-মহারাজ।
-হুঁ।
-কে। সোমানন্দ?
-আজ্ঞে হ্যাঁ। এবার
যে যেতে হয়।
-পাঁচটা বেজে গেছে?
-পৌনে পাঁচ। ছাত্ররা
সব বসে রয়েছে। বিশেষ অতিথিও এসে পড়লেন বলে।
-যাক। হাইস্কুল শুরু
হল তবে।
-আপনি মাথায় ছিলেন
বলেই...।
-কারোর মাথায় চড়ে
কিছু হয় না সোমানন্দ। এ আশ্রমে আমার আগে যে সব মহারাজ ছিলেন,তাদের অধ্যবসায়, ঘাম,
রক্ত মিশে আছে এখানের প্রতিটি ইটে। নির্মলানন্দ মহারাজের আমলেই এ আশ্রমের প্রাইমারি
স্কুলের শুরু। পরমহংসের কৃপায় কাজ এগিয়েছে। আমরা নিমিত্ত।
-তবু। কত ঝড়ঝাপটা
গেল, এক সময় তো মানে হচ্ছিল প্রাইমারি স্কুলটাও হয়তো টিকবে না...হাই-স্কুলের ফান্ড
তো দূর অস্ত। মনে আছে সেবার সেই কত রকম হুমকি আসতে শুরু হল আশ্রম বন্ধ করে দেওয়ার
জন্য? অথচ আপনাকে সামান্য বিব্রতও কোনদিন কোন মুহূর্তে দেখিনি...।
-বিব্রত কার জন্য
সোমানন্দ? কিসের জন্য? হাইস্কুল না হলে না হত, দায় পরমহংসের, আমাদের তো নয়।
প্রাইমারি স্কুলটাও বন্ধ হলে হত। আশ্রম উঠে গেলে যেত। কত পুকুর বুজে যায় দিনমানে।
কিন্তু সোমানন্দ আমাদের একসাথে কাজ করাটা তো মিথ্যে হত না। এই ফুলের মত শিশুগুলোর
জন্যে ব্যয় করা মুহূর্ত, দিন, মাস, বছরগুলো তো মিথ্যে হত না। নিয়তির দায় মানুষের নয়, আমাদের নয়।
- গুরুভাইদের মধ্যে আড়ালে আবডালে শীতলানন্দ বলে আপনার বদনাম আছে মহারাজ। সে
আপনার অজানা নয়। আপনার গায়ে নাকি ঝড়, বৃষ্টি, দুঃখ, আনন্দ কিছুই স্পর্শ করে না।
এমনকি হাইস্কুলের ফান্ড মঞ্জুর হওয়ার পরেও আপনাকে দেখে মনে হয়নি যে আপনি দশটি বছর
এর জন্যে লড়ে গিয়েছেন।
-শীতলানন্দ। পরমহংসের ভক্ত সব, রসবোধ না থাকলে চলবে কেন?
-চলুন মহারাজ। সময় হয়ে এলো। বিশেষ অতিথিও এসে পড়লেন বলে।
-গা ভারি এলিয়ে আসছে।
-বেশ। এসে বিশ্রাম নেবেন না হয়। আসলে, সত্যিই তো। ঝড়ঝাপটা তো কম পোহাতে হয়নি
আপনাকে। বিশেষ করে গত বছর খানেক। ক্লান্তি আসাটা...
-ক্লান্তিকে ভয় নেই সোমানন্দ। উত্তেজনার অভাবটা ভাবায়।