-
- আপনি রিজোলিউশন রেখেছিলেন না কি? কী ছিল বলুন
তো...যোগব্যায়ামের রুটিনে আধ ঘণ্টা যে বাড়িয়েছেন সেটা কী...
- না সেটা নয়...
- তবে?
- রিজোলিউশন সম্বন্ধীয় প্রশ্নের কোন উত্তর না দেওয়া। নিজেকে
ফুল মার্কস দিতে চাই।
- বুঝলুম। তা, সত্যান্বেষী মহাশয়। আপনি কোন পথে হাঁটবেন?
আপনিও কী রিজোলিউশনের ব্যাপারে স্পিক্টি নট?
- বাংলাদেশ তো অনেক হল। এবার ভাবছি একটু আন্তর্জাতিক হাওয়া
বুঝে নেওয়া দরকার। মালেশিয়ার যে বিমানটি গায়েব হয়ে গেল। সেটার ব্যাপারে একটু তলিয়ে
দেখার ইচ্ছে রয়েছে। সেটাকে রিজোলিউশন বলা যেতে পারে। কী বল অজিত?
- আমার আগামী বছরের রিজোলিউশন হচ্ছে তোমার সব কথায় এক কথায় তালে
তাল না মেলানো। বুঝলে ব্যোমকেশ? আচ্ছা, তারিণীবাবু, আপনার কোন রিজোলিউশন?
- দেশলাই আছে? বিড়িটা নিভে গেল...
- আছে তো। এই নিন।
- শুনুন। ভাবছি একটা ইচ্ছাপত্র লিখে যাব আগামী বছর। সন্দীপ
যেন আমার কোন গপ্প নিয়ে সিনেমা না ভাঁজে। ফেলুর হাতে লালুবাবুর মত প্রপ রয়েছে।লোকেশনের
ভেল্কি দেখানোর স্কোপ আছে। চকচকে ভিলেন রয়েছে। কিন্তু আমায় এক্সপিরিয়েন্স বেচে
ইমেজ ধরে রাখতে হয়। সে ব্যাটা যদি একবার ডুবিয়ে দেয়, তবে আর রক্ষে নেই। কী বলেন
প্রফেসর? তা আপনি কী রিজোলিউশনের ধার ধারেন?
- প্রহ্লাদের মাইনে বাড়াবো। বত্রিশ বছর ধরে বাড়েনি। শেষ
বাড়িয়েছিলাম তিরাশিতে। আড়াই টাকা পার মান্থ। দু’হাজার পনেরোতেই হোক। আর ভাবছি মিরাকিউরলের
ফর্মুলা জ্বালিয়ে ফেলবো। সেসব আমার সঙ্গেই উবে যাক। এ জাতির আগ্রহ নতুন ধরনের
মারণাস্ত্রে। মরুক গে সব। ও হ্যাঁ, উইল করে যাব। আমার অবর্তমানে গিরিডির বাড়িটা
প্রহ্লাদ পাবে। ওর অবর্তমানে এ বাড়ি ভেঙ্গে পুকুর কাটা হবে। নিউটন পুষ্করিণী। যাক,
ইয়াং চ্যাপদের প্ল্যান শোনা যাক। টেনি, বাবা তোমার কী রিজোলিউশন সামনের বছর?
- আজ্ঞে ভাবছি আসছে বছর বিজনেসে নামবো। আশীর্বাদ করুন। আমার
অবশ্য তেমন ইচ্ছে ছিল না। নেহাত আমি বিজনেস করলে আমার অ্যাসিস্ট্যান্টগিরি করে
প্যালাটার একটা হিল্লে হয়ে যাবে। অন্য কোথাও চাকরি করার আই-কিউ ওর নেই কী না। চিট
ফান্ডের ব্যবসা।
- চিট ফান্ড? সেটা কী ব্যাপার ভাই টেনি?
- ওই। একটা হোজ পাইপের মত।
- হোজ পাইপ?
- আজ্ঞে। হোজ পাইপের একটা মুখ পাবলিকের পকেটে। আর অন্য মুখ
দেলখোশায়। পাবলিকের পয়সা হোজ পাইপে ঢুকছে আর অন্য মুখ দিয়ে কাটলেট, মাটন চপ হয়ে
আমার নোলায় এসে পড়ছে। সহজ ব্যবসা। পাড়ার এম এল এ’র ডান হাত গজুদার সঙ্গে কথাবার্তা
ফাইনাল। পনেরোতে টেনি শর্মাকে আর মেজদার মুখ ঝামটা শুনতে হবে না। পরাশরদা, আপনিও
কিছু বলুন।
- রিজোলিউশন? দু’হাজার পনেরোর? গোয়েন্দাগিরি বাদ। শুধু কবিতা
লেখা। আধুনিক কবিতা। যার মধ্যে অনুপম রায়ের গান হলেও হয়ে যেতে পারে এমন একটা ভাব। ফর
এগজাম্পেল; মদনের দিনমান আঁকিবুঁকি, কেটে
যায়-কেটে যায়-যায় কেটে / ফ্রেমখোলা জানলার হাহুতাশ , বয়ে যায়-বয়ে যায়-যায় বয়ে।
সিধু জ্যাঠা। আপনি বলুন এবার।
- অনশন করবো। গুগ্লের বিরুদ্ধে। জ্ঞান অর্জন মামুলি হয়ে এলে
মানুষ অবান্তর হয়ে পড়ে। দিনরাত বিরিয়ানি খেয়ে শুয়ে বসে কাটালে যেমন মেদস্ফীতি ঘটে,
তেমনি জ্ঞানের যোগান সস্তা হলে মানুষের চরিত্রের ভিতরে বিষাক্ত স্নেহ জমা হয়। এর
প্রতিবাদ হওয়া দরকার। জ্ঞান জারণ না হলে তা মগজে ক্ষতিকারক চর্বি হয়ে জমে থাকে। কী
রাজা?
- আমি সুকুমার রায়কে নতুন করে পড়বো। প্রত্যেক বছর এ রিজোলিউশন
আমার থাকে। এবারে বাড়তি বলতে জোজোর সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর ইচ্ছে। নরেন্দ্র ভার্মার
সঙ্গে কম। এই আমার পনেরো। আপনি বলুন ঘনশ্যাম।
- খুব ইচ্ছে ছিল সিগারেট কিনবো আসছে বছর। হাজার হাজার সিগারেট
ধারের হিসেব রাখতে বিশ্রী লাগে মাঝে মাঝে। কিন্তু আমার পূর্বপুরুষ দ্য গ্রেট
কৃষ্ণশ্যাম স্বয়ং ক্লিওপেট্রার কাছে কথা দিয়ে বলেছিলেন, “তোমার প্রেমে বাঁধা থাকতে
পারলাম না। আমায় আটকে রাখার ক্ষমতা কি তোমার আঁচলের রয়েছে ক্লিও? কষ্ট বাড়িও না
নিজের। তবে যাওয়ার আগে তোমার যে কোন একটা ইচ্ছের কথা বল। আমি নিশ্চয়ই পূরণ করবো”।
ক্লিওপেট্রা কাঁপা স্বরে বলেছিলে “প্রাণনাথ, তোমার সাহচর্যে তামাক সেবন যে কী
আনন্দের ছিল তা কী বলবো। তুমি কথা দাও যে আমায় ছেড়ে গিয়ে তুমি আর তামাক কিনে খাবে
না কোনদিন”। গ্রেট কৃষ্ণশ্যাম বড় মুখ করে বলে এসেছিলেন “কথা দিলাম ক্লিয়ে। শুধু
আমি কেন, আমার বংশের কেউ কোনদিন তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য কিনে খাবে না। কথা দিলাম”।
কৃষ্ণশ্যাম অবিশ্যি আইনের ফাঁকটা ভালোই ধরেছিলেন। তামাক সেবন ছাড়েননি, স্রেফ তামাক
কেনাটা ছেড়েছিলেন। সে ট্র্যাডিশন দাস বংশে অব্যাহত রয়েছে। তাই তেমন হঠকারী
রিজোলিউশন নেওয়ার আগে হাজারবার ভাবতে হয়। যাক সে কথা। ফেলু, একটা চারমিনার দাও
দেখি। আর আপনি...হ্যাঁ আপনি...ওই যে কোনে চুপচাপ বসে আছেন। আপনি চুপ করে কেন।
সাইলেন্স যে কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা কেনেডির ব্যাপারে স্বচক্ষে দেখলাম। আপনি
বলুন। আপনার দু’হাজার পনেরোর রিজোলিউশনের কথা বলুন।
- রিজোলিউশান? দুই খান। ফ্রাস্টু আর মালপো, খামু না।
12 comments:
চমৎকার সব রেজলিউশনস। তবে জটায়ুকে অবিলম্বে থামানো হোক। দু'চারজনই তো বাকি আছে, তারাও যদি নরনারীর সম্পর্কের পানাপুকুরে ডুব দেয়, তাহলে আমরা যাই কোথায়।
Durdhosho! Ekebbaare supaarb! :D Wonderful post, couldn't imagine a better new year special post. :)
এটা শুধু ভাল তাইই না, নিখুঁতও।
ব্যাপক। :)
Ki bhalo likhechish! Shabash topshey!
Amar resolution roilo, oi je bollam, 2015 e Bong Pen er prottek ta post pora, aar comment kora:)
Darun lekha, as always! Amar resolution holo -
1) ektu beshi hashbo, shob kichute bhure kuchke thakchi aajkaal...
2) aar jokhon berate jayi aajkaal, nijeke Lalmohon Babur moto lage - Lady Lalmohini... ektu nijer identity gorbo.
And most importantly,
3) Smartphone protyek 1 minute haat bolabo na... keui boshe neyi amar tweet aar mail porar jonyo... diner sheshe ek bela check korleyi hobe. Eitayi shobcheye difficult resolution... prochondo withdrawal symptom hoy!
Darun legechhe! Tobe shibramer resolution ta baad chole gelo... oi mane Harshabardhan ar Gobardhanbabur kachh theke dhar er loop er byapar ta!! Otao to chit fund i pray! :D
Mairi ki sob resolution. Topshe r resolution tao to nite parten? Aar Abinash babu r resolution?
ভেরি ভেরি ব্রিলিয়ান্ট।
সেলিব্রেট করার মত লিখেছ ভাই তন্ময়। খাসা হয়েছে, অনেকটা বাগচির বাইসেপের মত, কি বলেন ফেলুবাবু?
Osadharon bolleo kom bola hoi ... Dhonnobad amader ei rokom lekha upohar debar jonno .. Happy new year ..
Post a Comment