Tuesday, February 25, 2014

জীবনবাবুর কয়েক ঘন্টা

( বলে রাখি - এটি একটি ব্যাক্তিগত পোষ্ট ) 

জীবনবাবু বুঝতে পারছিলেন যে তাঁর নিঃশ্বাসের শনশন শব্দ কুড়ি হাত দূরে দাঁড়িয়েও কেউ বিশ্রী স্পষ্টতায় শুনতে পারবে। সর্দি নয়। বুকে জমা জল থৈ থৈ করছে।  তিরাশি বছর সময় হিসেবে যথেষ্টই, কিন্তু সামগ্রিক ব্যাপারটা তো আর মামুলি নয়।  ডাক্তার সামন্তর প্রেসক্রিপশন পড়তে তাঁর কোনও অসুবিধে হয় নি; কিডনি প্রায় পঁচানব্বই শতাংশ বিকল। ডায়লিসিসের ধকল সইবে না তা তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। ডাক্তারের সঙ্গে তাঁর তিন ছেলের কি কথাবার্তা হয়েছে তা অবিশ্যি তাঁর কানে আসেনি। বুকের ভিতর কেরোসিন ছড়িয়ে দেশলাই জ্বেলে দেওয়া দাউদাউ যন্ত্রণা; কথাবার্তা কানে আসবে কি করে ? তবে অদ্ভুতভাবে মগজ শান্ত রয়েছে। সমস্ত কিছু সুষ্ঠু ভাবে অ্যানালাইজ করতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না। ফিউ ডেইজ। বাট সারটেইনলি নট আ উইক।

অসুবিধে হচ্ছে যে পুরুষামিটা মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে জীবনবাবুর। আঠারো বছর বয়স থেকে স্কুল মাস্টারি আর সংসার ম্যানেজ করতে করতে পুরুষালী-নির্বিকার-পনা  বাড়াবাড়ি রকমের আয়ত্ত হয়ে গেছে। অভাব-দুর্যোগ সামাল দিয়ে; চার ছেলেমেয়ে মানুষ করতে করতে নার্ভ ঠাণ্ডা হয়ে পড়েনি বটে; কিন্তু সেন্টিমেন্টের বহিঃপ্রকাশের দ্বারটা প্রায় ক্লগ্‌ড হয়ে গিয়েছে।

Friday, February 21, 2014

জাতিস্মর

এ যে সামান্য Déjà vu নয় তা বনোয়ারী বেশ টের পাচ্ছিলেন। মুঙ্গেরে এর আগে তিনি বাপের জন্মে আসেননি। নেহাত অফিসের কাজে ছুটে আসতে হল। বিকেলের দিকে তেমন কোনও কাজ না থাকায় মুঙ্গের অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্লার্ক দীননাথ-বাবুর সাইকেল ধার করে একটু শহরতলি ঘুরতে বেরিয়েছিলেন তিনি।  

কিন্তু শহর-প্রান্তে এই ডোবা ঘেঁষা সবুজ তিন কোনা মাঠটুকুর পাশে এসেই এক ভুতুড়ে টানে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন বনোয়ারী। গঙ্গার ফুরফুরে নভেম্বরের হাওয়া সত্ত্বেও কেমন গরম লাগছিল তাঁর; বুকে চিনচিন। গত সেপ্টেম্বরে সাতচল্লিশে পড়েছেন, কিন্তু ব্লাড প্রেশার বা হার্ট-ঘটিত কোনও অসোয়াস্তি তাঁকে কখনও পোয়াতে হয়নি – তিনি বুঝতে পারছিলেন যে এই বুকে চিনচিন-ভাবটা অস্বাভাবিক। ঘামে শার্ট ভিজে গেছে তাও বেশ টের পাচ্ছিলেন বনোয়ারী। সাইকেল স্ট্যান্ড ফেলে দাঁড় করবেন সে শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছেন; কোনও রকমে সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়ালেন আর সাইকেলটা  শিথিল হয়ে লুটিয়ে পড়লো।
কিন্তু এই শারীরিক অস্বস্তি মাঝেই বনোয়ারী টের পাচ্ছিলেন তাঁর মনের ভিতর এক ভালো-লাগার তোলপাড় চলছে। ওই গঙ্গার ছপছপ শব্দ, ওই নরম মাটি, এই দেহাতি ঘাসের গোবর মাখা গন্ধ; ভীষণ আপনার মনে হচ্ছে। অদূরে দুখানা গরু ঘাস থেকে মুখ তুলে টলটলে চোখে বনোয়ারীর দিকে তাকালে।

Sunday, February 16, 2014

রবিবারের বৃষ্টি এবং ভাঁওতাগুলো

বন্ধুরা,


রবিবারের বৃষ্টি মানেই যদি খিচুড়ি হয় তবে ডাইনোসর মানেই স্পিলবার্গ। ওকে ? ওকে।

বৃষ্টি না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখতেন এবং তাঁর দাড়িও গজাত। আর না, রবীন্দ্রনাথের ফেউ-গিরি করতে ঈশ্বর বৃষ্টিকে সৃষ্টি করেননি।

আমহার্‌স্ট স্ট্রিটে হাঁটু জলে নৌকা নামানো আনন্দবাজারি ছবি স্রেফ মিউনিসিপাল ফেলিওর, রোম্যান্স নয়। এবং ভেনিসিও সারকাজ্‌মটি জীবনানন্দের আগেই এক্সপ্যায়ার করেছে।

ছাতে ভিজতে ভিজতে “ হাউ বিউটিফুল” বলে ধেইধেই করবার সময় মনে মনে কফ সিরাপটা দেরাজে না টেবিলের ড্রয়ারে আছে ভাবতে থাকাটা স্রেফ ক্যালানে মার্কা আঁতলামো।

স্রেফ বৃষ্টিকে চুমু খেতে কোল্ড স্টোরেজের বিস্বাদ ইলিশের ওপর মানিব্যাগ উপুড় করে দেওয়াটা কিছুতেই ট্র্যাডিশনাল কেতা বলে মেনে নেওয়া যায় না। পকেটের রক্তপাত হয় না বলে খুন কে খুন বলবো না ?

Wednesday, February 12, 2014

গুলির গল্প

একটি বন্দুকের গুলি মনের আনন্দে এগিয়ে যাচ্ছিলে। গায়ে দুদ্দাড় হাওয়া ঠেকছে, সে গাইছে “মামা বাড়ি ভারি মজা কিল চড় নাই”।

একটি টগর ফুল তাঁকে ফুট করে শুধলে – “ ভারি ফুর্তি দেখছি তোর বারুদের পো, কি ব্যাপার ? “
গুলি বললে – “ পুঁচকে এতোটুকু ঘরে ঘরে আটকে ছিলুম গো পিসি। ঘটাং শব্দে আচমকা দেখি দরজা খুলে গেল, আর টের পেলাম আমি দিব্বি উড়তে পারছি”। সে উড়ে চললে।

এক দানা মেঘের গুঁড়ো ওপর থেকে হাঁক পাড়লে “ এই খোকা, সামলে চল সামলে চল। অমন হুরমুরিয়ে চললে হোঁচট খেয়ে দাঁত ভাঙবি শেষে”
গুলি বললে – “ কেমন দুদ্দাড় চলেছি বল দেখি? হুই হুস হুই হুস। হুই হুস”। সে

Monday, February 3, 2014

বই-মেলার ব্যাপার-স্যাপার



এই টিভি ইন্টারনেটের যুগেও ছাপানো বই পাবলিক খায়। ভালোই খায়। অন্তত বইমেলার শনিবারের ভিড় পরখ করে আনন্দবাজার তাই বলছে। রবিবারের বইমেলা আরও দাপুটে ভঙ্গিতে সেইটেই প্রমাণ করলে। বই প্রতি অন্তত দেড় খানা মাথা আজ বোধ হয় বইমেলায় ছিল। সে একেবারে টেরিফিক কাণ্ড। বই মেলা চত্বরে পা রাখলাম এক পিতা-পুত্রের পিছন পিছন।
পুত্র ক্রমাগত ঘ্যান ঘ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলে – “ বাবা, ইট ইজ টু ক্রাউডেড হিয়ার। লেট্‌স গো ব্যাক”
বাবা ক্রমাগত ধমকে কাউন্টার করে যাচ্ছিলেন – “ গো ব্যাক মানে ? বই ইজ ইওর বেস্ট ফ্রেন্ড, এটা আর তুমি কবে শিখবে ? দিন দিন থ্যাবড়া গণেশ তৈরি হয়ে চলেছ, বই কে চিনতে শিখবে কবে ? বই মেলার ভিড় সাসটেইন না করতে পারলে বই ভালবাসবে কি করে ? কম্পিউটার গেমেই তোমার ঘিলু চটকে পাতুরি বানিয়ে ফেললে”।

***

বাহাত্তর নম্বর পাতায় পেজ মার্কটা রাখা ছিল। অর্জুন সাবধানে তিয়াত্তরে ল্যান্ড করলে।

***  

বইমেলার পড়ন্ত রোদে আরামবাগের উইং স্ট্রিপ্‌স। রিচি বেনো থাকলে পদ্য লিখতে পারতেন। পাশ থেকে ভেসে এল কথোপকথনের টুকরো –
-   “ গুরু, বই ছাড়া সারভাইভ করা যেত। কিন্তু মুর্গি না থাকলেই কেস”      
-   “বইয়ের পিডীএফ হয় কিন্তু কাবাবের হয় না। হুইচ প্রুভ্‌স যে কনসেপ্ট হিসেবে বইয়ের চেয়ে কাবাবের ইন্ট্রিনসিক ভ্যালু ও ভায়াবিলিটি বেশি"