না ভাই ?
- শোন দাদা, তোমার এই নাক গলানো অভ্যাসটা এখন অন্তত ছাড়। আমার
অনটন, আমার ছেলের পড়াশোনার খরচ নিয়ে ভেবে তোর গলা শুকোতে হবে না। দিনে দিনে তোমার
স্নবারি বেড়ে চলেছে।
- তোকে কিছু বোঝাতে যাওয়াই বৃথা।তুই যা খুশি করার কর, আমি যা
খুশি করার করবো।
- যদি আর একদিন তোমার টিকটিকিকে আমার পিছনে ঘুরঘুর করতে
দেখেছি...
- কি করবি ? হুলোকে লাগিয়ে খুন করবি ?
- প্রয়োজনে করবো। তুমি আমায় খুন করছো না ? প্রতি নিয়ত ?
অন্যায় ভাবে আমায় বঞ্চিত করে, আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে...
- গুণ্ডা লাগালি তুই, আর অন্যায় করলাম আমি ? বাবার উইলটা একটু
মন দিয়ে পড়ে দেখ না...
- উফ, উইল উইল। তুই থাক তোর উইল নিয়ে। আমি যা করবার করবো।
আমি চললাম। আই উইল টেক কেয়ার অফ ইওর টিকটিকি। আর ইয়ে, এই বাক্সটা তোর জন্যে
এনেছিলাম, রেখে গেলাম...
- মিষ্টির বাক্স ? কি ব্যাপার ?
- ভয় নেই। মিষ্টিতে বিষ নেই। বিষের চেয়ে গুণ্ডা ভালো।
- হঠাৎ মিষ্টি ?
- আজ। মানে ছাব্বিশে জানুয়ারি।। তোর, ইয়ে মানে তোদের, মানে
তোর আর বৌদির, আজ বিবাহবার্ষিকী না ? তাই আর কি। আমি চললাম।
- পিকু...
- কি ?
- খুব বুড়িয়ে যাচ্ছিস রে। চেহারাও কাঠ হয়ে যাচ্ছে তোর। তোর অ্যানিমিয়ার
প্রবলেমটার যথেষ্ট কেয়ার নিচ্ছিস তো ? তোর বউদি বলছিল নিয়মিত কুলেখাড়ার রস খেলে
নাকি...
- চললাম।
- আয়।
---সমাপ্ত---
বড় দাদার ভূমিকায় – ভারতবর্ষ
ছোট ভাইয়ের (পিকু) ভূমিকায় - পাকিস্তান
ছোটবোনয়ের (বিনি) ভূমিকায় - বাংলাদেশ
7 comments:
Awe-sadharon :)
Besh Valo laglo Dada !
ore pagol
Ore pagol :)
ore pagol
রূপকটা বেশ লাগল।
Onoboddo! Sobai jdi ato sohoj kahini ta sohoj bhabe bujhte parto bhai boner somporkota tikototae bhore thakto na.
Post a Comment