Thursday, October 9, 2014

খুচরো তফাৎ

কলেজ স্ট্রীটে ঘুর-ঘুর করছি সস্তায় পুরনো বই সটকাবার তালে। জুন মাসের বিকেল কিন্তু সদ্য বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় চনমনে হাওয়া বইছে। মেজাজ শরিফ। জলের দরে খান দুই গপ্পের বই ব্যাগস্থ করে ফেলেছি। ভাবলাম বই ঘাঁটাঘাঁটি আলতো থামিয়ে রেখে একটু চা-টা খেয়ে নেওয়া যাক। মেডিক্যাল কলেজের উল্টো দিকে; ফুটপাথের একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে বললাম- 

-“ এক কাপ চা আর একটা ডিম-টোস্ট”। 
আমার পাশে এক মাঝবয়স্ক ভদ্রলোক বসেছিলেন। আমার দিকে চেয়ে ভারি অমায়িক হাসলেন। হাসি ফেরত দিলাম।
ভদ্রলোক ভুরু নাচিয়ে বললেন “ ভায়া, এই যে আপনি ডিম-টোস্ট চাইলেন, আর দোকানি-ব্যাটা ঘাড় নেড়ে বললে ‘দিচ্ছি’, আপনি কিন্তু ঠকে গেলেন”
-“ মানে ?” ঘাবড়ে গেলাম।
-“ মানে  আপনি চাইলেন ডিম-টোস্ট, আপনাকে ও দেবে ডিম-রুটি
-“ তো ? তফাৎটা কি  তাতে ?”
- “ সে কি! তফাৎ নেই ?  ভ্যানিস আর হাপিশ কি এক ? কলকাতা আর ক্যালক্যাটা কি এক ? ইসবগুল আর জেলুসিল এক ?”
-“ না মানে বুঝলাম না ঠিক। ডিম-টোস্ট আর ডিম-রুটি এক নয় ?”
-“ আরে ভায়া ডিম-টোস্টে থাকবে চৌকো তুলতুলে পাউরুটি। আলতো আঁচে রিফাইন্‌ড অয়েলে ভাজা। মখমলে টেক্সচার। সখের পায়রা। টোটাল বুর্জোয়া মেটেরিয়াল। বোন-চায়নার প্লেটে সাজিয়ে; ইকনমিক টাইম্‌স পড়তে পড়তে খাওয়ার চিজ
।  
আর এইখানে আপনি পাবেন ডিম-রুটি। লম্বাটে পাউরুটি, পেছন-মোটা, খড়খড়ে। সেই মালকে সসপ্যানের মধ্যে ফেলে ডিমে-সর্ষের তেলে ভেজে নেওয়া; তারপর তা তোবড়ানো  ষ্টীলের প্লেটে রেখে, বিট-নুন ছড়িয়ে হাভাতের মত মুখে চালান করা। আদর্শ প্রলিটারিয়াট খানা।
এই দুই ব্যাপার কি এক ? যদি বলেন একই ব্যাপার; তবে তো বলতে হয় যে পাটালি আর ঝোলাগুড়ে কোনও ফারাক নেই, ইলিশ আর তেলাপিয়া ভাই-ভাই।”
-“ ইয়ে, তাহলে আমি ওই ডিম-রুটিই চাই, ডিম-টোস্ট বলা আমার ঘাট হয়েছে”
-“ অফ কোর্স ঘাট হয়েছে। আরে বাবা খিচুরি-এঁটো মুখে চিলেকোঠার চুমু আর হোয়াইট-ওয়াইনের গেলাস হাতে ফ্রেঞ্চ কিস কি এক বাত ? ম্যাকডোনাল্ডস’য়ের  ফ্রাইজ আর ঝুরো-আলু ভাজায় ফারাক নেই ?”
-“আমি সরি দাদা। এবার থামুন প্লিজ”
- “মুখে প্লিজ-মনে খিস্তি নয় তো ? সরি না দুঃখিত ?”

ডিম-টোস্ট; থুড়ি...ডিম-রুটি’র মায়া ত্যাগ করে বেঞ্চি ছেড়ে সরে পড়লাম।

No comments: