পাপান গল্প শুনতে ভালোবাসতো।
বাবু হয়ে বসে, গালে হাত দিয়ে, হা করে। সবার কাছে সে বসে যেত গল্পের আবদার নিয়ে।
বাবার কাছে, মায়ের কাছে, মিমিপিসিমার কাছে, বুবাইদাদার কাছে, দিদানের কাছে, পোষা
কুকুর মিতুর কাছে কাছে, মেজকার কাছে।
দেখা হওয়া মানেই
তাকে গল্প বলতে হবে। না বললেই ছেলের চোখ থেকে টপটপিয়ে জল। গল্প না বলে কোন উপায়
থাকতো না কারোর। আর একটা গল্পই বারবার শুনতে চাইতো পাপান, অন্য কোন গল্পে তার মন
ভরতো না।
সকলের স্বপ্নে এসে
সে বায়না ধরতো, “বল না, সেদিনের পর থেকে তোমরা আমায় স্বপ্নের বাইরে দেখতে পাও না কেন।
সেদিনের গল্পটা বল না
প্লীজ"
প্লীজ"
**
“মৃদুল পার্কের বেঞ্চে আধঘণ্টা ঠায় বসে
রইলে। নীলা এখনও আসেনি। একবার ভাবলে সিগারেট ধরাবে, কিন্তু পারলে না। আত্মা'র পকেটে আবার গোল্ডফ্লেকের প্যাকেট আসবে কোত্থেকে!
কিন্তু নীলা এত দেরি করছে কেন? একই সাথে তো অ্যাকসিডেন্ট ঘটলো! তবে কি নীলা বেঁচে গেছে ? এ দুনিয়ায় প্রথম দিনেই একটা ঘাড় মটকাতে হবে ভেবে মৃদুল সামান্য লজ্জা পেলে। "
কিন্তু নীলা এত দেরি করছে কেন? একই সাথে তো অ্যাকসিডেন্ট ঘটলো! তবে কি নীলা বেঁচে গেছে ? এ দুনিয়ায় প্রথম দিনেই একটা ঘাড় মটকাতে হবে ভেবে মৃদুল সামান্য লজ্জা পেলে। "
**
বেশ খানিকক্ষণ এপাশ-ওপাশ
করার পরেও ঘুম এলো না নিমাইয়ের। বিশ্রী গরম, দরদর করে ঘামছে সে। ফ্যানের হাওয়াও
গায়ে লাগছে না, লোডশেডিং বোধ হয়। জানুয়ারি মাসে এমন গরম পড়লো যে বিছানা তেতে
উঠেছে। সে ভাবলে খাট থেকে নেমে একটু হাঁটাহাঁটি করে নেবে। এ গরমে শুয়ে থেকে কী
লাভ। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার, শরীরটা টেনে কিছুতেই উঠতে পারলে না নিমাই। দেহ
অসাড় মনে হল, গাঁটে গাঁটে প্রচণ্ড ব্যথা।
আচমকা মনে হল এ খাট
ঠিক তাঁর নিজের মনে হচ্ছে না, তিনি একলা মানুষ কিন্তু শোয়া হয় ডাব্ল বেডে। কিন্তু
এতো সিঙ্গেল খাট যেন। আর তার পাশেই আরেকটা খাটে আরেকজন শুয়ে আছে মনে হল। নিমাইয়ের
মনে হল তিনি একটা বিশ্রী স্বপ্ন দেখছেন, নয়তো তার খাট পাল্টেই বা যাবে কেন, পাশে
অন্য খাটই বা থাকবে কেন, তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেনই বা না কেন, আর জানুয়ারি
মাসে এমন বিশ্রী গরমই বা পড়বে কেন।
এমন সব বিশ্রী
চিন্তা মাথায় ঘোরাফেরা করছে এমন সময় পাশের খাট থেকে আওয়াজ এলো-
“না না, এটা স্বপ্ন
নয় নিমাইবাবু। যেখানে আপনি শুয়ে আছেন সেটা খাট বটে, তবে ঠিক বিছানা বলা যায় না।
ওইটে আপনার চিতা এইটে আমার। ওঠার চেষ্টা করে কোন লাভ নেই, বুঝলেন কী না!”
3 comments:
Porer jonme jeno tor moto likhte pari.
সে কী, টাটকা বছরের শুরুতেই এত মৃত্যুচিন্তা কেন! খুব ভালো হয়েছে গল্পগুলো, তন্ময়।
Darun
Post a Comment