Monday, February 2, 2015

অমু ও জমানো

অমু, সে ছোটবেলা থেকেই খুব জমাতে ভালোবাসতো। বিভিন্ন রকম জমানোর সখ। কখনও কেতাবি, কখনও অদ্ভুত।

ক্লাস টু’তে জমানো শুরু করেছিল বাসের টিকিট দিয়ে। কলকাতার প্রাইভেট বাসের সরু লম্বা টিকিটগুলো। কয়েক বাণ্ডিল জমা হওয়ার পর মতি পাল্টে ট্রেনের টিকিট জমানো শুরু করেছিল। তখনও ইলেকট্রনিক টিকিটের জমানা আসেনি, হলদে রঙের ছোট টিকিট যাতে ঘটাং করে কালো কালিতে তারিখ ছাপা হত। সেই ট্রেনের টিকিট জমিয়েছিল এক থলে। দেশলাই আর সিগারেটের বাক্সও একই সাথে জমাতে আরম্ভ করেছিল, একটু বড় বয়েসে এসে। আগন্তুক সিনেমাটা দেখে সে নতুন শব্দ শিখল নিউমিসম্যাটিস। কয়েন জমানো শুরু করেছিল সেই দেখে। খান কয়েক ব্রিটিশ, নেপালি আর বাংলাদেশি কয়েন জোগাড় করতে গিয়েই টের পেলে যে ছাত্র বয়েসে এই শখে টু পাইস বেশি খরচ হওয়ার চান্স আছে, বাপের যোগান তেমনটি নেই। সেই হিসেবেই স্ট্যাম্প জমানোর দিকেও যায়নি সে।

বাব্‌ল গামের সঙ্গে পাওয়া যেত ক্রিকেটার আর ফুটবলারদের ছবি, সেই ঝোঁক চালিয়েছিল বেশ কিছুদিন। মার্বেল জমানোর শখও হয়েছিল বেশ কিছুদিনের জন্য, তিন বয়াম ভর্তি রঙিন মার্বেল আজও রয়েছে। এমনকি একবার বিয়েবাড়ির মেনুকার্ড জমানোর উদ্ভট শখ নিয়েও কিছুদিন কাটিয়েছিল।  জুরাসিক পার্ক দেখে শুরু করেছিল ডাইনোসরদের স্টিকার আর তাদের সম্বন্ধে বিভিন্ন ট্রিভিয়া জোগাড় করে একটা পুরনো ডায়েরীতে জড়ো করা; তখনও গুগ্‌ল জীবনে আসেনি- কাজেই সেই ডাইনোসর ডায়েরী উল্টে পাল্টে দেখতে ভীষণ ভালো লাগতো।

এমনি ভাবে লাগাতার কোন না কোন জমিয়ে যাওয়ার শখ কালটিভেট করে যেত অমু। বিভিন্ন পাখির পালক, অটোগ্রাফ, পুরনো জমানার কাগজের বিজ্ঞাপন; কত কী। পুরনো শখটা আচমকাই তাকে ছেড়ে চলে যায় কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে। শেষ যে জমিয়েছিল চিঠি। নীলার লেখা চিঠি, ক্লাস টুয়েল্ভ থেকে ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত।

তারপর থেকে বাড়তি মেদ ছাড়া আর কোনদিন কিছু জমায়নি অমু।         

2 comments:

malabika said...

এই শেষ জমানোটাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত, কারণ এর হারানো বা চুরির ভয় নেই। অন্য জমানোর জিনিষগুলো সামলাতে হয়; খুঁজে খুঁজে আনতে হয়, কিন্তু এইটিকে দেখ, কোন কষ্ট নেই। নিজেই এসে জুড়ে বসল।

Unknown said...

Touching sotti