-তুই আমার সাথে
কথা বলবি না বিট্টু?
-না।
-এত রাগ?
-হ্যাঁ।
-এত সাধ করে কথা
বলছি তোর সাথে, তবু তুই মুখ গোমড়া করে বসে থাকবি?
-সাধ করে না ছাই।
ধরা পড়ে গিয়ে এখন অন্য কথা বলা হচ্ছে।
-আচ্ছা বাবা, না
হয় ধরা পড়েই গেছি। কিন্তু তাই বলে তুই নিজের মায়ের ওপর এত রাগ করবি?
-রাগ করবো না?
সেই আমি কবে থেকে ভেবে যাচ্ছি যে ইঁদুরটা আসলে...
-যে ইঁদুর আসলে
সত্যি এসে তোর পড়ে যাওয়া দাঁত নিয়ে যায়, তুই সত্যি এটা বিশ্বাস করতিস বিট্টু?
-কেন করব না?
স্পষ্ট রাখতাম বালিশের নিচে। তারপর রাতে দে ঘুম। সকাল বেলা উঠে দেখতাম বালিশের
তলায় রাখা দাঁত হাওয়া। আর তার বদলে পড়ে রয়েছে হয় এক মুঠো চকোলেট নয়তো অন্য কোন
শুকনো মিষ্টি। কাউকে না জানিয়ে পুরোটা খেয়ে নেওয়া। কী আনন্দ পেতা ভেবে যে ইঁদুর
ব্যাটা দাঁত নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে আর তার বদলে মেঠাই রেখে যাচ্ছে। কী দারুণ আনন্দ।
আর আজ দুম করে এসে তুমি বলছ কোন ইঁদুর-টিদুর নেই। সবটুকুই তুমি করতে।
-তোর ভালো লাগে
বলেই তো করতাম বিট্টু! রাতের বেলা চুপিচুপি এসে তোর বালিশের তলা থেকে দাঁত সরিয়ে
যখন চকোলেটগুলো রেখে দিতাম তখন তুই ঘুমিয়ে কাদা। এবারেও তাই করতাম, কী করে যে তুই
টের পেয়ে গেলি এবার। মুশকিল হল।
-তুমি একটা যাতা
মা।
-ফোকলা মুখে অত
কথা বলতে আছে?
-হে হে হে। ইয়ে।
হাসলাম। তবে রাগ যায়নি।
-রাগ যায়নি মানে?
তুই সত্যিই বিশ্বাস করতিস যে ইঁদুরে তোর পড়ে যাওয়া দাঁত নিয়ে যেত? তা কী কখনও হতে
পারে পাগল? একাশি বছর বয়সে এসেও তুই এসব বিশ্বাস করিস বিট্টু?
-আর বাহাত্তর
ঘণ্টা পেরলেই আমি বিরাশিতে পড়ছি। মাইন্ড ইউ।
-আমি তোর পেটে
নয়, তুই আমার পেটে জন্মেছিস। আমায় মনে করাতে হবে না তোর জন্মদিন কবে। তোর ছেলের
যখন ছোটবেলায় দাঁত পড়েছে, তখন কী তার দাঁত ইঁদুরে এসে নিয়ে যেত? তোর নাতির যখন
দুধের দাঁত পড়েছে, তখন কী ইঁদুরে এসেছে দাঁত নিতে?
-সত্যি বলি? দেখ
মা, ছেলেবেলায় আমার তোমার সব কথাই ছেলেভোলানো মনে হত। তখন মনেই হত যে ওসব ইঁদুরের
কথা ফালতু। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে রাতের বেলা তুমিই আমার বালিশের তলা থেকে দাঁত
সরিয়ে চকোলেট রেখে যেতে। কিন্তু বুড়ো বয়েসে যখন প্রথম দাঁত পড়লো, আমি তো তোমার আর
ছোটবেলার কথা মনে আসতেই একরকম শখ করে দাঁতটা বালিশের তলে রেখে শুতে গেলাম। সকালে উঠে
এক্কেবারে তাজ্জব বনে গেলাম। দাঁত গায়েব, পড়ে আছে একটা ক্যাডবেরি। ডায়েবটিস ধরা
পড়ার পর থেকে তো আর মিষ্টি কিছুই জোটে না। ভাবলাম যদি ইঁদুরের দয়ায় মাঝেসাঝে
চকোলেট মিষ্টি জোটে। যে স্পীডে দাঁতগুলো গচ্চা যাওয়া আরম্ভ করেছিল মা...
-আবার বলে ইঁদুর...
-আরে আমি কী করে
জানবো বল মা যে তুমি ভূত হয়ে আমার আশেপাশেই ঘুরঘুর করে গেছ এতদিন। আমি ভাবলাম হয়তো
এমনটাই হয়। ছেলেবেলায় বিশ্বাস করিনি ভুল করেছি। আর আমার ছেলে বা নাতির দুধের দাঁত
পড়ার সময় ইঁদুরে এসে তা নেয়নি কারণ দুজনে ছেলেবেলা থেকেই হাড় বজ্জাত, ওদের দাঁত
নিয়ে ইঁদুরের কোন কাজ নেই তাই নেয়নি।
-হ্যাঁ রে
বিট্টু, তুই সত্যি খুব শান্ত বাচ্চা ছিলিস...
-ছিলাম কী না বল!
ছিলাম তো! আইডিয়াল বাচ্চা। তাই ভাবলাম... দাঁত-ইঁদুর বুড়ো বয়েসেও মনে রেখেছে। আজ
কেন তুমি বলে দিতে গেলে আমাকে যে দাঁত-ইঁদুর নেই? আমার এতদিনের বিশ্বাস চুরমার করে
কী লাভ পেলে?
-আরে তুই টের
পেয়ে গেলি তাই। আমি ইচ্ছে করে জানান দিতে চাইনি।
-ধুর। ভূতে চাইলে
কী না পারে। তুমি ইচ্ছে করেই আমায় জানান দিলে। যাক, তবু তোমার বলি, তোমার কল্যাণে
অন্তত শেষ বয়েসে ডায়াবেটিক হয়েও সামান্য মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছেটা পূর্ণ হয়েছে। নয়তো
খোকা তো অ্যালাউই করে না। ব্যাটা বোঝে না যে দু’দিনের আয়ু বৃদ্ধির চেয়ে এ বয়সে
আত্মার তৃপ্তি-লাভ কত বেশি প্রয়োজন। ঠিক না বলো মা?
-তাই তো বিট্টু।
-যাক। রাগ অনেক
হল। থ্যাঙ্ক ইউ ফর দ্য চকোলেট্স। আই লাভ ইউ মা। ভীষণ।
-তোকে জড়িয়ে
জাপটে আদর করতে ইচ্ছে করছে বিট্টু। সেই ছোটবেলার মত। তখন তুই কত মিষ্টি দেখতে
ছিলিস রে। কিন্তু উপায় নেই...আমি যে...
-দরকার নেই আমার
ভূতের আদরে মা। ভূতের দেওয়া চকোলেট হজম করছি এই ঢের। কাজের কথায় আসি। শোন মা। সবই
তো গিয়েছে, পড়ে রয়েছে শুধু সবে ধন নীলমণি ওপরের পাটির এই সেকেন্ড মোলারটা। সেটাও
নড়েছে। বেশ ভালোই নড়ছে। বড় জোর এক হপ্তার ব্যাপার। এই দাঁতের বদলে তুমি কোন চকোলেট
খাওয়াবে বল দেখি এবারে। আমি বলি কী, এবারে বরং এক ড্যালা পাটালি অ্যারেঞ্জ করে
দাও। বেশ জমবে। সেই শেষ...
-বিট্টু...
-কী হল।
-বিট্টু, বিরাশী
হল না রে সোনা তোর।
-হল না মানে, আজ
বুধ। শুক্রুর রাতে বারোটা বাজলেই তো...
-শুক্রবারের রাত বারোটা
বাজবে না বিট্টু। তাই দেখা করতে এলাম তোর সাথে...তুই যাতে হঠাৎ ঘাবড়ে না যাস...এই আর কয়েক ঘণ্টা...
-মা গো...
-খুব শিগগিরি
তোকে জাপটে আদর করতে পারবো বিট্টু। খুব শিগগির।
-ধুস। শেষ দাঁতটা
গচ্চা গেল গো।
1 comment:
Just asadharon... Ki sundor bhabna...
Post a Comment