- ভাই নরেন, তোমাকে হ্যাপি বার্থডে বলতে ভুলে গেছি বলে কিছু মনে করলে?
- ধুর। আরে ও দুনিয়ার জন্মদিনের কী এই জগতে কোন মূল্য আছে ? ও নিয়ে ভেবো না।
- না মানে আমি মুখ্যুসুখ্যু চোর ছ্যাঁচোড় মানুষ ছিলাম। তুমি সাধু। ও পারে থাকলে তো তোমার ধারে কাছেই ঘেঁষতে পারতাম না। এ দুনিয়ায় এসে তুমি যে আমায় বন্ধু বানিয়েছি তাতে আমার যে কী ইয়ে...তবু তোমার জন্মদিনটা যে কী করে ভুলে মেরে দিলাম...
- ছাড়ো দেখি ওসব কথা। তামাক সেজেছি। খাবে?
- জানো তো ভাই নরেন। বেঁচে থাকতে তামাক, আফিং কিছুই বাদ দিই নি। কিন্তু এ পারে এসে ঠিক করেছি ওসব আসক্তিতে আর কাজ নেই।
- আমি কিন্তু ভাই ঢেঁকি, স্বর্গে এসেও স্বভাব পাল্টাতে পারিনি।
- ভাই নরেন, একটা কথা বল দেখি! তোমার চেহারায় একটা বেশ চকমকি ভাব দেখতে পারছি আজ। একশো তিপ্পান্ন গুনে গুনে মৌজ করছো বুঝি? অ্যাঁ?
- চকমকটা ঠিক ধরেছ গুরু। মর্ত্যের জন্মদিন উপলক্ষে আজ একটু ফুর্তি করতে ইচ্ছে হওয়ায় একটা নিয়ম ভেঙেছি। বলতে পারো, একটা বদমায়েশি করে ফেলেছি। তাই আমোদ নিচ্ছি আর কী।
- এ-লোকের নিয়ম ভেঙ্গেছ?
- ঠিক।
- তুমি ভেঙ্গেছ?
- না হলে বলছি কেন।
- তুমি যে দেবতুল্য নরেন! বরপুত্র। তুমি তো বাপু আমাদের মত অকালকুষ্মাণ্ড আত্মা নয়। তোমার তো একটা ইয়ে আছে গো। কী করেছ শুনি! ওয়ার্ডেন জানতে পারলে আবার গণ্ডগোল না পাকায়।
- ওয়ার্ডেনের কথা ভেবেই তুমি মলে। এই জন্যেই বলি তামাক খাও।
- করেছটা কী।
- ভুত হয়ে মর্ত্যে গেসলাম। সামান্য উপদ্রব করেই ফেরত এসেছি।
- ভুত হয়ে তুমি ? নরেন ? তুমি যে এখানের বর্ধিষ্ণু আত্মা? ভূতের উপদ্রব করে যারা তাঁরা সব গোল্লায় যাওয়া ডাকাতে আত্মার দল। আত্মাদের যে মাটিতে নামার অনুমতি নেই...আর ভূতের উপদ্রব করছো সেটা জানলে তো এক্কেবারে ওয়ার্ডেন এসে...
- আর এক বার ওয়ার্ডেনের নাম যদি তুমি নিয়েছো, তখন এ সাধুবেশী ছেড়ে রত্নাকর হয়ে তোমায় দু ঘা দেবে। বলে রাখলাম।
- কিন্তু নরেন, তুমি ভূত হয়ে মর্ত্যে গেলে শেষ পর্যন্ত ? তুমি যে সেখানের দেবতা!
- ছাড় তো। বললাম ফুটবল খেলতে, তার বদলে নিজেরা পেট জুড়ে ভুঁড়ির ফুটবল পুষে গড়াগড়ি যাচ্ছে। তাদের আবার দ্যাবতা। মানুষে আমার আর আগ্রহ নেই ভাই। তবে সেখানে কিছু জ্যান্ত ভূত জড় হয়েছে। তাদের হয়েই নাচন কোঁদন করে এলাম সামান্য।
- জ্যান্ত ভূত? সেটা কী ব্যাপার ভাই নরেন?
- জ্যান্ত ভূত এই জন্যে বলছি যে তাদের মানুষ বলার তো উপায় দেখছি না। তারা নিজের আখের বোঝে না, একে অপরের ঠ্যাং ধরে টানাটানি করে না। বয়েস অতি অল্প অথচ বড়দের দাবড়ানির ভয় করে না, দাদাদের চোখ রাঙ্গানির পরোয়া করে না, লাঠির ভয় নেই, ভুল করতে কসুর করে না। এরা কী মানুষ? শিক্ষিত ঝকঝকে ছেলেপুলের দল, দশে মিলে একের উপকারে রুখে দাঁড়িয়ে পড়ে, এদের অমানুষই বা বলি কী করে। তাই ভাবলাম, এরা ভূতই হবে।
- এরা কারা?
- আমাদের চেয়েও বড় ভূত। মানুষের দল ভারী ডরায় এদের হে। আচ্ছা বন্ধু, সবচেয়ে তাবড় গর্ব কখন হয় বলতো?
- কখন?
- যখন বয়েসে অনেক ছোট ছেলেমেয়েদের দল এমন কিছু একটা করে ফেলে যে তাদের সামনে সম্মানে নুয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। গর্বে চোখে জল আসে গো।
- তা তুমি দুষ্টুমিটা কী করে এসেছো, সেইটে আগে বলো।
- আসলে হয়েছে কী, মর্ত্যের এই কচি ভূতগুলো একটা বিটকেল ওয়ার্ডেন গোছের মানুষকে এরা অনেকদিন ধরে বলে চলেছে “সরে বসো খুড়ো”, “সরে বসো খুড়ো”।
- ওয়ার্ডেন গোছের বিটকেল?
- ওয়ার্ডেন গোছের বিটকেল।
- সেই ভুতগুলো ওয়ার্ডেন গোছের ওই বিটকেলটা সরলে?
- সরতে কী আর চায়। সে এক বিষম যুদ্ধ। বিটকেল ওয়ার্ডেনের পিছনে কত কত ভারী ভারী মানুষের সমর্থন। তাদের তুলনায় কচি ভূতেদের দল তো চুনো মাছের দল।
- বটে? তা ওই কচি ভূতেদের চুনো-দল পারলে? পারলে ওই বিটকেল ওয়ার্ডেনকে টলাতে? ওহ, আমার ওয়ার্ডেন নামটা শুনেই এত নিশপিশ করছে। আসলে আমাদের ওয়ার্ডেন ব্যাটার কথা মনে আসতেই রক্ত গরম হয়ে যায়। কথায় কথায় তম্বি। বাতেলা। উফ! কিন্তু, ওই কচি ভূত ওই মানুষদের সঙ্গে পেরে উঠলে?
- পেরে উঠেছে ভায়া। পেরে উঠেছে। আজই পেরেছে। ওই বিটকেল ওয়ার্ডেন গোছের মানুষকে সরিয়ে দিতে পেরেছে ওরা, এমনই পাগলাটে জেদ ওদের। আর সেটা ঘটেছে আজকেই, আমার জন্মদিনে। আজকাল মর্ত্যে নাকি এমনিতেই জন্মদিনে নাচন-কোঁদনের চল উঠেছে ভারী। আমি ভূত হয়ে পৃথিবীতে নেমে সেই কচি ভূতের দলের সঙ্গে নেচে-কুঁদে আনন্দ করে এলাম। তারা যুদ্ধ জয় করেছে, সে কী অপার আনন্দ। এ জয় বড়দের যুদ্ধ জয়ের মত নয়। এ যুদ্ধ জিতে তারা কেউ রাজ্য জোটাতে পারেনি, রাজকন্যে পায়নি, এমন কি সামান্য এক চাকরি জিতে নেওয়ার যুদ্ধও এটা ছিল না। এটা ছিল আস্থার হয়ে বুক চিতিয়ে লড়ে যাওয়ার যুদ্ধ। কচি ভূতেদের দল ছাড়া এ যুদ্ধ কেউ জিততে পারতো না ভাই। তাই ওয়ার্ডেনের নজর এড়িয়ে নেমে গেলাম। নিজে ভূত তাই ভূতেদের দলে মিশে যেতে বেগ পেতে হল না। ওদের আনন্দে গা ভাসিয়ে গঙ্গা স্নান করে এলাম ভাইটি।
- ওরা জিতলে ভাই নরেন? বিটকেল ওয়ার্ডেনকে সরাতে পারলে? আরিব্বাপ। অদ্ভুত। ওরা কচি ভূত হয়ে পারলে। আমরা দামড়া ভূত হয়ে পারবো না ভাই নরেন? পারবো না?
- কঠিন। ওদের মত ক্ষ্যাপা হয়ে ঘুরে বেড়ানো সহজ নয়। তবে, ওদের জপমন্ত্রটা হাতিয়ে এনেছি। দেখ, তাতে যদি আমাদের এই বেয়াড়া ওয়ার্ডেন সায়েস্তা হয়।
- জপমন্ত্র? কোন তন্ত্র টোটকা গোছের কী?
- তাই হবে হয়তো। ওদের কিন্তু বেশ কাজে লেগেছে।
- কঠিন কিছু ? আমরা আয়ত্ত করতে পারবো নরেন?
- সহজ। ভীষণ। মনে দিয়ে বলি শোন মন্ত্রটা; “হোক কলরব”।
- হোক?
- কলরব।
- হোক কলরব।
(ছবি নেওয়া হয়েছে zazzle dot com থেকে)
2 comments:
Proud, very proud. They must be.
এতদিন ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। প্রতিদিন ভেবেছি,কবে ওদের জয় আসবে। ওরা যে জিতবেই তাতে তো সন্দেহ ছিল না। আজ আমিও উচ্ছ্বসিত, ওদের সঙ্গে আমিও আছি, নিশ্চয়ই ভূত হয়েই কারণ শরীর নিয়ে তো দাঁড়াতে পারিনি, গিয়েছি মনে মনে। লেখক ভূতের হাতে হাত দিয়ে ভূত আমি বলছে হোক কলরব।
Post a Comment