পিতা গতকাল ভোট দিতে গেছিলেন। এই, বেলা সাড়ে
এগারোটা নাগাদ। হাসি হাসি মুখ। বুক পকেটে ভোটার আই-ডি। ডান হাতে ছাতা, বাঁ হাতে
আনন্দবাজার। মাথার ওপরে ডাইরেক্ট মাঝ-বৈশাখের রোদ্দুর। বুথের সামনে প্যাঁচালো
লাইন।
পিতা বুদ্ধের স্ট্যামিনা ধরেন। এ মাগ্যির যুগে
সন্তান পালন করেছেন, তাঁর কাছে রোদ্দুরে
ভোটের লাইন তো নস্যি। প্রতিবেশী ও ভোটের-লাইন-অগ্রজ ভৌমিকবাবুকে “পলিটিকাল
ডিসিপ্লিন”য়ের ওপর ঝাড়া চল্লিশ মিনিট ধরে দারুণ ঝকঝকে সমস্ত কথা বলে চললেন লাইনে
দাঁড়িয়ে। ভৌমিক-বাবু এক সময় মনস্থ করে
ফেললেন দরকার নেই ভোট দেওয়ার। কিন্তু পিতৃদেব তাঁকে লাইন কেটে বেরোতে দিলেন না। ভৌমিক-বাবু
কে সপাট জানিয়ে দিলেন “ এই আপনাদের মত আয়েসি মানুষের জন্যেই আজ দেশের কপালে নেতা জোটেনা,
ফচকে নাগর অল অ্যারাউন্ড। অ্যান্ড ফিউ জোকার্স। খবরদার! ভোট না দিয়ে সরে পড়লে
ভালো হবে না”। ব্যাজার মনে দাঁড়িয়ে রইলেন ভৌমিক-বাবু। পিতা সহাস্য মেজাজে ফিরে
গেলেন “ পলিটিকাল ডিসিপ্লিনের” ক্লাস নেওয়ায়।
পাক্কা এক ঘণ্টার মাথায় ভৌমিকবাবুর দুঃখ ঘুচল।
তিনি ভোট দিয়ে সরে পড়লেন। পিতা সগর্বে নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে নিজের ভোটার আই-ডি
মেলে ধরলেন।
- “ইয়ে, জেঠু। আপনি
ভোট দিয়ে দিয়েছেন”
- “ভোট দিয়েছি মানে ?গতবারের
কথা বলছ ?”
- “আহ:, না! তা কেন ?
এবারের ভোট আপনি দিয়ে দিয়েছেন”
- “ইয়ার্কি হচ্ছে ? এক
ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সবে এই...”
- “জেঠু, আপনার ভোট দেওয়া
হয়ে গেছে”
- “না হয়নি”
- “এই দেখুন। স্পষ্ট
দেখা যাচ্ছে। আপনার নামে ভোট পড়ে গেছে”
- “মিথ্যে কথা, আমার
আঙুলে কালি কই ?”
- “মা কালী’র গায়ের রং
উঠে যাবে এমন ক্রিম বেরিয়ে গেছে বাজারে। আর আপনি আঙুলের কালি দেখাচ্ছেন ? কেন হুজ্জুতি করছেন জেঠু ? পিছনে এত ভিড়...”
- “আমি হুজ্জুতি করছি
?”
- “করছেন তো। বলছি
আপনি ভোট দিয়ে দিয়েছেন”
- “ছাপ্পা ? আমার নামে
ছাপ্পা ? আমি এফ-আই-আর করবো। আই উইল মুভ দ্য কোর্ট”
- “ইংরেজি না ঝেড়ে
সাইড হয়ে যান না”
- “ইংরেজি ঝেড়ে মানে ?
ভাষার আবার ঝাড়াঝাড়ি কি হে ? আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি...”
- “আপনাকে কিন্তু জোর
করে সরাতে বাধ্য হব জেঠু...”
গজগজ করতে করতে পিতা ‘সাইড’ হলেন। সঙ্গে
সঙ্গে তাঁর নজরে পড়লো হুতোমদা’কে। হুতোমদা উঠতি নেতা। বর্তমান এম-পি’র ছোট-ডান হাত
গোছের কিছু একটা। এ বুথে পার্টির এজেন্ট। পাড়ার ছেলে।
পিতা হাঁকলেন – “ এই হুতোম। এদিকে আয়”
- “কিছু বলছেন কাকু ?”
- “আমার ভোট নাকি পড়ে
গেছে বলছে”
- “এ আর এমন কি
ব্যাপার। এমন দু চারটে হতেই পারে কাকু। সরুন দেখি”
- “চোপ। এমন কি
ব্যাপার মানে ?”
- “মানে এসব একটু চলে
কাকু”
- “এসব চলে মানে ?
ছাপ্পা চলে ?”
- “ছিঃ ছিঃ কাকু। ওসব
কি বলছেন”
- “আমার হয়ে কেউ
ছাপ্পা ভোট না দিলে এমনটা হয় কি করে ?”
- “ছাপ্পা বলছেন কেন
কাকু ? এই রোদে আপনার মত সিনিয়ার সিটিজেন বুথে আসবে সেটা কে জানতো মাইরি। অথচ
আপনার ভোট নষ্ট হলে কি ট্র্যাজেডি হত বলুন তো। আমার তো বুক হু হু করতো। সেই দুঃখেই
কেউ দিয়ে দিয়েছে হয়তো আপনার নামে। ভালোবেসে। হে হে”
- “তুই জানিস আমার
নামে ছাপ্পা কারা দিয়েছে ?”
- “তোবা তোবা। আমি
কিছু জানি না। আপনাদের বয়স হয়েছে কাকু, এত খিচখিচ করেন না। মাথা ইয়ে হয়ে যায়
মাইরি। আসুন দেখি। আমি পরিশান হয়ে যাচ্ছি সকাল থেকে কাজ করে করে আর আপনি একটা ভোট
নিয়ে ফালতু হল্লা করছেন”
ফেরার মুখে পিতার ফের দেখা ভৌমিকবাবুর
সাথে। ভৌমিকবাবুর চোখের সামনেই ঘটনাটা ঘটেছে। পিতা ফোঁসফোঁস করতে করতে বললেন
- “ হুতোম ব্যাটার
সাহস দেখেছেন ? ব্যাটাকে জুতো ছুঁড়ে মারতে ইচ্ছে করছে”
- “ জুতো ছুঁড়ে মারার
কি দরকার মশায়। ওকে ডেকে না হয় পলিটিকাল ডিসিপ্লিনের ওপর দশ মিনিট গপ্প শুনিয়ে
দিন। জুতোপেটার চেয়ে ঢের বেশি যন্ত্রণা হবে”, মিচকি হেসে বললেন ভৌমিক-বাবু।
ত্রেতা যুগ হলে পিতার চোখের দৃষ্টিতে
তৎক্ষণাৎ ভস্ম হয়ে যেতেন ভৌমিক-বাবু।
5 comments:
আমার একবার ভোট নিতে গিয়ে এই কাণ্ড হয়েছিল। এক ভদ্রমহিলার ভোটটি এইভাবে পড়ে গেছিল। কোন পোলিং এজেন্টই কিছু ধরে নি! আমি আর কি করব। কিন্তু সে তার শ্বশুরকে নিয়ে এসে হাজির! তিনি আবার কোন স্কুলের প্রধান শিক্ষক! এ সব ক্ষেত্রে কমপ্লেন রেজিস্টার করাতে হয়! কিন্তু তার হ্যাপা বহুত! তা দেখলাম সব পলিটিকার পার্টির এজেন্টই মিচকি মিকি হাসছে! তার পর বলল, "কোই নহি স্যার হাম দেখতে হ্যায়!" তারপর "আঙ্কল জরা সাইড মে আইয়ে বলে সে ভদ্রলোককে বাইরে নিয়ে গেল! মিনিট তিনেক পর জানলা দিয়ে দেখলাম যে শ্বশুর আর তা বধূমাতা মনের আনন্দে বাড়ি যাচ্ছে! আমার কি? আমার ভোট হওয়া নিয়ে কথা! :P
হুবহু এই এক ব্যাপার একবার আমার বাবার সঙ্গেও হয়েছিল, প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বছর আগে। সেই থেকে উনি একদম ভোর সাতটার সময় গিয়ে লাইন লাগাতেন :-)
হুবহু এই এক ব্যাপার একবার আমার বাবার সঙ্গেও হয়েছিল, প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বছর আগে। সেই থেকে উনি একদম ভোর সাতটার সময় গিয়ে লাইন লাগাতেন :-)
ha ha first class lekha hoeche
দারুণ দারুণ দারুণ। :)
Post a Comment