সেদিন সকালে উঠে
দিবাকর বুঝলেন যে তিনি নিজের খাটে নেই। আশেপাশে চেয়ে দেখলেন যে ঘরটাও তার
বৈদ্যবাটীর বাড়ির নয়। এমন বিশ্রী হলদে দেওয়ালের ঘর আর দু’টি দেখেননি দিবাকর। তবে
কী তিনি কিডন্যাপ হয়েছেন? কিন্তু তিনি কিডন্যাপ হবেন কেন? পোস্টঅফিস ক্লার্কের
চাকরীতে ক’পয়সাই বা আয়। আর তিন কুলে তার আছেটাই বা কে যে তাকে ছাড়াতে
কিডন্যাপারদের টাকা দেবে?
**
-
কী ব্যাপার দিবাকরবাবু?
অমন হাঁকুপাঁকু করছেন কেন?
-
আপনি কে? আপনার গলাটা
কোথা থেকে আসছে? আমি দেখতে পারছি না কেন আপনাকে?
-
এই ঘরের এক কোণে একটা স্পীকার
লাগানো আছে। আমার কণ্ঠস্বর আপনি সেই স্পীকার থেকেই শুনতে পারছেন।
-
আমি কোথায়?
-
নিস্পারনিস্কে।
-
নিস কী?
-
রাশিয়ায় নাকি মশাই?
-
না।
-
তবে?
-
মুস্কেলে।
-
মু...?
-
মুস্কেল।
-
সেটা কোথায়?
-
লিয়াপিয়াস্কে।
-
লি...।
-
লিয়াপিয়াস্ক।
-
গুল মারছেন মশাই? ভূগোলে
লেটার ছিল আমার মাধ্যমিকে।
-
লিয়াপিয়াস্ক গ্রহের কথা
আপনাদের গ্রহে কেউ জানেনা দিবাকরবাবু। আপনাদের গ্রহ থেকে অনেক অনেক দূরে আমাদের এই
গ্রহ। তো লিয়াপিয়াস্ক গ্রহের মুস্কেল অঞ্চলের নিস্পারনিস্ক গ্রামে আপনি আছেন এখন।
-
ধুর।
-
সত্যি বলছি।
-
আপনি বাংলা বলছেন গড়গড়
করে...।
-
আমি আমাদের ভাষাতেই বলছি।
আমার ভাষা ওই স্পীকার ডি-কোড করে আপনাকে আপনার নিজের ভাষায় শোনাচ্ছে। আপনার
ভাষাটাও আমি সেরকম পদ্ধতিতেই বুঝতে পারছি।
-
যা গাঁজা গপ্প ঝাড়ার ঝেড়ে
দিন। আমি কিছু বলছি না।
-
দুম করে নতুন জায়গায় এসে
পড়েছেন বলে আপনি রাগ করছেন দিবাকরবাবু?
-
আপনার নামটা বললে আমার
কথাবার্তা বলতে একটু সুবিধে হয় বুঝলেন। একেই তো আপনি মেঘনাদের মত আড়াল থেকে জ্ঞান
ঝাড়ছেন।
-
আমাদের এখানে নাম টামের
বিশেষ চল নেই। আপনার ইচ্ছে মত নামে আমায় ডাকতে পারেন।
-
লে হালুয়া।
-
ঠিক আছে। লে হালুয়া
নামটায় আমার আপত্তি নেই।
-
বোঝ! বেশ। আচ্ছা
লেহালুয়াবাবু, আমায় কিডন্যাপ করে এনেছেন কেন?
-
আপনাকে আমরা নিয়ে আসিনি,
বিশ্বাস করুন।
-
আপনার শ্রীবদনটুকু দেখতে
পারছি না, আবার বিশ্বাস। যাক গে, সেসব বাদ দিন। আমায় এ ভাবে আর ক’দিন রাখবেন। নাকি
খুন করবেন?
-
আমরা খুন করি না।
-
যাক। বাঁচা গেল। তবে আমায়
পুষবেন?
-
দু’ঘণ্টার বেশি আপনাকে
এখানে থাকতে হবে না।
-
তাহলে এনেছেনটা কেন?
-
আপনি নিজে এসেছেন এখানে
-
আমি এসেছি? কিসের জন্য?
কেন?
-
সিদ্ধিলাভ করেছেন বলে।
-
সিদ্ধি টিদ্ধি খাওয়ার কথা
বলছেন নাকি?
-
বোঝাই আপনাকে। আপনাদের
দুনিয়া থেকে বহুজন সিদ্ধিলাভ করেছেন, অর্থাৎ আমাদের দুনিয়ায় প্রবেশ করেছেন।
-
কী? এটা কী স্বর্গ নাকি
লেহালুয়া ভাইটি? আমি কিন্তু এখনও মরিনি। যদি না গতকাল মাঝরাতে স্ট্রোক-ট্রোক হয়ে
থাকে।
-
স্বর্গ বলতে আপনি ঠিক কী
বলতে চাইছেন সেটা আমাদের ট্রান্সলেটর ঠিক ঠাহর করতে পারছে না দিবাকরবাবু। আমি কী বলতে
চাইছি সেটা বুঝিয়ে বলছি। আপনাদের দুনিয়াতে যারা যারা সিদ্ধিলাভ করেছেন, তাদের মধ্যে
গৌতম বুদ্ধের নাম নিশ্চয়ই আপনি শুনেছেন?
-
সন অফ শুদ্ধোদন। অফ কোর্স।
-
তো এই সিদ্ধিলাভ বা
নির্বাণ ব্যাপারটি আর কিছু না। কনসেন্ট্রেশন কে উচ্চতম পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে একটা
বিশেষ ডাইমেনশন আবিষ্কার করা যেই ডাইমেনশন সে মানুষের অন্তরের সমস্ত এনার্জি বা
আত্মাকে ধাবিত করে আমাদের এই গ্রহের দিকে। আমাদের এই গ্রহ লিয়াপিয়াস্ক আপনাদের
পরিচিত ডাইমেনশনের ব্রহ্মাণ্ডে নেই।
-
আমার সমস্ত কিছু গুলিয়ে
গুলিয়ে যাচ্ছে লেহালুয়া সাহেব। অল্প বমি পাচ্ছে।
-
চিন্তা করবেন না। মোদ্দা
কথা হচ্ছে আপনাদের দুনিয়ায় যারা নির্বাণলাভ করেন, তার কোন জাদুর মধ্যে প্রবেশ করেন
না। কঠোর তপস্যা করে নিজের মন সংযোগ এমন
পর্যায়ে নিয়ে যান যে তাদের জীবনের ভাইটাল ফোর্সটুকু নতুন ডাইমেনসনের রহস্যটুকু ভেদ
করে অতি-মহাজাগতিক পথ পার হয়ে এ গ্রহে চলে আসে। অনেকে এসেছেন। যীশু, চৈতন্য,
মহম্মদ বা বুদ্ধের নাম আপনি শুনে থাকবেন। এই সহজ ডাইমেনসন পরিবর্তনটুকুকেই আপনারা
অবিশ্বাস্য দৈবিক কিছু একটা ঠাউরে বমকে থাকেন।
-
এসব কথা মশাই আপনি তামিল
ভাষাতেও বলতে পারতেন, বুঝলেন লেহালুয়াবাবু। একই রকম বুঝতাম। যাক গে, তা আমি তো
তপস্যা টপস্যা করিনি। আমি এপারে এলাম কী করে?
-
কাল রাত্রে আপনি একটি
বিশেষ সময়ে আপনার মনঃসংযোগ ভয়ানক উপরে চলে গেছিল দিবাকরবাবু। আপনি নিজেও টের
পাননি, নির্বাণ কখন আপনাকে এসে স্পর্শ করেছিল। নিজের অজান্তেই আপনি নতুন ডাইমেনসন
তথা আমাদের গ্রহের দিকে আসার অতি-মহাজাগতিক পথটি নিজেই আবিষ্কার করে ফেলেন এবং
ঘুমের মধ্যে এদিকে চলে আসেন। কিন্তু আপনি যেহেতু নির্বাণ চেয়ে এ পথ আবিষ্কার
করেননি, অজান্তে চলে এসেছেন, সেহেতু আপনি খানিক পরেই নিজের ডাইমেনসনে, নিজের
বৈদ্যবাটীর ঘরে ফেরত চলে যাবেন।
-
বটে? নিজের অজান্তেই আমি
নির্বাণ হাসিল করে এ দিকে চলে এসেছি? তা গতকাল কখন এমনটি ঘটলো বলুন তো লেহালুয়া
মশাই? কখন আমার মন সংযোগ এমন ধুন্ধুমার লেভেলে পৌঁছে গেল যে আমি সিদ্ধিলাভ করলাম?
-
ওই, কাল রাত্রে আপনি যখন
মটন বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ নিয়ে খেতে বসেছিলেন। নির্বাণ লাভটা তখনই ঘটে বুঝলেন। তার
জোরেই আপনি এখন এদিকে। তবে চিন্তা নেই, খানিক পরেই আপনি ফেরত যাবেন। বিরিয়ানির
জোরে এর বেশি আর এদিকে থাকতে পারবেন না।
-
ফেরত যাব ? যাক।
নিশ্চিন্ত করলেন লেহালুয়াবাবু। ভয় পাচ্ছিলাম যে সিদ্ধিলাভ করে আবার আপনাদের এই
বিটকেল গ্রহেই না থেকে যেতে হয়। আফটার অল, আপনাদের এখানে তো আর ব্যারাকপুরের
দাদা-বৌদির বিরিয়ানি পাওয়া যায় না। নিন, এবার ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থাটা একটু তুরন্ত
করে ফেলুন দেখি।
5 comments:
গল্পটা পড়ে মাথাটা এমন ঘুলিয়ে গেল যে এখন সত্যিই একটু একটু বমি বমি লাগছে।
Barrackpore er dadaboudi ftw!
দাদা-বৌদির মটন বিরিয়ানির সাহায্যে নির্বাণ লাভ?? কিছু বলার নেই।
Durdhorso
Eto Biriyani thakte Seshe Dada Boudi ;)
Post a Comment