- “ পার্টির কাজ ? খুব পারবো বিনুদা। আমি খুব খাটবো, দেখো। কিন্তু চাকরিটা হবে তো ?”
- “ ডিগ্রী দিয়ে তো কিস্যু করতে পারলি না, পার্টিকে ভরসা করে দেখ”
২।
- “ জান লড়িয়ে দেব বিনুদা। দরকার হলে পাড়ায় প্রত্যেককে জনে জনে বোঝাব। আমাদের পলিসির কথা, আমাদের লক্ষ্যের কথা। কিন্তু ভোট এদিক ওদিক হতে দেব না। তুমি দেখো”
- “ মুখের ভাষা সকলে বোঝেনা নীলয়। প্রয়োজনে…”
- “ কিন্তু আইডোলজির কথা যদি…”
৩।
- “ ছাপ্পা ভোট ?”
- “ ন্যাকা সাজছিস কেন নীলয় ?”
- “আমায় এ সব করতে হবে তা তো তুমি বলনি…”
- “বাকি ছেলেরা কাদা মাখবে আর তুই মাখন চাটবি ?”
- “ এটা চুরি বিনুদা…”
- “ চুরি করবি না দলকে বিট্রে করবি ?”
- “বিনুদা…”
- “তোর সাইকেলটা অনেক পুরনো হল। ভাবছি তোকে একটা বাইক জোগাড় করে দেব”
৪।
- “ ভেঙ্গে পড়ছিস কোন সাহসে নীলয় ? পার্টি তোকে মচকাবারও পারমিশনও দেয় নি”
- “বিনুদা আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে…”
- “ভিখারির ছেলের বাড়তি দম নিয়ে কি কাজ ? পার্টির থ্রু তে চাকরিটা না পেলে তোর গুষ্টির দম আটকে আসবে; সে খেয়াল আছে?”
৫।
- “ বোমা বাঁধবো বিনুদা ? আমি ফিজিক্সে অনার্স…”
- “ বোনের বিয়ের দেওয়ার মুরোদ নেই। মা’র ওষুধ কিনিস পার্টির দয়ায়। হারামজাদা তুই অনার্স দেখাচ্ছিস ?”
৬।
- “ মাধবটা খুন হয়ে গেল বিনুদা। আমরা খুন করলাম ওকে। জলজ্যান্ত জোয়ান ছেলেটা শেষ হয়ে গেল। এই সেদিনও ওর মা’র হাতের নাড়ু খেলাম…”
- “ মাধব অপোজিশনের পোষা মাল ছিল। মনে রাখিস এটা বিপ্লবের সময়…
- “ এটা বিপ্লব ?”
- “ পার্টি তাই বলে”
৭।
- “বিনুদা, চাকরিটা ?”
- “ আর কয়েক মাস ধৈর্য ধর। ইলেকশনটা মিটে যাক”
- “কিন্তু ভ্যাকেন্সিটা যে আর থাকবে না”
- “ইলেকশন জিতলে অমন হাজার ভ্যাকেন্সি তৈরি হবে। তোদের জন্যে”
৮।
- “ অসম্ভব বিনুদা”
- “ তোর মাকে হসপিটালাইজ করতে হয়েছে। মনে রাখিস। পার্টি না থাকলে…”
- “ রিভলভার তাই বলে?”
- “ চালাবি না, সাথে রাখবি”
- “এমারজেন্সি তে?”
- “পার্টি সাথে থাকবে”
- “ চাকরিটা বিনুদা ?”
- “ গুড বয়”
৯।
- “ বিনুদা, আমি খুন করিনি। প্লিজ বিশ্বাস করো”
- “ আমি জানি। পার্টি জানে। কিন্তু দীপক-দা ফাঁসলে ভোটে আমাদের বিপদ আছে। দু মাসের তো ব্যাপার। ভোট মিটে গেলেই তোকে ঠিক আমরা…”
- “ জেল ? চাকরির লোভ দেখিয়ে শেষে…কেন বিনুদা?”
- “ পুলিশের সামনে পার্টির নাম একবারও মুখে আনলে তোর জিভ উপড়ে ফেলবো। তোর বোন রোজ এক কলেজ থেকে ফেরে। মনে রাখিস…”
- “ বিনুদা…”
১০।
- “ পাগল হয়ে গেলি নাকি নীলয় ? রিভলভারটা আমার সামনে থেকে সরা। ওটা লোডেড। নীলয় কি ছেলেমানুষি হচ্ছে…তুই আমায় খুন করলে চাকরি পাবি ভেবেছিস ?”
- “ আমার চাকরি পাকা হয়ে গেছে বিনুদা। তপুদা কথা দিয়েছে”
- “ তপু? তুই অপোজিশন পার্টির সাথে মিলে শেষ পর্যন্ত…”
- “ দেড় লাখ টাকাও দেবে বলেছে জানো ? পঞ্চাশ অ্যাডভান্স করেছে…”
- “ নীলয় প্লিজ, আমি তোকে সাইকেল চালাতে শিখিয়েছি…”
- “ আর শিখিয়েছে বোমা বাঁধতে, খুন করতে”
- “ নীলয় প্লিজ…”
- “তুমি খুন হলে তোমার প্রফেসর বউ’ও একা হয়ে যাবে। তাই না ? তারপর সেও একা একা কলেজ থেকে ফিরবে, তাই না বিনুদা?
- “নীলয়…”
1 comment:
কি নির্মম সত্যি ভাবনার গল্প এটা। একটা বিশেষ সময় ও আজও এই দারিদ্র্যের থাবায় পড়ে কত ভাল ছেলেমেয়ে শেষ হয়ে গেল। গল্পের ভাবনাটা আমার অতীত অভিজ্ঞতার দুয়েকটি পাতাকে ছিঁড়ে খুঁড়ে রক্তাক্ত করে রেখেছে।
Post a Comment