আসল রুপো কি খনি থেকে উঠে আসে? উঠে আসে পদ্মা আর গঙ্গার বুক চিরে; ইলিশের গায়ে ঝিক্মিক্ করতে করতে। সাঁঝের গড়িয়াহাটের মাছের বাজারের বাল্বের আলোর হলুদ মখমল সেই রুপোর তবকে মিশে গলগলে সোনা তৈরি হয়। এই অ্যালকেমির সূত্র শুধু বাঙালির মানিব্যাগের রক্তে লেখা থাকে। আদত পদ্মার মায়াময় স্বাদ পেতে হলে অন্তত কিলো প্রতি কড়কড়ে দু’টো পাঁচশো আর একটা একশো টাকার নোটকে ভাসিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এই হ্যাশট্যাগের যুগে কেষ্টর জন্য কষ্ট করার চেয়ে ইলিশের পিছনে মনোনিবেশ করা ঢের ভালো।
আড়াআড়ি একে অপরের বুকে শুয়ে থরে থরে রুপোমাখা বাজার মোহিনীর দল। বুড়ো আঙুল আর তর্জনী দিয়ে মেপে নেওয়া পেটির পরিসর, সামান্য টিপে পদ্মা পরবর্তী বরফ বন্দী জীবনের দৈর্ঘ্য বুঝে নেওয়া; ইলিশবিলাসী হওয়া সহজ নয়। ইলিশ চেনার আর্ট হারিয়ে যাচ্ছে। ইলিশ চেনার নিরিখে দাদু ছিলেন শরদিন্দুর ব্যোমকেশ, বাবাকে বাসু চ্যাটার্জির ব্যোমকেশ বলা যায়। আমি বোধ হয় দিবাকর ব্যানার্জির বিয়োমকেশ। দাম বুঝে কোয়ালিটি মেপে নিতে হয়। বড় দুঃখ। বাজার থেকে দ্রাবিড় ভেবে আনি, আর এদিকে বাড়ি এসে ইলিশ ব্যাটা সাদাগোপান রমেশ হয়ে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে অকারণ খোঁচা দিয়ে চলে।
কিন্তু খাপে খাপ ইলিশ যদি আসে। যদি সে আসে। সাদা ধবধবে টুকরো। পেটির ত্রিকোণ বুক আলো করে জমাট বাঁধা ডিম। অঙ্কের মাস্টার শুভঙ্কর স্যার বলতেন ইলিশ পেটি ট্রায়াঙ্গুলার নয়, ট্রায়াঙ্গল হল ইলিশপেটিয়ুলার। সেই রূপকথার মত ইলিশের ডিম সহ পেটি ভাজা; ষ্টীলের থালার এক কোণে। থালার ঠিক মাঝখানে দুই হাতা ভাত। সেই ভাতের টিলার মাথায়; শিবের মাথায় ভক্তি ভরে জল ঢালার মত; ঢেলে দেওয়া ইলিশ ভাজা গরম তেল। শিবের মাথায় প্রণাম করে ধুতরো ফুল দেওয়ার মত করে ভাতের টিলার মাথায় রেখে দেওয়া একটা লম্বা সরু কচি সবুজ কাঁচা লংকা। ভক্তি। পুজো। সাধনা। এটাই। সেই লংকা নুনের সাথে ভাতে ডলে, ভাতকে তেল দিয়ে আদর করে মেখে নেওয়া। একটু ইলিশ, একটু ডিম ভাতের দলার সাথে মুখে উঠে আসবে।
বাইরে তখন যেন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামে। রেডিও থেকে তখন যেন ভেসে আসে “ওরে, নীল যমুনার জল, বল রে মোরে বল, কোথায় ঘনশ্যাম”। জিভের রাধা তখন ইলিশি কৃষ্ণে মাখো মাখো।
1 comment:
Offf. Ei bhor dupure ekhon ki kore ar boring pasta salad khawa jay he?
Post a Comment