Tuesday, March 31, 2015

#MyChoice



ঠা ঠা রোদ। প্যাঁচালো লম্বা দুর্দান্ত লাইন; ভোট দেওয়ার। সেই লাইনে দ্রাবিড়ের ফোকাস নিয়ে দাঁড়িয়ে অমু। ডান হাতে ছাতা, বাঁ হাতে শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের একটা বই মেলে ধরা। ঝড়ের গতিতে শীর্ষেন্দুর ভূত, ডাকাতের অ্যাডভেঞ্চার পেরিয়ে যখন বইটা খতম করলে অমু, তখন সে ইভিএম মেশিনের সামনে। হঠাৎ কী মনে হল। অমু বইটা বগল দাবা করে ঝপ করে বুথ ছেড়ে চলে এলে ভোটটা না দিয়ে। মনে মনে ভাবলে “ #MyChoice”; মুচকি হাসলে অমু। 

**
অপু। নিজের উপন্যাসের খসড়া ছিঁড়েখুঁড়ে উড়িয়ে দিয়েছিল। দ্যাট মাই ফ্রেন্ড ওয়াজ হিজ চয়েস, এ ডেয়ারিং মোস্ট চয়েস। 

**
- তুমি আমার বাপির দেওয়া চাকরীটা নেবে না?
- না।
- কেন?
- ক্লার্কের কাজ আমার পোষাবে না।
- টিউশানি পোষায় আর কর্পোরেটে চাকরি পোষাবে না। তোমার কী আমায় বিয়ে করার ইচ্ছে নেই?
- তোমার বিয়ে করতে চাই। তোমার বাবার মাতব্বরিকে না।
- তুমি চাকরিটা নেবে না? তুমি ভালো করেই জানো চাকরিটা না নিলে আমাদের বিয়ে সম্ভব নয়। আমার সাথে এতদিন প্রেম করে এখন বিয়ে করতে চাইছ না? তোমার পেটে পেটে এত শয়তানী?
- আমার পেটে শয়তানী আছে কী না জানিনা। তোমার মগজে লজিকের থলিতে লিক আছে। ও চাকরি আমি নেবো না। দ্যাট ইজ মাই চয়েস। টিউশানি করা ছেলেকে বিয়ে করবে কী না, সেটা তোমার চয়েস।

**
অনিলবাবুর সঙ্গে খবরের কাগজের যোগাযোগ শুধু ক্রস-ওয়ার্ড পাজ্‌লটি পর্যন্ত। টেলিভিশনের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে শুধু হপ্তায় তিনটে কার্টুন শো। অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে শুধু নিজের টেবিল আর তার ওপর জমা ফাইলগুলো পর্যন্ত। কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ বলতে নিজের বাড়ির ছাতের উত্তর কোণটি পর্যন্ত। মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে মানিব্যাগের ময়লা সাদা কালো ছবিটা পর্যন্ত। প্রেমের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে শরৎচন্দ্রের নভেল পর্যন্ত। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে আপিসে বস, বাসে কন্ডাক্টর আর বাড়িতে আয়না পর্যন্ত। অনিলবাবুর জীবনের চয়েসগুলোকে পাবলিক হুল্লোড়ের সামনে রেসের মাঠে দৌড়তে হয় না। 

**
রোববার। চৈত্র সেলে যাওয়ার কথা দীপুর। বৌকে নিয়ে। 
এমন সময় হঠাৎ দীপুর কাতর স্বীকারোক্তি; 
- “হ্যাঁ গো শুনছো...”
- “আবার কী হল?”, মিসেস দীপু ‘আবার কী হল’ বলে নাক কুঁচকোতে পছন্দ করেন।
- “বসের ফোন এসেছিল। অফিসে ক্রিটিকাল ব্যাপার। আমায় যেতেই হবে”।
- “হোয়াট ননসেন্স। রবিবারেও অফিস? আর এদিকে শপিঙয়ের প্ল্যান হয়ে আছে। গড়িয়াহাটে রীনারা ওয়েট করে থাকবে। হাউ এম্ব্যারেসিং।“
- “প্লীজ সোনা। প্লীজ। ইয়ার এন্ডের সময় কী না। ভারী চাপ। প্লীজ”। 
কোণ রকমে মান বাঁচিয়ে অফিস আসে দীপু। সুনসান অফিসঘর। চেয়ারে হেলান দিয়ে টেবিলের ওপর পা লম্বা করে দেয় সে। প্রথমে টেলিফোনে পিৎজার অর্ডার দেয়। তারপর গা এলিয়ে দিয়ে মুখের সামনে মেলে ধরে অফিসের গোপন দেরাজ থেকে বের করে আনা “বাঁটুল দ্য গ্রেট অমনিবাস”। 
এটাও কী এক ধরনের অ্যাডালটারি? ক্ষণিকের চিন্তা উদয় হয় দীপুর মনে। পরমুহুর্তেই মনে হয়, “ধুর শালা, মাই চয়েস”। 


2 comments:

malabika said...

এই যে ব্লগটা বেরোন মাত্র গোগ্রাসে গিলে ফেললাম, এই পর্যন্ত মাই চয়েস ঠিক আছে; কিন্তু তারপরে মাই চয়েস কেন আর চয়েস মত বেগবতী হয় না? আমি কেন যে এরকম ভাবে accordingbto my choice লিখে যেতে পারি না।

chupkotha said...

Dipur choice tai best.. Amar je ota korte ki ichhey kore ek ek somoy.. :)