ফেলুদা আশিতে এসে কী করতেন?
- লালমোহনবাবু চলে যাওয়ার পর সবুজ অ্যাম্বাস্যাডারটা নিজের বাড়ির গ্যারেজে এনে রেখেছিলেন। গাড়ির গায়ে সামান্য হাত বুলিয়ে আসতেন। আফটার অল, ভদ্রলোক তো আর শিঙ্গাড়ার ঠোঙা নিয়ে দুম করে উদয় হবেন না।
- মগনলালের নম্বর জোগাড় করে একবার ডায়াল করতেন। বৃদ্ধ বেনারসির গোলার মত কণ্ঠস্বর খড়খড়ে হয়ে কোনক্রমে পড়ে আছে জেনে সামান্য অবাক হতেন। এবং বলতেন “নো হার্ড ফিলিংস মগনলালজি, ইউ হ্যাভ বিন আ ট্রু কম্পিটিটর অ্যান্ড কাইন্ড অফ আ ফ্রেন্ড। আ ভেরি স্পেশাল কাইন্ড ইফ আই মে অ্যাড। আপনার বজরাতে করে গঙ্গা ভ্রমণের অফারটা কী এখনও বহাল রয়েছে?”
- নিজের পুরনো ডায়েরিগুলো ঘেঁটে দেখতেন আরেকবার। শেষ পাতার হিজিবিজিগুলোর মর্ম তোপসেও পারেনি কোনদিন উদ্ধার করতে। আসলে ফেলুদার সঙ্গে প্রেম কানেক্ট করতে কারুর কী ভালো লাগতো? কে জানে। নরম ইমেজ নিয়ে ক্রিমিনালদের পিছনে ধাওয়া করা যায় না।
- তোপসে রাত্রেই ফোন করেছিল। ব্যবসা সূত্রে দিল্লীতে সে আছে বছর কুড়ি হল, কিন্তু এই দিনটা সে ভোলে না। জন্মদিনের উপহারও পাঠিয়েছে সে, খান কয়েক বই। আর এক প্যাকেট স্পেশাল ডালমুট। হগ মার্কেটের ডালমুটের সে টেস্ট অবিশ্যি এখন নেই। তাছাড়া এ জিনিষ দিল্লীর। তবু, তোপসের পাঠানো তো।
- টিনটিন আর মহাভারত পড়তেন; দু’ঘণ্টা।
- বৈকুণ্ঠ-ছন্দে কবিতা ভাঁজার চেষ্টা করতেন।
- চাগিয়ে ওঠা নতুন দু’টো সম্পর্ককে এ দিনে ছুঁতে হতোই। এদের ঠিক দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাস্কেটিয়ার্স না বলা গেলেও, দু’টুকরো খড়কুটো তো বটেই। বিকেলে তারা আসবে। ডিনারে সেরে যাবে। মুকুলের যদিও তাকে ফেলুকাকু বলে ডাকা উচিৎ, তবে সে ফেলুদা বলেই ডেকে থাকে। তৃতীয় সঙ্গীটিকেও মুকুলই নিয়ে আসবে। বলা ভালো মুকুল বয়ে নিয়ে আসবে কারণ মন্দার বোস নব্বুই পেরিয়েছেন, কোমরের নিচ থেকে প্যারালেসিস। তবে আগের মতই গপ্পিয়ে। দু’জনে এসে মাঝেমাঝেই আড্ডা জমিয়ে বসে রজনী সেন রোডে। জটায়ুর ফ্লেভার আলাদা, তবে মন্দার বোসের বাতেলাগুলো শুধরে দিতে মন্দ লাগে না। মুকুলের হাবভাবে কোথায় যে তোপসেটা উঁকি দেয় সেটা নিজেও ঠাহর করতে পারেন না। অবশ্য ওদের সামনে এত কথা বলেন না। স্রেফ শুনে যান। আর মিচকি হাসেন। বিশেষ করে মুকুল যখন মন্দার বোসের গাঁজা-গপ্প নিয়ে খুনসুটি করে, মন ভরে যায়। ওরা যে কতক্ষণে আসবে, এই ভেবে দুপুর কেটে যাবে।
- মন শক্ত করে আজ ওকে ফোন করতে হবে। ছেলেটা ভালো, শান্ত; ধারালো কথা বলতে ইচ্ছে করে না। এই ভেবেই এত দিন বলেননি। কিন্তু অনেক হয়েছে। ওকে বলা দরকার। আজ তিনি বলবেনই ; “এবার থামো সন্দীপ”।
(ছবি নেওয়া হয়েছে filmfare.com থেকে)
7 comments:
ভালো লাগলো•••••
বহু দিন ধরে তোমার লেখা পরছি , খুব ভালো লাগে। তোমার লেখার বড় পাখা বলতে পার। এটাও দারুন , তবে কি .... এত দিন ধরে তোমার লেখা পরে শেষ পাতে একটা match ঘোরানো twist expect করে ফেলি। সেই চক্করে এই chit fund এর বাজারে এই মুকুল কে আবার সেই মুকুল ভেবে ফেলেছিলাম। .. হে হে হে। ... twist ঢোকাও নি। .. বাঁচালে।
লিখেছেন ভালো, কিন্তু সন্দীপ থামবে কেন?
বৃদ্ধ লিখেছিলেন - বাল্যকালে একদিন উত্তমরূপে পোলাও খাওয়া হইয়াছিল বলিয়া যে অবশিষ্ট জীবন ভাতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করিতে হইবে, এমন কোনো কথা নাই।
আমার কেন জানি না মনে হয় ফেলু জ্যাঠা সিধু জ্যাঠার সার্থক উত্তরসূরি হয়ে যেতেন। আর তপসের ছেলেপুলেদের উইকিপিডিয়া দেখে সাধারণ জ্ঞান না বাড়িয়ে কাগজে লেখা বই পড়তে উপদেশ দিতেন।
সন্দীপকে বললেই বা কি! ব্রেক ফেল করে গেছে যে...!
বে বে করছো কেন? সত্যিই তো এমনটাই ঘটেছে। চরিত্ররা যে সব লেখকের ত্রিনয়নেই বাস করেন।
দারুণ দারুণ।
সন্দিপ রায় কে বলাটা খুবই দরকার মাইরি
Post a Comment