- কাঁদছ?
– কাঁদব না?
– না মানে; কেঁদে লাভ নেই তো।
– তুমি এমন ভোম্বল মার্কা কথা বলা বন্ধ করবে? আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর তোমার সঙ্গে হয়নি, হয়েছে অন্য পাত্রের সঙ্গে। কাঁদব না? আর শোনো; তোমারও চোখ ছলছল করছে। স্পষ্ট দেখতে পারছি।
– পাসিং সেন্টিমেন্ট । আর ইয়ে, তোমায় সান্ত্বনা দিয়ে পিঠও চাপড়ে না দিয়েই বা উপায় কী বল। আমি একটা বেখাপ্পা ছেলে। চালচুলো নেই। তুমি এক প্রকার বেঁচেই গেলে। আমার সঙ্গে বিয়ে হলে কী পেতে?
– কী দারুণ সংসার হত বলো তো। তোমার ফতুয়ার বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে দিতাম।
– এখন তোমার সায়েব বরের কোটের বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে দিও না হয়।
– ধুস। তুমি আর আমি মিলে ছাদে মাদুর পেতে বসে কত গল্প করতাম সন্ধ্যেবেলা। এক সাথে গাইতাম; অতুলপ্রসাদী। আর সাথে থাকতো এক বাটি ফুলুরি।
– তোমার হবু বরের সঙ্গে তুমি রুফ টপ পশ্চিমা রেস্তোরাঁয় বসে দাঁত ভাঙা নামের মন ভরানো সব খাওয়ার খাবে। ডিস্কো নেচে রাত ভর হুল্লোড় করবে।
– তোমার সাথে বিয়ে হলে আমরা দু’জনে পাড়ার ক্লাবের ফুটবল ম্যাচ দেখতে যেতাম। ফেরার পথে ফুচকা খেয়ে পেট ভরিয়ে বাড়ি ঢুকতাম।
– আর এখন তোমার হাই ফাই বর তোমায় টি টুয়েন্টি ম্যাচ দেখাতে নিয়ে যাবে। ফেরার পথে তোমাদের থাকবে কে-এফ-সি বা পিৎজা হাট। কত মজা বল দেখি?
– তুমি একটা যাতা। আমার হবু বর পারবে আমার সাথে দেশপ্রিয় পার্কের সস্তা হোটেল কেবিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারতে?
– আরে সে তোমায় নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে। গাড়ির অডিও প্লেয়ারে সফ্ট বিট্স আর চোখে সানগ্লাস। তার জেল্লাই আলাদা।
– তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে যে আমাদের বিয়ে হলে গরমের দুপুরে তুমি আমায় আম পোড়ার শরবৎ করে দেবে। আর লালবাজার থেকে স্পেশাল চায়ের পাতা এনে আমায় লেবু চা করে খাওয়াবে। আমার এই বর আমায় কাঁচকলা দেবে।
– আরে না গো! কাঁচকলা কেন দেবে? তোমার হাজব্যান্ড তোমায় গরমের দুপুরে ক্লাবে চিল্ড বিয়ার খাওয়াবে। সন্ধ্যের অবসরে স্কচ। সেলিব্রেশনে শ্যাম্পেন।
– তুমি না থাকলে আমায় শঙ্খ ঘোষ কে পড়ে শোনাবে?
– সে তোমার জন্যে গীটার বাজিয়ে হদ্দ হবে।
– তোমার সাথে ভোরে উঠে হাঁটতে বেরতাম। হাঁটতে হাঁটতে কত গল্প। ফেরার পথে সবজি বাজার করে থলে ভরে বাড়ি ফিরতাম।
– এ সব আদ্যিকালের ব্যাপার। তোমার নতুন বরের সঙ্গে তুমি নাইট আউট চিনবে। নিপাট রাত জাগা। আড্ডা হুল্লোড়ে রাত জাগা।
– দু’জনে মিলে একসাথে দুই বাবা আর দুই মাকে মাঝে মাঝে প্রণাম করতাম। দারুণ মানাত আমাদের। একদম ট্যাঁপা আর টেঁপি।
– নতুন বরের সাথে মিলে বাপ-মা’দের জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খাবে। মিস্টার অ্যান্ড মিসেস। সে স্নেহের পরিসর কম কিসে? তুমি কিন্তু তোমার বর কে নিয়ে বড্ড বেশি নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছ।
– তুমিই বা কি, একটা অন্য ছেলে তোমার প্রেমিকার হাত ধরে টেনে নিয়ে ড্যাং ড্যাং করে চলে যেতে বসছে, আর তোমার যেন কিছুতেই কিছু এসে যাচ্ছে না।
– আমার ফিউচার নেই গো। তোমায় বেঁধে রেখে কি লাভ? আমার সাথে লেপটে থাকলে শেষে তুমিই মরবে। আর তাছাড়া আমি জানি, তোমার মনের কোন এক কোণে চেপেচুপে আমার স্মৃতিটুকু থেকে যাবেই। তুমি জাত নস্টালজিক। আচ্ছা, তোমার হবু বরের নামটা তো বললে না।
– ওর নাম ফার্স্ট জ্যানুয়ারী। কেমন কাঠ-খোট্টা বল।
– কাঠ-খোট্টা কেন হতে যাবে? বেশ নাম তো। ফার্স্ট জ্যানুয়ারী। আমার মত থপথপে নাম নয়। তুমিই বলো, এই যে আমার নাম, শ্রী পয়লা বৈশাখ। এটা কোন নাম হল?
– তুমি আমায় বিয়ে করবে না তো করবে না। কিন্তু ফার্স্ট জানুয়ারি নিয়ে ছিঁচ কান্না জুড়ে ডিফেন্ড করা বন্ধ কর।
– হে হে হে।
– অমন বোকা হাসিতে ভুলছি না।শোন, তোমার একটা জিনিষ আমার কাছে জমা করে রেখে যেতে হবেই। নয়তো ছাড়ছি না তোমায়।
– কী জিনিষ গো?
– হাল খাতা। তোমার হালখাতাটা আমায় দিয়ে যেও প্লীজ।
– হালখাতার যে আজকাল কোন দাম নেই গো।
– স্মৃতির দাম নেই বুঝি? প্লীজ পয়লা, জানুয়ারির হাতে আমায় ঠেলে দিচ্ছ দাও, আমি কিছু বলছি না। কিন্তু তোমার হালখাতার স্মৃতিটুকু অন্তত আমাকে দিও। দেবে না ?
– বেশ। দেব তোমায়। হালখাতার স্মৃতিটুকু। ইয়ে, ভালো থেকো। কেমন?
– কাঁদব না?
– না মানে; কেঁদে লাভ নেই তো।
– তুমি এমন ভোম্বল মার্কা কথা বলা বন্ধ করবে? আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর তোমার সঙ্গে হয়নি, হয়েছে অন্য পাত্রের সঙ্গে। কাঁদব না? আর শোনো; তোমারও চোখ ছলছল করছে। স্পষ্ট দেখতে পারছি।
– পাসিং সেন্টিমেন্ট । আর ইয়ে, তোমায় সান্ত্বনা দিয়ে পিঠও চাপড়ে না দিয়েই বা উপায় কী বল। আমি একটা বেখাপ্পা ছেলে। চালচুলো নেই। তুমি এক প্রকার বেঁচেই গেলে। আমার সঙ্গে বিয়ে হলে কী পেতে?
– কী দারুণ সংসার হত বলো তো। তোমার ফতুয়ার বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে দিতাম।
– এখন তোমার সায়েব বরের কোটের বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে দিও না হয়।
– ধুস। তুমি আর আমি মিলে ছাদে মাদুর পেতে বসে কত গল্প করতাম সন্ধ্যেবেলা। এক সাথে গাইতাম; অতুলপ্রসাদী। আর সাথে থাকতো এক বাটি ফুলুরি।
– তোমার হবু বরের সঙ্গে তুমি রুফ টপ পশ্চিমা রেস্তোরাঁয় বসে দাঁত ভাঙা নামের মন ভরানো সব খাওয়ার খাবে। ডিস্কো নেচে রাত ভর হুল্লোড় করবে।
– তোমার সাথে বিয়ে হলে আমরা দু’জনে পাড়ার ক্লাবের ফুটবল ম্যাচ দেখতে যেতাম। ফেরার পথে ফুচকা খেয়ে পেট ভরিয়ে বাড়ি ঢুকতাম।
– আর এখন তোমার হাই ফাই বর তোমায় টি টুয়েন্টি ম্যাচ দেখাতে নিয়ে যাবে। ফেরার পথে তোমাদের থাকবে কে-এফ-সি বা পিৎজা হাট। কত মজা বল দেখি?
– তুমি একটা যাতা। আমার হবু বর পারবে আমার সাথে দেশপ্রিয় পার্কের সস্তা হোটেল কেবিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারতে?
– আরে সে তোমায় নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে। গাড়ির অডিও প্লেয়ারে সফ্ট বিট্স আর চোখে সানগ্লাস। তার জেল্লাই আলাদা।
– তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে যে আমাদের বিয়ে হলে গরমের দুপুরে তুমি আমায় আম পোড়ার শরবৎ করে দেবে। আর লালবাজার থেকে স্পেশাল চায়ের পাতা এনে আমায় লেবু চা করে খাওয়াবে। আমার এই বর আমায় কাঁচকলা দেবে।
– আরে না গো! কাঁচকলা কেন দেবে? তোমার হাজব্যান্ড তোমায় গরমের দুপুরে ক্লাবে চিল্ড বিয়ার খাওয়াবে। সন্ধ্যের অবসরে স্কচ। সেলিব্রেশনে শ্যাম্পেন।
– তুমি না থাকলে আমায় শঙ্খ ঘোষ কে পড়ে শোনাবে?
– সে তোমার জন্যে গীটার বাজিয়ে হদ্দ হবে।
– তোমার সাথে ভোরে উঠে হাঁটতে বেরতাম। হাঁটতে হাঁটতে কত গল্প। ফেরার পথে সবজি বাজার করে থলে ভরে বাড়ি ফিরতাম।
– এ সব আদ্যিকালের ব্যাপার। তোমার নতুন বরের সঙ্গে তুমি নাইট আউট চিনবে। নিপাট রাত জাগা। আড্ডা হুল্লোড়ে রাত জাগা।
– দু’জনে মিলে একসাথে দুই বাবা আর দুই মাকে মাঝে মাঝে প্রণাম করতাম। দারুণ মানাত আমাদের। একদম ট্যাঁপা আর টেঁপি।
– নতুন বরের সাথে মিলে বাপ-মা’দের জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খাবে। মিস্টার অ্যান্ড মিসেস। সে স্নেহের পরিসর কম কিসে? তুমি কিন্তু তোমার বর কে নিয়ে বড্ড বেশি নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছ।
– তুমিই বা কি, একটা অন্য ছেলে তোমার প্রেমিকার হাত ধরে টেনে নিয়ে ড্যাং ড্যাং করে চলে যেতে বসছে, আর তোমার যেন কিছুতেই কিছু এসে যাচ্ছে না।
– আমার ফিউচার নেই গো। তোমায় বেঁধে রেখে কি লাভ? আমার সাথে লেপটে থাকলে শেষে তুমিই মরবে। আর তাছাড়া আমি জানি, তোমার মনের কোন এক কোণে চেপেচুপে আমার স্মৃতিটুকু থেকে যাবেই। তুমি জাত নস্টালজিক। আচ্ছা, তোমার হবু বরের নামটা তো বললে না।
– ওর নাম ফার্স্ট জ্যানুয়ারী। কেমন কাঠ-খোট্টা বল।
– কাঠ-খোট্টা কেন হতে যাবে? বেশ নাম তো। ফার্স্ট জ্যানুয়ারী। আমার মত থপথপে নাম নয়। তুমিই বলো, এই যে আমার নাম, শ্রী পয়লা বৈশাখ। এটা কোন নাম হল?
– তুমি আমায় বিয়ে করবে না তো করবে না। কিন্তু ফার্স্ট জানুয়ারি নিয়ে ছিঁচ কান্না জুড়ে ডিফেন্ড করা বন্ধ কর।
– হে হে হে।
– অমন বোকা হাসিতে ভুলছি না।শোন, তোমার একটা জিনিষ আমার কাছে জমা করে রেখে যেতে হবেই। নয়তো ছাড়ছি না তোমায়।
– কী জিনিষ গো?
– হাল খাতা। তোমার হালখাতাটা আমায় দিয়ে যেও প্লীজ।
– হালখাতার যে আজকাল কোন দাম নেই গো।
– স্মৃতির দাম নেই বুঝি? প্লীজ পয়লা, জানুয়ারির হাতে আমায় ঠেলে দিচ্ছ দাও, আমি কিছু বলছি না। কিন্তু তোমার হালখাতার স্মৃতিটুকু অন্তত আমাকে দিও। দেবে না ?
– বেশ। দেব তোমায়। হালখাতার স্মৃতিটুকু। ইয়ে, ভালো থেকো। কেমন?
3 comments:
Poila boishakh sotti e ajkaal ekla boishakh hoye gechho...khub Sundor likhechhen
poila boishakh ekla boishakh hoye galeu halkhata kintu bonde ar jhurir prem take sajatne rekhe diyeche packet er moddhe @Debalina Biswas. khub bhalo lekhata
বড্ড ভাল লিখেছেন | বছরের শেষ দিনে অনেকগুলো লেভেলে মনখারাপ হয়ে গেল |
Post a Comment