Thursday, April 23, 2015

নেশা





-   প্রযুক্তিই আমাদের খেয়ে ফেললে গিন্নী।

-   বুঝি গো, ছেলেটাকে নিয়ে তুমি বড় বিরক্ত হয়ে পড়ছ আজকাল।

-   বিরক্ত হব না? অমন ঠ্যাঁটা ছেলে আমাদের যুগে পয়দা হলে বাপ মা চাবকে সোজা করে নিতে। তবে আজকালকার ব্যাপারস্যাপার আলাদা। বাপ হয়েছি কিন্তু মেজাজ দেখানোর কোন উপায় নেই। ধুস।

-   এত রাগছো কেন গো!

-   রাগবো না? গোটা দিন ওই গা পিত্তি জালিয়ে দেওয়া পুঁচকে বোকা বাক্স মাফিক ব্যাপারটায় মুখ গুঁজে পরে আছে। খাওয়ার সময়, শোয়ার সময়, সর্বক্ষণ মুখের সামনে ওই একই জিনিষ খুঁড়োর কলের মত ঝুলছে। বাপ মায়ের সঙ্গে দু’টো কথা বলবে সে সময় পর্যন্ত নেই। এ বয়েসের ছেলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিলে দুদণ্ড হই হই করবে;  ব্যাটার সে সুযোগ পর্যন্ত নেই। অসামাজিক হয়ে পড়েছে ব্যাটাচ্ছেলে।

-   আমারও কি চিন্তা হয় না। ছেলের যেন আমাদের সাথে কোন সম্পর্কই নেই গো। গোটা দিন বসে আছে মুখ গুঁজে। তবে এ যে যুগের হাওয়া। ওর বয়েসি সব ছেলেমেয়ের কাছে ওই একই জিনিষ। বাড়ন্ত বয়েসের ছেলে, খেলাধুলোর দিকে ঝোঁক নেই। শুধু ওই এক নেশা। কিছু বললে বলে, আধুনিক যুগে নাকি শেখার শ্রেষ্ঠ উপায় ওই পোড়া জিনিষটাই।

-   আমাদের সময় আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে শিখেছি, মানুষের কাছ থেকে শিখেছি। শুধু চোখের দেখা নয়, কানে শুনেছি, ছুঁয়ে দেখেছি দুনিয়াটা। সমাজের একজন হয়ে সমস্ত কিছু চিনেছি, জেনেছি, বুঝেছি। প্রযুক্তির হাতে পেষাই হয়ে সে সব প্রাকৃতিক আর সামাজিক যোগাযোগগুলো এমন ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে তা কোনদিন ভাবিনি গিন্নী। মানুষ আজকাল এই পুঁচকে নিষ্প্রাণ বোকা ডিবেগুলো উল্টে পাল্টে শিক্ষা পেতে চায়, আনন্দ পেতে চায়। সে শিক্ষার মূল্যই বা কোথায়, সে আনন্দের গভীরতাই বা কোথায়! তুমিই বলো গিন্নী।

-   কী আর করবে বলো, যুগের হাওয়া। আমাদেরই মানিয়ে নিতে হবে নিজেদের।

-   ধুত্তোর ছাই। প্রযুক্তিই সর্বনাশ করবে আমাদের দেখো।

-   কী নাম যেন সেই মুখপোড়ার? সেই ঘুঁটে না গুটে কী যেন...যে এই পোড়ামুখো আবিষ্কার করলে।

-   সত্যিই। গুটেনবার্গ যে কী সর্বনাশই করলে ছাপাখানা তৈরি করে আর এই বইয়ের উৎপাত শুরু করে। এই ক’বছর আগে পর্যন্ত কটা লোক পড়তে পারত? পুঁথি-টুথি যোগাড় করা চাট্টি খানি কথা ছিল না। এখন দেখ অলিতে গলিতে বইয়ের দোকান। সস্তা যত বই ঘুরছে রাম শাম যদু মদু সক্কলের হাতে। গণিতের বই, রান্নার বই, গল্পের বই। গা পিত্তি জ্বলে যায় গো। আমাদের ছেলেটাও বইয়ের পোকা হয়ে পড়লো শেষে। সমস্ত ছেলেপিলে ছোকরা বইয়ের খপ্পরে পরে বখে গেল গো। খোকাটাকে এই পোড়া বইয়ের নেশাই ডুবিয়ে ছাড়বে।  

      

*ইয়ে, বই দিবসের শুভেচ্ছা*

4 comments:

Beas said...

Kaan eto kore haslam.

Mohua Roy said...

Boi dibas er suvechha boi ki. unique perspective:) enjoyed.

Debopriya Priti Roy said...

Eta level!😁😁😁😁

Atanu Dey said...

তুখোড় হয়েছে লেখাটা।