-
কে?
-
আমি। অনিন্দ্য।
-
ও। এসো।
-
আপনি ডেকেছিলেন।
-
হুঁ। চা খাবে?
-
হ্যাঁ।
-
বিশে, দু’কাপ চাপ দিয়ে
যা। আমারটা আবার দুধ-চিনি ছাড়া। তোমার কেমন চা চলে অনিন্দ্য।
-
দুধ ছাড়া চলবে, চিনি ছাড়া
নয়।
-
বিশে, একটায় চিনি দিয়ে।
ক্যুইক। দাঁড়িয়ে আছ কেন অনিন্দ্য, বোস।
-
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
-
এবার বল। কী করতে পারি
আমি।
-
না মানে আপনি ডেকেছিলেন
সন্দীপনবাবু।
-
বিজ্ঞাপন দেখে তুমিই ফোন
করে আসতে চেয়েছিল অনিন্দ্য। তাই তো?
-
আজ্ঞে হ্যাঁ।
অবশ্য...মানে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি...
-
তবু আমার নম্বরে ফোন
করলে। কেন?
-
না মানে। বিজ্ঞাপনের লেখাটা...
-
কী লেখা অনিন্দ্য।
-
ওই যে। বিজ্ঞানের সেবায়
নিজেকে সমর্পণ করে নিজের পরিবারকে কোটীপতি করে তুলুন। শীঘ্র এই নম্বরে যোগাযোগ
করুন।
-
হুঁ। বুঝলাম। তাই তুমি
গতকাল ফোন করলে।
-
তোমার বয়স তো খুব বেশি নয়
অনিন্দ্য?
-
বত্রিশ।
-
কী করা হয়।
-
একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কের
ক্লার্ক। মানে এখনও পার্মানেন্ট হইনি। কন্ট্রাক্টে।
-
আই সি। অর্থাভাব?
-
ভীষণ। আসলে দুই মেয়ের
পড়াশোনা, বোনের ফাইনাল ইয়ার...বাবার আবার...
-
ডিটেইল্স চাইনি
অনিন্দ্য। তুমি আসার আগেই তোমার ব্যাপারে সমস্ত খবর আমি নিয়েছি।
-
আজ্ঞে?
-
হাঁ করে না থেকে চা খাও।
নয়তো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
-
কাজটা কি সেটা যদি একটু
বলতেন সন্দীপনবাবু। আর পয়সাকড়ির ব্যাপারটা...আসলে আমার অ্যাকাডেমিক সাইডটা একটু
দুর্বল। বি-কম নিয়ে...
-
অনিন্দ্য। আমাদের এই
প্রোজেক্টে যেটা আমার প্রয়োজন সেটা হচ্ছে একটা সুস্থ দেহ। সুস্থ মনের যোগানটা দেব
আমি।
-
আজ্ঞে?
-
বুঝিয়ে বলছি। তবে তার আগে
তোমায় টাকাকড়ির ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি। দেড় কোটি টাকা তোমার পরিবার পাবে।
-
আমার পরিবার? আর আমি?
-
তুমি বিজ্ঞানের পদতলে
সমর্পিত ভাই অনিন্দ্য।
-
ঠিক বুঝলাম না স্যার।
-
আগে বল, এ টাকায় তোমার
চলবে?
-
আমার চোদ্দ পুরুষ মিলে এত
টাকা জমা করতে পারবে না। মেয়েগুলোর ফিউচার
অন্তত... কিন্তু আমি?
-
ডানদিকের দেওয়ালে ওই
পোট্রেটটা দেখ মন দিয়ে।
-
ওটা কার?
-
শ্রীযুক্ত মধুময় দত্ত।
সম্ভবত সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী।
-
মধুময় দত্ত...ইয়ে নামটা
ঠিক...
-
চেন না। পৃথিবী চেনা না।
সেই ট্র্যাজেডি মধুময়ের নয়, সে ট্র্যাজেডি এ বিশ্বের। উনিশশো একুশ সালে মধুময় বাবু
একটা প্রোজেক্ট শুরু করেন।
-
উনিশশো একুশ? সে তো...
-
অনেক অনেক দিন আগে। জানি। চন্দ্র-অভিযান তখন মানুষের কাছে অলীক ছিল।
-
প্রোজেক্টটা কী ছিল ?
-
অমরত্বের। মানুষ কে অমর
করে তোলার প্রোজেক্ট।
-
ও।
-
অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে?
-
না। মানে আমি পাতি মানুষ।
আমি বিশ্বাস অবিশ্বাস করার কে? তা মানে, মধুময়বাবু কি সফল হয়েছিলেন?
-
অনেকটা সফল হয়েছেন।
-
হয়েছেন? মানে উনি...?
-
প্রায় বেঁচে আছেন বললেই
চলে।
-
গুলিয়ে যাচ্ছে।
-
গুলোবার দরকার নেই।
বিশেকে বরং আর দু’ই কাপ চা দিতে বলি। অ্যাই বিশে, আরও দু কাপ চা দিয়ে যা।
-
মধুময়বাবু প্রায় বেঁচে
আছেন, একথার মানে কি?
-
আদর্শ মানুষ। অর্থাৎ - আ
হেলদি মাইন্ড ইন আ হেলদি বডি। সুস্থ শরীরে সুস্থ মন। আমাদের এই যে বেঁচে থাকা অনিন্দ্য,
এই যে তুমি বেঁচে আছ- তার মধ্যে তোমার দেহ কতটা আর মন কতটা?
-
জানি না। দেহ ছাড়া আবার
মন কি।
-
দেহটা আশ্রয় অনিন্দ্য।
কিন্তু মনটাই সব। তোমার চিন্তা, তোমার স্বপ্ন, তোমায় ভয়, তোমার লোভ, তোমার
ভালবাসা-স্নেহ-ঘৃণা – এগুলোই তোমার বেঁচে থাকা। সেটা জীবন। শরীর রয়েছে সেই মনটাকে
আগলে রাখতে। ক্লিয়ার?
-
তাই তো। তাই বলে প্রায়
বেঁচে আছেন মানেটা ঠিক বুঝলাম না সন্দীপনবাবু।
-
মধুময় দত্তর মনটা বহাল
তবিয়তে বেঁচে আছে অনিন্দ্য।
-
ভূ...
-
ভূত? বিজ্ঞানের আশ্রয়ে
এসেছ তুমি। এসব আবার কী কথা। মন, হৃদয়, এসব কিছুর মূল একটাই। মগজ। আমাদের ব্রেন
অনিন্দ্য। আর মধুময় দত্তর ব্রেন এখনও সুস্থ ভাবে বেঁচে।
-
ফের গুলিয়ে যাচ্ছে।
-
মধুময়বাবুর ব্রেন এখনও
বেঁচে আছে। তার শরীর অফ কোর্স স্বাধীনতার আগেই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তার স্মৃতি,
তার অনুভূতি, বুদ্ধি; সমস্তই টিকে আছে। তবে অন্য শরীরে। মধুময়বাবু কোবরেজি, পশ্চিমা
দাওয়াই ও কিছু কেমিক্যাল মিশ্রণে এমন একটা সলিউশন তৈরি করতে পেরেছেন যা দিয়ে
মানুষের ব্রেন কে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখা যায়। সে সলিউশন প্রথম তিনি পরীক্ষা করেন
নিজের ওপর। এবং সে এস্কপেরিমেন্ট পুরোপুরি সফল। শুধু একটাই অসুবিধে। বহু লোকের
নিয়মিত রক্ত নিতে হয় জানো তো? ব্লাড ডোনারদের থেকে?
-
জানি।
-
ঠিক তেমনই মধুময়বাবুর
নিয়মিত নতুন শরীর গ্রহণ করতে হয়। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর। কারণ ট্রান্সপ্লান্টেড
ব্রেন নতুন শরীরে তার চেয়ে বেশি দিন সারভাইভ করতে পারে না। অবশ্য যে কোন দেহ হলেই
চলে না, কিছু নির্দিষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। তোমার মেডিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড আমি রিসার্চ
করে দেখে নিয়েছি। দিব্যি চলবে।
-
মানে...না...মানে...কিন্তু...আপনি...
-
আমি? খুলেই বলি। আমিই
মধুময় দত্ত। হাজার নোবেলেও এ পৃথিবী আমার ক্ষমতার মূল্যায়ন করতে পারবে না হে
অনিন্দ্য। এ দেহটা অবিশ্যি সন্দীপন সামন্তর। সে হিসেবে আমি সন্দীপনও বটে। সে সোনাপুরের
বাসিন্দা ছিল এক কালে। টিউশনি করতো। সেও বছর সাড়ে চার আগে স্টেট্সম্যানের এক কোণে
এইরকমই বিজ্ঞাপন দেখে...
-
আপনি উন্মাদ
সন্দীপনবাবু...আপনি...
-
শান্ত হও অনিন্দ্য। তোমার
পরিবারের দেড় কোটির দরকার আছে। আর বিজ্ঞানের জগতে তুমি সত্যেন বোসের চেয়ে কোনও কম
অবদান রাখবে না। ব্যাপারটা থ্রিলিং নয়?
***
-
অনিন্দ্যবাবু।
-
কে?
-
আমি। নীলয় মজুমদার।
-
ও। এসো।
-
আপনি ডেকেছিলেন।
-
হুঁ। চা খাবে?
-
হ্যাঁ।
-
বিশে, দু’কাপ চাপ দিয়ে
যা। আমারটা আবার দুধ ছাড়া-চিনি দিয়ে। তোমার কেমন চা চলে নীলয়।
-
আমার দুধ চিনি দুটোই চলে।
-
বিশে, একটায় দুধ-চিনি
দিয়ে। ক্যুইক। দাঁড়িয়ে আছ কেন নীলয়, বোস।
-
থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
-
এবার বল। কী করতে পারি
আমি।
-
না মানে আপনি ডেকেছিলেন অনিন্দ্যবাবু।
-
বিজ্ঞাপন দেখে তুমিই ফোন
করে আসতে চেয়েছিল নীলয়। তাই তো?
2 comments:
বেশ গা-ছমছমে ব্যাপার। দারুণ লাগলো। :)
Roald Dahl? :)
Post a Comment