- রোদ্দুর রায় ? তুমি ভাবতে পারো ?
-
এত চটছো কেন ?
-
তোমার বিশেষ কিছু এসে না যেতে পারে। আমার যায়।
-
সে তো তোমার বাড়ি বয়ে এসে তোমায় গালাগাল দিয়ে যায়নি।
-
গাল দিলে পাত্তা দিতাম না গো। ভূতের আবার গালাগালে আপত্তি কিসে। মুখ ভেংচে
দিলেই ঝামেলা চুকে যেত। কিন্তু এমন ভাবে সঙ্গীত কে কচুকাটা করা...অপরাধ নয় ?
-
সে বেচারা মনের সুখে প্রাণ খুলে গান গাইছে, নিজের গান অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্বভারতীর মত ব্যবসা ফাঁদছে না। লোকে নিশ্চিন্তে পারে তার গান না শুনে পাশ
কাটিয়ে চলে যেতে। তাতে কার পাকা ধানে মই পড়ে শুনি ? আর আমি তুমি তো ভূত। পৃথিবীতে
তে কে কী করছে তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা কেন ?
-
মাথা ব্যথার কারণ আছে। এ ভাবেই ভাঙন ধরে। এ ভাবেই পচন লাগে।
-
ভাঙন খারাপ ? পচন খারাপ ?
-
ফিলসফি ফলিও না ভাই। তোমায় খিস্তি করতে মন চাইছে না। রোদ্দুর রায়ের প্রতি
তোমার এত দরদ কেন ? গান গুলো যে গোল্লায় যাচ্ছে!
-
সে তোমার দুর্বল মনের ধারণা। তা ছাড়া ছেলেটির হাসিতে কবিতা আছে। লাবণ্য তাঁকে
পেলে লুফে নিতে।
-
নন-সেন্স। ভূতের জীবনেও তো একশো হাঁকিয়েছ। এবার ভীমরতি পেয়েছে বোধ হয়। রোদ্দুর রায়ের মত নিদারুণ ঠাট্টা...।
-
ঠাট্টা নিদারুণ
হয় না ভায়া। আদত ঠাট্টা চনমনে, নিষ্পাপ, দোষ-গুনের অঙ্কে তাঁকে মাপতে যেওনা। রোদ্দুর
রায় আদতে একটি ঠাট্টা। বেশ। মেনে নিলাম। কিন্তু তাঁকে বদ-ভালোর হিসেবে ধরতে যেওনা।
-
বেশ। তবে এই
রোদ্দুর রায় বিধাতার অতি জঘন্য ঠাট্টা ভাই রবি, তোমার সহ-ভূত হিসেবে এই আমি বলে
রাখলাম।
-
যদি জঘন্যই হয় ভায়া,
তবে যেন সে দায় বিধাতার নয়। দায় স্বয়ং এ অধমের। রাগ দেখাতে হলে এই বুড়ো দাড়িয়াল ভূতের ওপর দেখাও।
-
মানে ? তবে রে
ব্যাটা দেবেন ঠাকুরের পো!। দামড়া ভূত হয়ে শেষে পৃথিবীর তামাম ভক্তদের সঙ্গে এমন
মশকরা করা ? রোদ্দুর রায় তাহলে.....।
-
বেঁচে থাকতে
নিবারণ চক্রবর্তী কে শিখণ্ডী করে কত মনের কথা বলে গেছিলাম! মনে পড়ে ভায়া ?
‘আনিলাম
অপরিচিতের নাম
ধরণিতে,
পরিচিত জনতার সরণিতে।
আমি আগন্তুক,
আমি জনগনেশের প্রচণ্ড কৌতুক।
খোল দ্বার,
বার্তা আনিয়াছি বিধাতার’
ভাবলাম যুগ পাল্টেছে, আমিও মানুষ থেকে ভূত হয়েছি। তাই
এবার আমার কৌতুক বয়ে নিবারণ চক্রবর্তী নয়, মাঠে আসুক অন্য কেউ। তাই ওই রোদ্দুর রায়। সুকুমার রায়ের মত নন-সেন্স ছড়া লিখতে পারিনি, কিন্তু রোদ্দুর
রায়ের মাধ্যমে একটা সরল মজা বুনবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোথায় কী। জন-গণেশের
প্রচণ্ড কৌতুক জাগাতে পারলাম না, উলটে বিদ্রূপ টেনে আনলাম। পৃথিবী রোদ্দুরকে চিনতে
পারলে না, দ্বার খুললে না।খিল্লি করলে। আমার বার্তার কেউ ঠাহর পেলে না।মনে রেখ
ভায়া, যেদিন এ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ অনাবিল ঠাট্টার জন্যে নোবেল প্রাইজ চালু হবে, সেদিন
বুঝবে এ দুনিয়ার মুক্তি লাভ ঘটেছে। আর ততদিন এ ব্যাটাগুলো আমার গীতাঞ্জলী নিয়েই
গদগদে থাকুক। আমার রোদ্দুর রায় আমারই থাকুক ”
3 comments:
এটা অন্যতম সেরা লেখা
অ-সাধারণ
রোদ্দুর রায়ের দেঁতো হাসি - কি ভয়ানক!!!
Post a Comment