Saturday, March 22, 2014

আসল জাদুর গল্প



এখন-১

ছয় দিন হয়ে গেল বাবা বাড়ি ফেরেনি। মা কেঁদে কেঁদে হয়রান। কিন্তু কাজের খবর বলতে কিচ্ছুটি নেই। ভয়ে, দুঃখে মা’র সাথে কথা বলা তো দূর, মায়ের কাছে ঘেঁষতে ভয় পাচ্ছে ওসাং।

সে জানে যে এ সমস্ত তার দোষেই হয়েছে। তারই দোষ। কিন্তু তাঁর কথা এখন কে বিশ্বাস করবে ? বাবাই যে নেই।

**  
বেশ কিছুদিন আগে -১

ওসাং জানে ভ্যানিশ করে দেওয়ার ম্যাজিক সত্যিই আছে। তার ছয় বছরের জীবনে সে তার বাবাকে অন্তত তিনশো বার দেখেছে কিছু না কিছু ভ্যানিশ করতে। লুডোর ছক্কা, পাউডারের কৌটো, বদ্রি পাখি থেকে শুরু করে হাত টানা রিক্সা পর্যন্ত। এমনকি বেশ কয়েকবার তো স্টেজের ওপর ওসাং’য়ের মাকেও ভ্যানিশ করে দিয়েছে ওর বাবা। বাবা মস্ত বড় জাদুকর কি না। বেইজিং শহর শুধু নয়, পুরো চিন জুড়ে খোঁজ চালালেও ওসাং’য়ের বাবার মত জাদুকর পাওয়া দুষ্কর।

ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার খেলা দেখতে যে কী ভালো লাগে ওসাং’য়ের। সেও যদি অমন ভাবে জাদু করতে পারতো বেশ হত। পারলে; সবার আগে স্কুল-বাড়িটাকে হাপিশ করে দিত ওসাং।

**
বেশ কিছুদিন আগে -২

লিসাং’য়ের বুক ভরে যায় যখন তাঁর ছয় বছরের ছোট্ট ছেলেটা কলকলিয়ে হেসে ওঠে তাঁর যে কোনও ছোটখাটো জাদু কেরামতিতে। হাজার লোকের হাততালিতেও লিসাং সে আনন্দ খুঁজে পায় না।

লিসাং বুঝতে পারে যে ভ্যানিশ করে দেওয়ার খেলা দেখতে সব চেয়ে বেশি পছন্দ করে ছোট্ট ওসাং। তাঁর সরল শিশু মন ঠাহর করতে পারে না যে আদতে কিস্যু ভ্যানিশ  হয় না। সবই হাতের কারসাজি আর চোখের ভাঁওতা।

**
মাস খানেক আগে

-   বাবা, আমি কিছু ভ্যানিশ করতে পারি না কেন ?
-   আর একটু বড় হ বাপ, আস্ত বাড়ি কী করে ভ্যানিশ করতে হয় তাও না হয় আমি তোকে শিখিয়ে দেব।
-   আর কত বড় হতে হবে ? ছ'বছর বয়স হয়ে গেল যে।
-   তাই তো। আয় আমি তোকে কানে কানে একটা মন্ত্র বলে দিই।
-   সেই মন্ত্র পড়লেই ভ্যানিশ হয়ে যাবে ?
-   যা ভ্যানিশ করতে চাইছিস, তার কথা ভেবে মন থেকে জোর লাগিয়ে বলতে হবে মন্ত্রটা। কেমন ?
-   তাহলেই ভ্যানিশ ?
-   ভ্যানিশ।
-   সত্যি ?
-   একদম। তবে যদি ভ্যানিশ না হয়, তাহলে বুঝবি যে তুই যথেষ্ট মনের জোর লাগাতে পারিস নি।
-   মনের জোর ?
-   হ্যাঁ রে, মনের জোর না থাকলে ভালো ম্যাজিক কোনও দিন হতে পারে না।

**
হপ্তা খানেক আগে

-   আমি কিচ্ছু ভ্যানিশ করতে পারছি না বাবা। মা’কে ভ্যানিশ করতে পারলাম না, সাইকেলটাকে পারলাম না। এমনকি পিংপং বলটাও না। বাজে মন্ত্র।
-   মন্ত্র বাজে নয়। আমি তোকে কী বলছি ? যথেষ্ট মনের জোর লাগাতে হবে। না হলে হবে না। বুঝলি ব্যাটা ওসাং ?

ছেলের সারল্যে মনে মনে হেসে ওঠেন লিসাং।

**
কয়েকদিন আগে

বাবার ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছিল ওসাং’য়ের। রাগে ফেটে পড়তে ইচ্ছে করছিল।সে তার বাবাকে কখনও কোনও মিথ্যে কথা বলে না। অথচ কেন বাবা তাকে ঠকানো কথা বললে? কী একটা ফালতু ভ্যানিশ করার মন্ত্র তাঁকে শিখিয়ে দিলে বাবা। কত মন দিয়ে সে মন্ত্র বলে কত কিছু ভ্যানিশ করবার চেষ্টা করলে। কিস্যুটি হল না।   বুক ফেটে কান্না আসে তাঁর। আসুক বাবা বিদেশ থেকে ফিরে। সেখানে গিয়ে বাবা বিদেশিদের মস্ত মস্ত সব ভ্যানিস করবার ম্যাজিক দ্যাখালে অথচ এদিকে দেখ; নিজের ছেলেকে যে একটু ম্যাজিক শেখাবে- সে বেলায় লবডঙ্কা।

কী একটা বেফালতু মন্ত্র বাবা বললে; তাতে ছাই বাব্‌ল গাম’টিও ভ্যানিশ হয় না। সে দুঃখের কথা বললেই বাবা বলেন “ যথেষ্ট মনের জোর না আনলে হবে না”।

আর ঘণ্টা দুয়েক পর বাবা’র প্লেন দেশে নামবে। আজ বিকেলের মধ্যে বাবা বাড়িতে ফিরবেন। বাবা একবার ফিরুক বাড়িতে; আজ বাবারই একদিন কি ওসাং’য়েরই এক দিন।

এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ওসাং’য়ের এমন রাগ হল যে সে মনে মনে ভাবলে বাবাটা বেশ দুষ্টু তো। উত্তেজনায় শিউরে উঠলে ওসাং। রাগের চোটে তাঁর মনে হলে যে প্লেনে বাবা আসছে সে প্লেনটাকেই যদি বাবা-শুদ্ধু গায়েব করে দেওয়া যেত বেশ হত; বাবাকে বেশ শায়েস্তা করা যেত। ফেটে পড়লে সে; বাবা যে প্লেনে করে আসছে,সেটাকে মনে করে বাবার শেখানো ভ্যানিস করবার মন্ত্রটা প্রাণপণে আউরে চললে ছোট্ট ওসাং। মনের সমস্ত জোর লাগিয়ে মন্ত্রটা বলে গেল সে। একবার নয়, অভিমানের চোটে বার বার সে মন্ত্রটা আউরে গেল সে; মনেপ্রাণে ভ্যানিশ করে দিতে চাইলে সে তাঁর বাবাকে। অবিশ্যি ওসাং জানে যে তাঁর বাবা ভ্যানিশ হবে না, কারণ এতদিনে সে বুঝে গেছে যে বাবা তাঁকে একটা হিজিবিজি মন্ত্র শিখিয়ে দিয়ে গেছে।

**
এখন-২

বাবা মিথ্যে কথা বলেনি, বাবা তাঁকে ঠকায় নি।

বাবা সত্যি ভ্যানিশ হয়ে গেল। বাবা যে প্লেনে মালেয়শিয়া থেকে ফিরছিল; সেই এম-এইচ তিনশো সত্তর নম্বরের প্লেনটাও গায়েব। ছয় দিন হয়ে গেল বাবা ফেরেনি। মা’র দিকে তাকাতে পারে না ছোট্ট ওসাং। মা শুধু কাঁদে, বাবা’র প্লেনের সামান্য খবর পাওয়ার আশায় টিভির সামনে বসে আকুলি-বিকুলি করে। অথচ কোনও ভাসা-ভাসা আশ্বাসও পাওয়া যায়না সেই প্লেন বাঁ তাঁর বাবার ব্যাপারে।

ওসাং কাউকে কিচ্ছু বলতে পারে না। সে শুধু জানে যে তার বাবা তাঁকে মিথ্যে ভ্যানিস-মন্ত্র শেখায়নি। আর সে জানে যে ভ্যানিশ করা জিনিষ ফেরত আনার মন্ত্র সে তাঁর বাবার থেকে শিখে নেয় নি। সব দোষ তার; ভয়ে-আতঙ্কে-দুঃখে ডুকরে ওঠে ওসাং।

“ বাবা মিথ্যে বলেনি, বাবা মিথ্যে বলতে পারে না”   
        

5 comments:

SUIRAUQA said...

This is as good an explanation for the disappearance as any being offered on CNN or Fox News. But... I feel for Osang. Poor kid! He's going to need serious therapy and professional counseling to get over the grief and multi-layered emotional trauma, for sure.

SUIRAUQA said...

And, of course, there's nothing new to say (or rather, gush) about Tanmay's fabulous creativity.

Arin Basu said...

Nice, touching story.

Arin Basu said...

Nice, heart rendering story. Tobey duto jinish:

1. MH 370 r reference ta na dileo kono khoti hoto na, karon oi plane ta "du ghonta'r" modhy naambe maane je shomoyer katha bola hochhe, tokhon oshang er ghumiye thakar katha

2. Plane taa te ekjon bangali jatri aar tnaar chinese stree chhilen, tnader dui bachchha (khub shomobhoboto), otoeb ei golpo ta dibyi bangali choritro diyeyo naamano jeto |

tobe golpo ta khub bhalo hoyechhe |

Souvick Maitra said...

Asadharon, khub valo laglo Tanmoy da...