ঈশ্বরী পাটনী
বিরিয়ানি ক্লেম করেনি, দুধ-ভাত চেয়েছিল। আমরা গোয়া চাইনি, পুরী চেয়েছি। বারমুডা
এখনও ক্রোমোজোমে মিশে যেতে পারেনি, মননে এখনও ঢলা পাজামা, হৃদয়ে লুঙ্গি। দামী স্কচ
গেলাসে বিচ পার্টি? সুপার। অফ কোর্স। ডেফিনিটলি। কলার নাচানো কেস। কিন্তু বিকেলের
স্বর্গদ্বারের বালিতে, পুরনো আনন্দবাজার বিছিয়ে, লেপটে বসে; প্লাস্টিক কাপে চা আর
ঠোঙ্গা ভরা চীনেবাদাম;- সে স্নেহ ভালোবাসার গন্ধ স্বপ্নালু।
প্রতি আধ ঘণ্টায়
অন্তত একবার কানে ভেসে আসবে আত্মীয়তার দাবি ভরা প্রশ্ন “কলকাতা থেকে নাকি?” বা “কদ্দিনের প্ল্যানে
এসেছেন?”। কলকাতার সাউথ সিটিতে ঢুকে ভ্যাঁপসা লাগে, কিন্তু পুরীর ঘিঞ্জি গলিতেও
নিজের ব্যালকনির গন্ধ স্পষ্ট ভাবে পাওয়া যায়। স্মার্টলি রোদ-চশমা চড়িয়ে সান-বাথ
নেওয়ার যোগ্য চামড়া ও শরীর বাগানো যায়নি; জেনেটিক লিমিটেশন, কালচারাল বদভ্যাস। চাপ
রঙ, দাপুটে ভুঁড়ি; খালি গায়ে সলমানি ভঙ্গিমায় বিচ দাপিয়ে বেরালে নিজের অন্তরাত্মা
খিস্তি করবে। তার চেয়ে বরং ফতুয়া গায়ে সমুদ্র স্নানের আদেখলাপনাই ভালো।
সাতসকালে অ্যালার্ম বাগিয়ে
চোখে বুকে সানরাইজের নেশা আর গোড়ালিতে চকাম চকাম মৃদু ঢেউয়ের স্পর্শ। এক কাপ চা,
দু’টো থিন অ্যারারুট। মিহি গুণগুণ- “দেখ রে নয়ন মেলে”। অতঃপর হোটেল ফেরতা দু পশলা
বাড়তি ঘুমিয়ে নেওয়া, অফিসহীনতার সেলিব্রেশন। দ্বিতীয় ঘুম ভাঙানিতে কচুরি-ছোলার ডাল
আর ছানাপোড়ার আবেদন। এরপর বাজার গিয়ে টুক করে চিংড়ি, পমফ্রেট ও কচি পাঁঠা দেড় কিলো
নিয়ে এসে; বাঁধা হোটেলের ঠাকুরকে মেনু ও স্বাদের নুয়ান্সেসগুলো সঠিক ভাবে সমঝে
দেওয়া। তারপর ছুটে যাওয়া সৈকতে, সমুদ্র স্নানের জন্যে, আত্মার আরামের জন্যে। অল্প
চুবনি-অল্প ডাবের জল, ফের চুবনি-মিষ্টিওয়ালার থেকে মদনমোহন কিনে আলতো কামড়। ফের
চুবনি। মাঝে মাঝে আবেগমথিত স্বগতোক্তি; “যে যাই বলুক, সমুদ্র মানেই পুরী। দিঘা
পাতি আর গোয়া বারফট্টাই। পুরী ইজ দ্য রিয়েল ডিল”। ঘণ্টা দুই থেকে তিন লাগাতার
সমুদ্রের ঢেউয়ে উলটোপালটি খেয়ে হোটেলে ওয়াপস। সরু চালের ভাত, মুগের ডাল, ঝুড়ি
আলুভাজা, চিংড়ি মালাইকারি আর পমফ্রেট ঝাল সহযোগে প্রেম-ঢেঁকুর। অতঃপর সামান্য
গড়িয়ে নেওয়ার দাবীতে দেড় ঘণ্টার ভাতঘুম। তারপর মাদুর বগলে সোজা স্বর্গদ্বারের
সৈকত। চোখে সমুদ্র, মুখে কখনও বাদামভাজা, কখনও ডিমের অমলেট। রোম্যান্স, রোম্যান্স।
রোম্যান্স মন ভারী করে আনে, নিজের অজান্তেই গলায় হেমন্ত গোছের ভার নেমে আসে; “এই
বালুকা বেলায় আমি লিখেছিনু...একটি সে নাম আমি লিখেছিনু...”। আহা:। সুযোগ হলে কটকি
চাদর দরাদরি করে না কেনা। সামান্য এগ রোল, অথবা ফুটপাথের স্টল থেকে কেনা ভাজা মাছ।
“ভাজা তেল মে ফিরতি করে মাছ নেহি ভাজনে কা”- এমন সাবধান বানী অম্লানবদনে ডেলিভার
করে চলা।রাতে আড্ডা। ডিনারে কচি পাঁঠার কষানো ঝোল আর রুটি। ভালোবাসা। থকথকে
ভালোবাসাময় পুরীর কয়েকদিন।
পুরী ঠিক যেন সেই
সেজকাকাটির মত যে ডিগ্রী বাগায়নি কিন্তু টন কে টন গল্পের বই পড়ে চলেছে। যার কলকাতায় দামী ফ্ল্যাট হাঁকাবার দম নেই
কিন্তু বারুইপুরের নোনা-দেওয়ালের বাড়ির বাগানটাকে নিজের হাতে সাজিয়ে তোলার হুজুগ
আছে। ডাকসাইটে প্রেমিকা বা পয়মন্ত স্ত্রী নেই; কিন্তু যার ট্রাঙ্কে কলেজ প্রেমের
চিঠিগুলো সযত্নে রাখা আর যার দেরাজে রাখা আছে পূর্ণেন্দু পত্রীর প্রেমের কবিতার বই
যত।
হলিডে বা ভ্যাকেসন
গোয়াতে, কিন্তু ছুটির মর্ম বুঝতে হলে স্ট্রেট টু পুরী। মোহ গোয়াতে রয়েছে গুরু,
কিন্তু মায়ার বাঁধন পুরীতে। স্নেহের প্রলেপ, সহজের সুর। ঢাইকিরিকিরি।
6 comments:
এই লেখাটা পড়ে অনেকদিন বাদে আবার পুরী যেতে ইচ্ছে করছে।
খুব,খুব প্রিয় জায়গা। সুযোগ পেলেই চলে যাই।
আপনার পোস্ট টা পুরী -র মর্মটাকে অদ্ভুত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। মনের প্লেব্যাক এ যেন কালো সমুদ্রের গম্ভীর ডাক বেজে উঠলো।
Aha! Aha! Just, muttoner recipe r nuances gulor modhye majhkhan theke gol kore kaata alu dewa chhilo to?
আহা! সত্য বটেক! এক্ষনেই পুরী ছুটিতে ছুটিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছে।
এটাকে ঠিক লেখা বলা যাবে না বুজলেন,এটা হলো একটা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, অনেকটা সেই ক্লাস ফাইভে গ্রীষ্মের দুপুরে রান্না ঘর থেকে ভেসে আসা মাংসের ঝোল আর নবদ্বীপের দই এর প্রতি ভালোবাসার মতো। যেটা নাকে যেতেই টিভি ছেড়ে স্নানের ঘরে ছুটে যাওয়ার ভালোবাসা।
Puri r jonyo serakam tan chilo na kano jani na. Kintu ei lekha pore puri jawar notun iccha jege uthlo ar sathe puri r jonyo odvut bhalobasa. Ei proti ta ghotona e proti ta bangalir jibone ekbar holeo ghoteche.
Post a Comment