মৃদুলবাবুর একটা জবরদস্ত চাকরি নেই; কাজ বলতে বড়বাজারের এক মাড়োয়ারি গদিতে খাতা সামলানো।
কিন্তু তাঁর রাতের
খাবারের স্টিলের থালাটির কোনায় এক খাবলা চন্দ্রমুখী আলু-সেদ্ধ রয়েছে।
মৃদুলবাবুর আর সংসার করা
হয়ে উঠলো না। বয়স প্রায় পঞ্চাশ, নতুন করে কিছু হবে- সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায়।
বাপ-মা বহু আগেই গত হয়েছেন, সময়মত উঠে-পড়ে তাঁর বিয়ে দেওয়ার জন্যে তেমন কেউ ছিলেননা।
বউবাজারের হিদানাথ
ব্যানার্জি লেনের যে এক কামরার ঘর ভাড়া করে মৃদুলবাবু বাস
করেন, তা অত্যন্ত পুরনো, গুমোট এবং স্যাঁতস্যাঁতে।
কিন্তু তাঁর পাতের কোণে
নতুন আলুর মণ্ডটি ঘি আর সর্ষের তেল মিশিয়ে আদর করে মাখা।
মৃদুলবাবু
স্পন্ডেলাইসিসের যন্ত্রণায় গত বারো বছর ধরে বেজায় কাবু।
এদিকে তাঁর খাওয়ার পাত
আলো করে থাকা আলু সেদ্ধ’র গায়ে লাল লাল ছোপ – ভাজা শুকনো লংকার। স্বাদ যে দৃশ্যত
গর্জন করতে পারে তা এই আলু সেদ্ধর গায়ে মিশে থাকা ভাজা শুকনো লংকাদের খোসা না
দেখলে মালুম হবে না।
মৃদুলবাবুর ব্যাঙ্কে সাকুল্যে
সাড়ে নয় হাজার টাকা রয়েছে। ইনস্যুরেন্স জাতীয় ব্যাপারের ধারে কাছে ঘেঁষার দুঃসাহস কোনও
দিন দেখাননি তিনি।
কিন্তু মুসুরির ডাল মাখা
এক দলা ভাত; আলু সেদ্ধ দিয়ে মেখে সড়াৎ করে মুখে চালান করতে তাঁর জুড়ি নেই।
মৃদুলবাবুর মত সুখী
মানুষ উত্তর কলকাতায় আর দুটি নেই।
No comments:
Post a Comment